০৭:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৬১ তম কিস্তি )

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ মে ২০২৪
  • 19
রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী সময়ে বাংলা সাহিত্যে আরেকটি নতুন যুগ সৃষ্টি হয়েছিলো। ভাষাকে মানুষের মুখের ভাষার কাছে নিয়ে আসা নয়, সাহিত্যে’র বিষয়ও হয়েছিলো অনেক বিস্তৃত। সাহিত্যে উঠে এসেছিলো পরিবর্তিত মন ও সমাজের নানান প্রাঙ্গন। সময়ের পথ ধরে সে যুগটি এখন নিকট অতীত। আর সে সাহিত্যও চিরায়ত সাহিত্য। দূর অতীত ও নিকট অতীতের সকল চিরায়ত সাহিত্য মানুষকে সব সময়ই পরিপূর্ণ মানুষ হতে সাহায্য করে। চিরায়ত সাহিত্যকে জানা ছাড়া বাস্তবে মানুষ তার নিজেকে সম্পূর্ণ জানতে পারে না।

সারাক্ষণের চিরায়ত সাহিত্য বিভাগে এবারে থাকছে মানিক বন্দোপধ্যায়ের দিবারাত্রির কাব্য।

দিবারাত্রির কাব্যে’র ভূমিকায় মানিক বন্দোপধ্যায় নিজেই যা লিখেছিলেন …..

দিবারাত্রির কাব্য আমার একুশ বছর বয়সের রচনা। শুধু প্রেমকে ভিত্তি করে বই লেখার সাহস ওই বয়সেই থাকে। কয়েক বছর তাকে তোলা ছিল। অনেক পরিবর্তন করে গত বছর বঙ্গশ্রীতে প্রকাশ করি।

দিবারাত্রির কাব্য পড়তে বসে যদি কখনো মনে হয় বইখানা খাপছাড়া, অস্বাভাবিক,- তখন মনে রাখতে হবে এটি গল্পও নয় উপন্যাসও নয়, রূপক কাহিনী। রূপকের এ একটা নূতন রূপ। একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্ক দিয়ে সীমাবদ্ধ করে নিলে মানুষের কতগুলি অনুভূতি যা দাঁড়ায়, সেইগুলিকেই মানুষের রূপ দেওয়া হয়েছে। চরিত্রগুলি কেউ মানুষ নয়, মানুষের Projection-মানুষের এক এক টুকরো মানসিক অংশ।

দিবা রাত্রির কাব্য

মানিক বন্দোপাধ্যায়

 

‘যাবে, হেরম্ব? কদিন দেখ না একটু খোঁজ-টোজ করে। খরচ যা লাগে আমি দেব।’

হেরম্ব নির্মম হয়ে বলল, ‘মাস্টারমশায় কি ছোট ছেলে যে খুঁজে পেলে ধরে আনা যাবে? আপনি তো চেনেন তাঁকে। ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কাজ তাঁকে দিয়ে করানো যায় ?’

মালতী খানিকক্ষণ চুপ করে থাকে।

‘হেরম্ব?’

‘বলুন, শুনছি।’

‘আচ্ছা, এরকম তো হতে পারে, চলে গিয়ে ফিরে আসতে ইচ্ছা হয়েছে,

লজ্জায় আসতে পারছে না? খ্যাপা মানুষ ঝোঁকের মাখায় চলে গিয়ে হয়তো আপসোস করছে। কেউ গিয়ে ডাকলেই আসবে?’

হেরম্ব এবারও নির্মম হয়ে বলল, ‘এমনি যদিও বা আসেন, খোঁজাখুঁজি

করে বিরক্ত করলে একেবারেই আসবেন না।’

মালতীর কণ্ঠে হেরম্ব কান্নার আভাস পেল।

‘তোমার মুখে পোকা পড়ুক, হেরম্ব, পোকা পড়ুক। তুমিই শনি হয়ে এ বাড়িতে ঢুকেছ। তুমি যেই এলে অমনি একটা লোক গৃহত্যাগী হল। কই আগে তো যায়নি।’

হেরম্ব চুপ করে থাকে। আনন্দ মৃদুস্বরে বলে, ‘ঘুমোও না, মা।’

মালতী তাকে ধমক দিয়ে বলে, ‘তুই জেগে আছিস বুঝি? আমাদের

পরামর্শ শুনছিস?’

