নিউইয়র্কের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কিংবা সিলিকন ভ্যালির কোনো উদ্যোক্তার রান্নাঘরের ফ্রিজে আজ আর শুধু খাবার নয়, ঠাঁই পাচ্ছে ইনজেকশন ও ছোট কাচের শিশি। তাতে লেখা থাকে রহস্যময় কিছু নাম, যেগুলোকে বলা হচ্ছে পেপটাইড। দ্রুত সুস্থতা, ত্বক উজ্জ্বল করা, মনোযোগ বাড়ানো কিংবা শরীর সারানোর আশায় এসব শিশি ঘরে বসেই মিশিয়ে শরীরে প্রবেশ করাচ্ছেন অনেকে। অথচ বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই বললেই চলে যে এসব শিশিতে যা লেখা থাকে, তা আদৌ ভেতরে আছে কিংবা এগুলো সত্যিই কাজ করে।
পেপটাইড কী এবং কেন এত আগ্রহ
পেপটাইড মূলত অ্যামিনো অ্যাসিডের ছোট শৃঙ্খল, যা শরীর নিজেই তৈরি করে। অনলাইনে বিক্রি হওয়া এসব পেপটাইড সাধারণত গবেষণার জন্য ব্যবহারের কথা বলে বাজারে আসে। ঘরে বসে জীবাণুমুক্ত পানি মিশিয়ে ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের স্বীকৃত কোনো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়নি। বিপরীতে, করোনা টিকা তৈরিতে ব্যবহৃত এমআরএনএ প্রযুক্তি দীর্ঘ পরীক্ষা, নিয়ন্ত্রক পর্যালোচনা ও বৈশ্বিক নজরদারির ভেতর দিয়ে গিয়েছিল এবং অসংখ্য জীবন বাঁচিয়েছে।
![]()
বিশ্বাসের জায়গায় বড় উলটাপালটা
আধুনিক সংস্কৃতিতে অদ্ভুত এক বিশ্বাসের অদলবদল দেখা যাচ্ছে। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত টিকাকে অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখছেন, আর পরীক্ষাহীন পেপটাইড ইনজেকশনকে ভাবছেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও সুস্থতার প্রতীক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অভিজ্ঞতা, কথিত সাফল্যের গল্প আর নিজে ভালো লাগার অনুভূতিই এখানে বড় প্রমাণ হয়ে উঠছে।
সিলিকন ভ্যালি থেকে ফ্যাশন হয়ে ওঠা ঝুঁকি
কিছু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে পেপটাইড ব্যবহার এখন কর্মীদের জন্য বাড়তি সুবিধা হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। অনলাইন গোষ্ঠীতে বিভিন্ন পেপটাইড একসঙ্গে ব্যবহারের আলোচনা চলছে, ঠিক যেন শরীরচর্চার পরিকল্পনা। সরবরাহকারীর পরিচয় অনেক সময় হোয়াটসঅ্যাপের একটি নম্বরেই সীমাবদ্ধ। বাজার কার্যত নিয়ন্ত্রণহীন, আর মান যাচাইয়ের কাগজপত্র ঘুরছে কেবল স্ক্রিনশট আকারে।

স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং সতর্কতা
যুক্তরাষ্ট্রের ডোপিংবিরোধী সংস্থা ইতিমধ্যে কয়েকটি জনপ্রিয় পেপটাইড নিষিদ্ধ করেছে, হৃদ্যন্ত্রের ঝুঁকির কথা জানিয়ে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, একই পেপটাইডের বিশুদ্ধতা কখনো খুব কম, কখনো প্রায় সম্পূর্ণ, কোনো নির্ভরযোগ্য মানদণ্ড নেই। খাদ্য সম্পূরকের ভুল লেবেল কেবল অর্থের ক্ষতি করে, কিন্তু ইনজেকশনের ক্ষেত্রে ফল হতে পারে মারাত্মক।
ভারতের জন্য সতর্ক বার্তা
পশ্চিমের জীবনধারা ও সুস্থতার ধারণা অনুসরণ করতে গিয়ে এই ধরনের বেপরোয়া প্রবণতা গ্রহণ করা ভারতের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে অগ্রগতি মানেই পরীক্ষাহীন ঝুঁকি নয়। কিছু পরীক্ষা দূর থেকেই দেখা ভালো।

সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















