দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর জাপান আবারও পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। ফুকুশিমা দুর্ঘটনার স্মৃতি এখনো টাটকা থাকা সত্ত্বেও সাগরতীরবর্তী কাশিওয়াজাকি–কারিওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছয় নম্বর রিঅ্যাক্টর পুনরায় চালুর প্রস্তুতি নিয়েছে টোকিও। এই রিঅ্যাক্টর চালু হলে এটি হবে বিপর্যয়ের পর জাপানে পুনরায় চালু হওয়া সবচেয়ে বড় পারমাণবিক ইউনিট।
ফুকুশিমার ছায়া পেরিয়ে নতুন যাত্রা
দুই হাজার এগারো সালে ভূমিকম্প ও সুনামিতে ফুকুশিমা দাইইচি বিদ্যুৎকেন্দ্রে গলন দুর্ঘটনার পর জাপানের সব পারমাণবিক কেন্দ্র কার্যত থমকে গিয়েছিল। সেই ঘটনার পর জনমনে পারমাণবিক শক্তি নিয়ে ভয় ও অনিশ্চয়তা গভীর হয়। কাশিওয়াজাকি–কারিওয়ার রিঅ্যাক্টরটি একই ধরনের নকশার হওয়ায় পুনরায় চালুর সিদ্ধান্তকে ঘিরে আবেগ ও বিতর্ক দুটোই তীব্র।
নিরাপত্তায় কঠোর প্রস্তুতি
সরকার ও পরিচালনাকারী সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তা মান উন্নয়নে কাজ করেছে। সুনামি ঠেকাতে নির্মাণ করা হয়েছে পনেরো মিটার উঁচু কংক্রিট প্রাচীর। ভূমিকম্প মোকাবিলায় শক্ত করা হয়েছে দেয়াল, পাইপ ও কাঠামো। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হলেও টানা সাত দিন রিঅ্যাক্টর ঠান্ডা রাখার মতো পানির ভাণ্ডার রাখা হয়েছে। নতুন ব্যাকআপ বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও যুক্ত করা হয়েছে।
জ্বালানি নীতিতে সরকারের লক্ষ্য
জাপান সরকার দুই হাজার চল্লিশ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পারমাণবিক শক্তির অংশ বর্তমানের প্রায় নয় শতাংশ থেকে বাড়িয়ে বিশ শতাংশে নিতে চায়। একই সঙ্গে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানো এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের বাড়তি বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোই এই নীতির মূল উদ্দেশ্য। তবে সরকার স্পষ্ট করেছে, এই লক্ষ্য বাধ্যতামূলক নয় এবং ভবিষ্যতে উন্নত প্রযুক্তির নতুন রিঅ্যাক্টর নির্মাণের দিকেও নজর রয়েছে।
স্থানীয় মানুষের দ্বিধা ও উদ্বেগ
নিয়িগাতা অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে মতভেদ স্পষ্ট। জরিপে দেখা গেছে, অর্ধেক মানুষ শর্তসাপেক্ষে রিঅ্যাক্টর চালুতে রাজি হলেও প্রায় সমানসংখ্যক মানুষ যেকোনো পরিস্থিতিতেই বিরোধিতা করছেন। অনেকের মতে, জরুরি সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ও নিরাপত্তা তথ্য এখনো যথেষ্ট পরিষ্কার নয়। আবার কেউ কেউ ক্ষুব্ধ, কারণ উৎপাদিত বিদ্যুতের বড় অংশই যাবে টোকিওতে।
বিশ্ব প্রেক্ষাপটে জাপানের সিদ্ধান্ত
বিশ্বজুড়ে অনেক দেশ পারমাণবিক শক্তির কথা বললেও বাস্তবে নতুন রিঅ্যাক্টর নির্মাণে গতি কম। ব্যয়, জনসন্দেহ ও প্রযুক্তিগত প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে জাপানের এই পদক্ষেপকে কেউ দেখছেন সাহসী সিদ্ধান্ত হিসেবে, আবার কেউ বলছেন এটি ধীর ও সতর্ক এক পরীক্ষা।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















