মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে ইসরায়েলের একতরফা সিদ্ধান্তকে ঘিরে। সোমালিয়ার বিচ্ছিন্ন অঞ্চল সোমালিল্যান্ডকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আরব ইসলামি ও আফ্রিকান দেশগুলো। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে একুশটি দেশের প্রতিনিধিরা এই সিদ্ধান্তকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করেছেন।
আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের প্রশ্ন
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি বিপজ্জনক নজির তৈরি করছে। জাতিসংঘ সনদের মূল নীতি অনুযায়ী প্রতিটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা করা বাধ্যতামূলক হলেও এই স্বীকৃতি সেই নীতির সরাসরি বিরোধী। বিবৃতিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষার অভিযোগ তুলে একে সম্প্রসারণবাদী রাজনৈতিক এজেন্ডার অংশ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

হর্ন অব আফ্রিকা ও লোহিত সাগর অঞ্চলে উদ্বেগ
মন্ত্রীদের বক্তব্যে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে যে, এই সিদ্ধান্ত হর্ন অব আফ্রিকা ও লোহিত সাগর অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। ওই অঞ্চল ইতোমধ্যেই ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে, সেখানে নতুন করে এমন সিদ্ধান্ত সংঘাত ও অস্থিরতা বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
সোমালিয়ার সার্বভৌমত্বের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান
যৌথ বিবৃতিতে সোমালিয়ার সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। সোমালিয়ার ঐক্য ক্ষুন্ন করে এমন যেকোনো পদক্ষেপকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে এবং পুরো ভূখণ্ডের ওপর সোমালিয়ার অধিকার অক্ষুণ্ন রাখার দাবি জানানো হয়েছে।

ফিলিস্তিনি প্রসঙ্গ ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতির সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার কোনো প্রস্তাব যুক্ত করার চেষ্টা আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এ ধরনের ধারণা আরব ইসলামি ও আফ্রিকান দেশগুলো একযোগে প্রত্যাখ্যান করছে বলে জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলের সিদ্ধান্ত ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েল প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণার পর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশ তীব্র সমালোচনা করে। সৌদি আরবও এই যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে। উল্লেখ্য, সোমালিল্যান্ড এক হাজার নয়শো একানব্বই সালে সোমালিয়া থেকে বিচ্ছিন্নতার ঘোষণা দিয়ে কার্যত স্বশাসিত প্রশাসন পরিচালনা করলেও এতদিন কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি। সোমালিয়া সরকার বরাবরই এই অঞ্চলকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করে আসছে এবং সরাসরি কোনো বিদেশি সম্পৃক্ততাকে সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন বলে মনে করছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















