রোমের ব্যস্ত রাত নামলেই ট্যাক্সিতে চেপে অলিগলি ঘুরে বেড়ান এক আশি ছুঁইছুঁই মানুষ। হাতে ভারী ক্যামেরা, চোখে অবিরাম খোঁজ। তিনি রিনো বারিলারি। ইতালিতে যাঁকে সবাই চেনে পাপারাজ্জিদের রাজা নামে। বয়স আশি হলেও খ্যাতিমানদের খোঁজে তাঁর রাতজাগা থামে না।
রাতের শহরে তারকাদের খোঁজ
মধ্যরাতের কাছাকাছি সময়। রেস্তোরাঁর সামনে ধূমপায়ীদের ভিড় দেখে ট্যাক্সিচালককে ধীরে চলতে বলেন বারিলারি। মুহূর্তে ক্যামেরা তোলে আবার নামিয়ে ফেলেন। তারকা নেই বুঝে হতাশ কণ্ঠে ব্যর্থতার কথা বলেন। এই খোঁজ শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। সন্ধ্যা নামার পর থেকেই রোমের রেস্তোরাঁ, ফুলওয়ালা, ওয়েটার, গাড়িচালকদের জিজ্ঞাসাবাদ। তাঁর ভাষায়, খবরদাতা ছাড়া এই কাজ অসম্ভব। তাঁর এমন প্রায় পাঁচশ গোপন সূত্র আছে।
অপেক্ষা আর ধৈর্যের পেশা
একজন তারকার পেছনে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়। রোমে কাজ করতে আসা এক বিশ্বখ্যাত সংগীতশিল্পীর পেছনে তিনি পুরো এক সপ্তাহ কাটিয়েছেন। কখনো বিলাসবহুল রেস্তোরাঁয় বসে খবরের অপেক্ষা, কখনো হঠাৎ ফোন এলেই আধখাওয়া খাবার ফেলে দৌড়। রোমের একটি জনপ্রিয় রেস্তোরাঁর দেয়ালে ঝুলছে তাঁর তোলা ছবি, যেখানে দেখা যায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে বিশ্বখ্যাত শিল্পীদের মুহূর্ত।
শুরুটা হয়েছিল ভিন্ন পথে
দক্ষিণ ইতালির এক ছোট শহর থেকে কিশোর বয়সে রোমে আসেন বারিলারি। তখন রোম ছিল সিনেমার শহর। শুরুতে তাঁর হাতে ক্যামেরাই ছিল না। পর্যটকদের খুঁজে দিতেন অন্য আলোকচিত্রীদের জন্য। এরপর সিনেমার জগতে পাপারাজ্জি শব্দটির জন্ম। সেই সময় থেকেই তিনি বুঝে যান, এটাই তাঁর জায়গা।

ছদ্মবেশ আর ঝুঁকির গল্প
তারকাদের কাছে পৌঁছাতে কখনো যাজক, কখনো পুলিশ সেজেছেন। টাইয়ের ভেতর ক্যামেরা লুকিয়েছেন। ভেসপায় চড়ে ধাওয়া করেছেন অভিনেতাদের। এই পেশার ঝুঁকি ভয়াবহ। তাঁর হিসাব অনুযায়ী, একশ ষাটবারের বেশি জরুরি বিভাগে যেতে হয়েছে। এগারোটি পাঁজর ভেঙেছে। একবার ছুরিকাঘাতও পেয়েছেন। ক্যামেরা ভাঙা হয়েছে ছিয়াত্তর বার। এক অভিনেত্রী আইসক্রিম ছুড়ে মেরেছিলেন তাঁর দিকে। কোনো ঘটনায় ছবি বাঁচাতে ফিল্ম লুকিয়েছিলেন নিজের পোশাকে।
আইনি লড়াই আর বিতর্ক
পাপারাজ্জি পেশা বরাবরই বিতর্কিত। গোপনীয়তা আর জনস্বার্থের প্রশ্ন ওঠে বারবার। সাম্প্রতিক সময়ে এক ফরাসি অভিনেতার সঙ্গে সংঘর্ষে আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে বিষয়টি। বারিলারির যুক্তি, জনসমক্ষে থাকা তারকাদের ছবি তোলাই তাঁর কাজ। তাঁর কথায়, শহরের কেন্দ্রস্থলে এলে প্রচারের প্রস্তুতিই নিতে হয়।
সংঘাতের মধ্যেও বদলে যাওয়া
যখন রোমের সিনেমার আলো ম্লান হতে থাকে, তখন তিনি সন্ত্রাসবাদ, অপহরণ আর সংঘবদ্ধ অপরাধের ঘটনাও ক্যামেরায় ধরেন। পুলিশের সংকেত শুনে সবার আগে ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন। সংবাদপত্রে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন।
ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা
আজকের দিনে মোবাইল ফোন আর আধুনিক প্রযুক্তি তাঁর প্রতিযোগী। তারকারা লেজার আলো ব্যবহার করে ক্যামেরা অকার্যকর করছেন। তবু তাঁর নীতি বদলায়নি। আগে ছবি, পরে তর্ক। তাঁর ভাষায়, এই পেশায় যুদ্ধই বাস্তবতা।
জীবনের হিসাব
সব মিলিয়ে ভালো-মন্দ রাত আসে যায়। এক রাত খালি হাতে ফিরলেও আফসোস নেই। হাসতে হাসতে বলেন, টাকাপয়সা না থাকলেও তিনি বিলাসীর মতো জীবন কাটিয়েছেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