‘তোমার পরামর্শের চোটেই যে ঘুম আসছে না।’

জবাবে স্বাভাবিক কড়া কথার বদলে মালতী হঠাৎ মিনতির সুরে যা বলল

শুনে হেরম্বের বিস্ময়ের সীমা রইল না।

‘আনন্দ, আয় না মা, আমার কাছে এসে একটু শো। আয়।’

হেরম্ব আরও বিস্মিত হল আনন্দের নিষ্ঠুরতায়।

‘রাত দুপুরে পাগলামি না করে ঘুমোও তো।’

 

 

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৬০ তম কিস্তি )

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৬০ তম কিস্তি )

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৬১ তম কিস্তি )

১২:০০:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ মে ২০২৪
রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী সময়ে বাংলা সাহিত্যে আরেকটি নতুন যুগ সৃষ্টি হয়েছিলো। ভাষাকে মানুষের মুখের ভাষার কাছে নিয়ে আসা নয়, সাহিত্যে’র বিষয়ও হয়েছিলো অনেক বিস্তৃত। সাহিত্যে উঠে এসেছিলো পরিবর্তিত মন ও সমাজের নানান প্রাঙ্গন। সময়ের পথ ধরে সে যুগটি এখন নিকট অতীত। আর সে সাহিত্যও চিরায়ত সাহিত্য। দূর অতীত ও নিকট অতীতের সকল চিরায়ত সাহিত্য মানুষকে সব সময়ই পরিপূর্ণ মানুষ হতে সাহায্য করে। চিরায়ত সাহিত্যকে জানা ছাড়া বাস্তবে মানুষ তার নিজেকে সম্পূর্ণ জানতে পারে না।

সারাক্ষণের চিরায়ত সাহিত্য বিভাগে এবারে থাকছে মানিক বন্দোপধ্যায়ের দিবারাত্রির কাব্য।

দিবারাত্রির কাব্যে’র ভূমিকায় মানিক বন্দোপধ্যায় নিজেই যা লিখেছিলেন …..

দিবারাত্রির কাব্য আমার একুশ বছর বয়সের রচনা। শুধু প্রেমকে ভিত্তি করে বই লেখার সাহস ওই বয়সেই থাকে। কয়েক বছর তাকে তোলা ছিল। অনেক পরিবর্তন করে গত বছর বঙ্গশ্রীতে প্রকাশ করি।

দিবারাত্রির কাব্য পড়তে বসে যদি কখনো মনে হয় বইখানা খাপছাড়া, অস্বাভাবিক,- তখন মনে রাখতে হবে এটি গল্পও নয় উপন্যাসও নয়, রূপক কাহিনী। রূপকের এ একটা নূতন রূপ। একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্ক দিয়ে সীমাবদ্ধ করে নিলে মানুষের কতগুলি অনুভূতি যা দাঁড়ায়, সেইগুলিকেই মানুষের রূপ দেওয়া হয়েছে। চরিত্রগুলি কেউ মানুষ নয়, মানুষের Projection-মানুষের এক এক টুকরো মানসিক অংশ।

দিবা রাত্রির কাব্য

মানিক বন্দোপাধ্যায়

 

‘যাবে, হেরম্ব? কদিন দেখ না একটু খোঁজ-টোজ করে। খরচ যা লাগে আমি দেব।’

হেরম্ব নির্মম হয়ে বলল, ‘মাস্টারমশায় কি ছোট ছেলে যে খুঁজে পেলে ধরে আনা যাবে? আপনি তো চেনেন তাঁকে। ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কাজ তাঁকে দিয়ে করানো যায় ?’

মালতী খানিকক্ষণ চুপ করে থাকে।

‘হেরম্ব?’

‘বলুন, শুনছি।’

‘আচ্ছা, এরকম তো হতে পারে, চলে গিয়ে ফিরে আসতে ইচ্ছা হয়েছে,

লজ্জায় আসতে পারছে না? খ্যাপা মানুষ ঝোঁকের মাখায় চলে গিয়ে হয়তো আপসোস করছে। কেউ গিয়ে ডাকলেই আসবে?’

হেরম্ব এবারও নির্মম হয়ে বলল, ‘এমনি যদিও বা আসেন, খোঁজাখুঁজি

করে বিরক্ত করলে একেবারেই আসবেন না।’

মালতীর কণ্ঠে হেরম্ব কান্নার আভাস পেল।

‘তোমার মুখে পোকা পড়ুক, হেরম্ব, পোকা পড়ুক। তুমিই শনি হয়ে এ বাড়িতে ঢুকেছ। তুমি যেই এলে অমনি একটা লোক গৃহত্যাগী হল। কই আগে তো যায়নি।’

হেরম্ব চুপ করে থাকে। আনন্দ মৃদুস্বরে বলে, ‘ঘুমোও না, মা।’

মালতী তাকে ধমক দিয়ে বলে, ‘তুই জেগে আছিস বুঝি? আমাদের

পরামর্শ শুনছিস?’

‘তোমার পরামর্শের চোটেই যে ঘুম আসছে না।’

জবাবে স্বাভাবিক কড়া কথার বদলে মালতী হঠাৎ মিনতির সুরে যা বলল

শুনে হেরম্বের বিস্ময়ের সীমা রইল না।

‘আনন্দ, আয় না মা, আমার কাছে এসে একটু শো। আয়।’

হেরম্ব আরও বিস্মিত হল আনন্দের নিষ্ঠুরতায়।

‘রাত দুপুরে পাগলামি না করে ঘুমোও তো।’

 

 

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৬০ তম কিস্তি )

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৬০ তম কিস্তি )