দেশজুড়ে সন্ত্রাস ও সংগঠিত অপরাধ মোকাবিলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নতুন উচ্চতায় নিতে অপ্রবেশ্য সন্ত্রাসবিরোধী নিরাপত্তা বলয় গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রাজধানী নয়াদিল্লিতে আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সম্মেলন দুই হাজার পঁচিশ-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি জানান, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত রাখতে দেশব্যাপী নিরাপত্তা কাঠামো একযোগে শক্তিশালী করতে হবে।
সম্মেলনের মঞ্চ থেকে অমিত শাহ সংগঠিত অপরাধের বিরুদ্ধে সর্বমুখী আঘাতের পরিকল্পনার কথাও ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, অপরাধ ও সন্ত্রাসের যোগসূত্র ভেঙে দিতে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সমন্বিত ও একক কৌশল বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে।
সন্ত্রাসবিরোধী কাঠামো ঢেলে সাজানোর বার্তা
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রতিটি রাজ্যে অভিন্ন সন্ত্রাসবিরোধী বাহিনী কাঠামো গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। রাজ্যগুলোর পুলিশ মহাপরিচালকদের দ্রুত এই অভিন্ন কাঠামো বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন তিনি। তাঁর মতে, একই ধরনের অপারেশনাল কাঠামো ছাড়া সঠিক হুমকি মূল্যায়ন সম্ভব নয়।
দিল্লির বিস্ফোরণ মামলার তদন্তের প্রশংসা
দিল্লির বিস্ফোরণ সংক্রান্ত মামলায় জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তদন্তের ভূয়সী প্রশংসা করেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, এটি ছিল সাধারণ পুলিশি কাজ নয়, বরং নিখুঁত ও জল চূড়ান্ত তদন্তের উদাহরণ। সামান্য কিছু পোস্টারের সূত্র ধরে সতর্ক এক কর্মকর্তার তৎপরতায় তিন টন বিস্ফোরক উদ্ধার হওয়া দেশকে বড় বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তথ্য আদান প্রদানে নতুন নীতি
নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তথ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে জানা দরকার নীতি এর পরিবর্তে শেয়ার করার দায়িত্ব নীতি অনুসরণের ওপর জোর দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আলাদা আলাদা জায়গায় প্রযুক্তি তৈরি ও তথ্য সংরক্ষণ করলে তা গুলি বিহীন অস্ত্রের মতোই অকার্যকর হয়ে পড়ে।
পহেলগাম হামলার তদন্তে আন্তর্জাতিক বার্তা
পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার তদন্ত প্রসঙ্গে অমিত শাহ জানান, এই তদন্তের ফলাফল বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংস্থা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। তিনি জানান, এই অভিযানে প্রথমবারের মতো দ্বিমুখী কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে। অপারেশন সিঁদুর-এর মাধ্যমে পরিকল্পনাকারীদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে ।
নতুন ডিজিটাল উদ্যোগ
সম্মেলনের দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল উদ্যোগ উদ্বোধন করেন। এর মধ্যে রয়েছে হালনাগাদ জাতীয় তদন্ত সংস্থার অপরাধ নির্দেশিকা, সংগঠিত অপরাধ নেটওয়ার্ক তথ্যভাণ্ডার এবং হারানো ও লুট হওয়া অস্ত্রের পূর্ণাঙ্গ তথ্যভাণ্ডার।

অপরাধ ও সন্ত্রাসের অদৃশ্য যোগসূত্র
অমিত শাহ বলেন, সংগঠিত অপরাধ ও সন্ত্রাস একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। অনেক সময় চাঁদাবাজি ও অপরাধচক্রের নেতৃত্ব বিদেশে চলে গেলে সেই নেটওয়ার্ক সন্ত্রাসের সহায়কে পরিণত হয়। এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই সংগঠিত অপরাধের বিরুদ্ধে সর্বমুখী আঘাতের কৌশল নেওয়া হয়েছে।
পলাতকদের বিচারে কঠোর অবস্থান
দেশের বাইরে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের বিচারের মুখোমুখি করতে অনুপস্থিতিতে বিচার ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন তিনি। তাঁর মতে, আইনি চাপ বাড়িয়ে পলাতকদের দেশে ফিরতে বাধ্য করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ
ভারতের অর্থনীতি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অবস্থানে পৌঁছানোয় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জও বাড়বে বলে সতর্ক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী অবকাঠামো ভেঙে দিতে নির্মম ও নিরবচ্ছিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। আজকের কাজই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তা নির্ধারণ করবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















