চীনের সামরিক বিমান রপ্তানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আস্থাভাজন অংশীদার হিসেবে পাকিস্তানের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে জমা দেওয়া পেন্টাগনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আকাশযুদ্ধ সক্ষমতায় চীনের সবচেয়ে বড় গ্রাহক এখন পাকিস্তান। এতে বৈশ্বিক অস্ত্রবাজারে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের পাশাপাশি ইসলামাবাদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত সম্পর্কের চিত্রও উঠে এসেছে।
পেন্টাগনের মূল্যায়নে চীনের অস্ত্রবাজারে অবস্থান
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চীন বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে অবস্থান ধরে রেখেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে চীন তার অস্ত্র রপ্তানি পরিচালনা করছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত পররাষ্ট্র নীতির অংশ হিসেবেই এই রপ্তানি কার্যক্রম বিস্তৃত হচ্ছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে তুলনামূলক কম দাম ও নমনীয় শর্তের কারণে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানের জন্য বিশেষ যুদ্ধবিমান সরবরাহ
চীন বর্তমানে রপ্তানির জন্য তিন ধরনের যুদ্ধবিমান প্রস্তাব করছে। এর মধ্যে রয়েছে পঞ্চম প্রজন্মের এফসি একত্রিশ, চতুর্থ প্রজন্মের জে দশ সি এবং যৌথভাবে তৈরি জেএফ সতেরো থান্ডার। প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, জে দশ সি যুদ্ধবিমান একমাত্র পাকিস্তানকে সরবরাহ করেছে চীন। দুই দফা চুক্তিতে মোট ছত্রিশটি বিমানের অর্ডারের বিপরীতে ইতোমধ্যে কুড়ি টি বিমান পাকিস্তান বিমান বাহিনীর হাতে পৌঁছেছে।

যৌথ উন্নয়নের সফল উদাহরণ জেএফ সতেরো
চীন ও পাকিস্তানের যৌথ উদ্যোগে তৈরি জেএফ সতেরো কর্মসূচিকে উন্নয়নশীল দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সফল দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই যুদ্ধবিমান ইতোমধ্যে আজারবাইজান, মিয়ানমার ও নাইজেরিয়ার বিমান বাহিনীতে ব্যবহৃত হচ্ছে। পাকিস্তানের জন্য এটি শুধু আকাশ প্রতিরক্ষার মূল ভরসা নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য হিসেবে বিবেচিত।
ড্রোন ও নৌ প্রতিরক্ষায় বিস্তৃত সহযোগিতা
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মানববিহীন আকাশযান ক্ষেত্রেও পাকিস্তান চীনের বড় গ্রাহক। আঘাত হানতে সক্ষম উন্নত ড্রোন সরবরাহের মাধ্যমে চীন বৈশ্বিক ড্রোন বাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করছে। একই সঙ্গে নৌ প্রতিরক্ষায়ও পাকিস্তান দীর্ঘদিনের অংশীদার। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একাধিক ফ্রিগেট সরবরাহের পাশাপাশি ভবিষ্যতে এই সহযোগিতা আরও বাড়বে বলে প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
কৌশলগত সম্পর্কের গভীরতা
পেন্টাগনের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক কেবল অস্ত্র কেনাবেচায় সীমাবদ্ধ নয়। যৌথ গবেষণা, উৎপাদন এবং দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে এই সম্পর্ক পরিণত অংশীদারিত্বে রূপ নিয়েছে, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















