চীনের বেসরকারি মহাকাশ প্রযুক্তি খাতকে দ্রুত পুঁজি বাজারে আনতে বড় সিদ্ধান্ত নিল বেইজিং। পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট তৈরি করা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আইপিও নিয়ম শিথিল করেছে সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ। নতুন ব্যবস্থায় লাভ বা ন্যূনতম আয়ের শর্ত ছাড়াই এসব প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তিগত সক্ষমতার ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত হতে পারবে।
নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রযুক্তিনির্ভর স্টার মার্কেটে পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট উন্নয়নকারী চীনা কোম্পানিগুলোর জন্য একটি দ্রুতগতির তালিকাভুক্তি পথ খুলে দেওয়া হচ্ছে। এই পথে কোম্পানিগুলোকে আর প্রচলিত লাভজনকতা বা রাজস্বের কঠোর মানদণ্ড পূরণ করতে হবে না। বরং তাদের দেখাতে হবে যে পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্তত একবার সফলভাবে কক্ষপথে উৎক্ষেপণ সম্পন্ন করা হয়েছে।
মহাকাশ সক্ষমতায় ব্যবধান ঘোচানোর চেষ্টা
চীন দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট প্রযুক্তিতে পিছিয়ে আছে। বর্তমানে রকেটের প্রথম ধাপ উৎক্ষেপণের পর ফিরে এনে পুনরায় ব্যবহারের সক্ষমতায় যুক্তরাষ্ট্র কার্যত শীর্ষে। এই ব্যবধান কমাতে নতুন নীতিকে কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নতুন নির্দেশনাগুলো জুনে প্রকাশিত আগের নিয়মের সম্প্রসারণ, যেখানে মুনাফার আগে থাকা উদ্ভাবনী কোম্পানিগুলোর জন্য স্টার মার্কেটে প্রবেশ সহজ করা হয়েছিল। এবার সেই সুবিধা আরও স্পষ্টভাবে মহাকাশ খাতে প্রয়োগ করা হলো।

স্পেসএক্সের একচেটিয়াকে চ্যালেঞ্জ
পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট প্রযুক্তিতে বর্তমানে প্রায় একচেটিয়া অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেসএক্স। তাদের ফ্যালকন নাইন রকেটই নিয়মিতভাবে উৎক্ষেপণ ও পুনরুদ্ধার করা একমাত্র মডেল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই বাস্তবতা চীনের জন্য প্রযুক্তিগত ও নিরাপত্তাগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
ডিসেম্বরে চীনের শীর্ষ বেসরকারি রকেট কোম্পানি ল্যান্ডস্পেস ঝুকুয়ে থ্রি মডেলের মাধ্যমে দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট পরীক্ষা চালায়। যদিও সেই উৎক্ষেপণে রকেটের বুস্টার উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি, তবু এটিকে বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পুঁজির প্রয়োজন আর ভবিষ্যৎ লক্ষ্য
ল্যান্ডস্পেস জানিয়েছে, তারা দুই হাজার ছাব্বিশ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঝুকুয়ে থ্রি রকেটের দ্বিতীয় উৎক্ষেপণে সফলভাবে বুস্টার উদ্ধার দেখাতে চায়। তবে রকেট উন্নয়ন অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে চীনের পুঁজি বাজারে প্রবেশ তাদের জন্য জরুরি।

সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের নিয়মে স্পষ্ট করে বলা হয়নি যে বুস্টার উদ্ধার অবশ্যই সফল হতে হবে। শর্ত হিসেবে শুধু পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে কক্ষপথে স্যাটেলাইট পাঠানোর সক্ষমতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা ল্যান্ডস্পেস ইতোমধ্যেই অর্জন করেছে।
রাষ্ট্রীয় কৌশলের সঙ্গে বাণিজ্যিক মহাকাশ
নতুন নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, যেসব কোম্পানি জাতীয় মিশনে অংশ নেবে বা বড় রাষ্ট্রনির্দেশিত মহাকাশ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, তারা অগ্রাধিকার সহায়তা পাবে। এতে বাণিজ্যিক উৎক্ষেপণ কার্যক্রমের সঙ্গে চীনের সামগ্রিক কৌশলগত লক্ষ্যগুলোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্পষ্ট হয়েছে।
চীন বহুবার নিম্ন কক্ষপথে স্যাটেলাইট স্থাপনে স্পেসএক্সের প্রভাবকে জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকি হিসেবে বর্ণনা করেছে। সে কারণে আগামী দশকগুলোতে হাজার হাজার স্যাটেলাইট নিয়ে নিজস্ব কনস্টেলেশন গড়ে তোলার পরিকল্পনা দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছে বেইজিং।
#চীন #মহাকাশপ্রযুক্তি #পুনর্ব্যবহারযোগ্যরকেট #আইপিওনীতি #স্টারমার্কেট #ল্যান্ডস্পেস #স্পেসএক্স #স্যাটেলাইট #বেইজিং
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















