০৭:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৬৩ তম কিস্তি )

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪
  • 17
রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী সময়ে বাংলা সাহিত্যে আরেকটি নতুন যুগ সৃষ্টি হয়েছিলো। ভাষাকে মানুষের মুখের ভাষার কাছে নিয়ে আসা নয়, সাহিত্যে’র বিষয়ও হয়েছিলো অনেক বিস্তৃত। সাহিত্যে উঠে এসেছিলো পরিবর্তিত মন ও সমাজের নানান প্রাঙ্গন। সময়ের পথ ধরে সে যুগটি এখন নিকট অতীত। আর সে সাহিত্যও চিরায়ত সাহিত্য। দূর অতীত ও নিকট অতীতের সকল চিরায়ত সাহিত্য মানুষকে সব সময়ই পরিপূর্ণ মানুষ হতে সাহায্য করে। চিরায়ত সাহিত্যকে জানা ছাড়া বাস্তবে মানুষ তার নিজেকে সম্পূর্ণ জানতে পারে না।

সারাক্ষণের চিরায়ত সাহিত্য বিভাগে এবারে থাকছে মানিক বন্দোপধ্যায়ের দিবারাত্রির কাব্য।

দিবারাত্রির কাব্যে’র ভূমিকায় মানিক বন্দোপধ্যায় নিজেই যা লিখেছিলেন …..

দিবারাত্রির কাব্য আমার একুশ বছর বয়সের রচনা। শুধু প্রেমকে ভিত্তি করে বই লেখার সাহস ওই বয়সেই থাকে। কয়েক বছর তাকে তোলা ছিল। অনেক পরিবর্তন করে গত বছর বঙ্গশ্রীতে প্রকাশ করি।

দিবারাত্রির কাব্য পড়তে বসে যদি কখনো মনে হয় বইখানা খাপছাড়া, অস্বাভাবিক,- তখন মনে রাখতে হবে এটি গল্পও নয় উপন্যাসও নয়, রূপক কাহিনী। রূপকের এ একটা নূতন রূপ। একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্ক দিয়ে সীমাবদ্ধ করে নিলে মানুষের কতগুলি অনুভূতি যা দাঁড়ায়, সেইগুলিকেই মানুষের রূপ দেওয়া হয়েছে। চরিত্রগুলি কেউ মানুষ নয়, মানুষের Projection-মানুষের এক এক টুকরো মানসিক অংশ।

দিবা রাত্রির কাব্য

মানিক বন্দোপাধ্যায়

হেরম্ব চুপ করে থাকে। আকাশে খণ্ড খণ্ড মেম্ব বাতাসের বেগে ছুড়ে চলছিল। এখানে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের ডাক শোনা যায়।

‘আনন্দকে দেখো হেরম্ব। দুঃখ দিও না ওকে। তোমার মাস্টারমশায়ের হাতে আমার যা দুর্দশা হয়েছে ওর যেন সে রকম না হয়। টাকা পয়সা যা রোজগার করেছি সব রেখে গেলাম। আমার ঘরে যে কাঠের সিন্দুক আছে, তাতে সোনার গয়না আর রূপার বাসন-কোসন পাবে। সবচেয়ে বড় চারিটি জিনুকের ডালার। মন্দিরে ঠাকুরের আসনের পিছনে একটা ঘটিতে সতেরোটা মিন্নুকে আছে, ঘরে নিয়ে রেখো। এখানে বেশি দেরি না করে তোমরা কলকাতায় চলে যেও। ঠাকুরের জন্যে ভেবো না, আমি পুজোর ব্যবস্থা করব।। হেরম্ব জিজ্ঞাসা করল, ‘আপনি যাচ্ছেন কোথায়?’

মালতী বলল, ‘আনন্দকে ব’লো আমি তার বাবাকে খুঁজতে গেছি। আর তোমার মাস্টারমশায় যদি কোনদিন ফেরে তাকে ব’লো আমি গোঁসাই ঠাকুরের আশ্রমে আছি, দেখা করতে গেলে কুকুর লেলিয়ে দেব।’

মালতী হাঁটতে আরম্ভ করল। বাগানের গেটের কাছে গিয়ে বলল, ‘ঘরে যাও হেরম্ব। আর শোন, আনন্দকে তুমি বিয়ে করবে তো?’ ‘করব।’

‘ক’রো তাতে দোষ নেই। আনন্দ জন্মাবার আগেই আমাদের বৈরাগী মতে বিয়ে হয়েছিল, হেরম্ব-সাক্ষী আছে। একদিন কেমন খেয়াল হল, দশজন বৈষ্ণব ডেকে অনুষ্ঠানটা করে ফেললাম। আনন্দকে তুমি যদি সমাজে দশজনের মধ্যে তুলে নিতে পার, হেরম্ব’ অন্ধকারে মালতী ব্যাকুল দৃষ্টিতে হেরম্বের মুখের ভাব দেখবার চেষ্টা করল, ‘ভদ্রলোকের সংসর্গই আলাদা।’

হেরম্ব মৃদুস্বরে বলল, ‘তাই, মালতী-বৌদি।’

রাস্তায় নেমে মালতী শহরের দিকে হাঁটতে আরম্ভ করল।

ঘরে ফিরে গিয়ে হেরম্ব দেখল, আনন্দ বিছানায় উঠে বসে আছে।

হেরম্ব বসল।

‘তোমার মা মাস্টারমশায়কে খুঁজতে গেছেন, আনন্দ।’

 

 

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৬২ তম কিস্তি )

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৬২ তম কিস্তি )

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৬৩ তম কিস্তি )

১২:০০:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪
রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী সময়ে বাংলা সাহিত্যে আরেকটি নতুন যুগ সৃষ্টি হয়েছিলো। ভাষাকে মানুষের মুখের ভাষার কাছে নিয়ে আসা নয়, সাহিত্যে’র বিষয়ও হয়েছিলো অনেক বিস্তৃত। সাহিত্যে উঠে এসেছিলো পরিবর্তিত মন ও সমাজের নানান প্রাঙ্গন। সময়ের পথ ধরে সে যুগটি এখন নিকট অতীত। আর সে সাহিত্যও চিরায়ত সাহিত্য। দূর অতীত ও নিকট অতীতের সকল চিরায়ত সাহিত্য মানুষকে সব সময়ই পরিপূর্ণ মানুষ হতে সাহায্য করে। চিরায়ত সাহিত্যকে জানা ছাড়া বাস্তবে মানুষ তার নিজেকে সম্পূর্ণ জানতে পারে না।

সারাক্ষণের চিরায়ত সাহিত্য বিভাগে এবারে থাকছে মানিক বন্দোপধ্যায়ের দিবারাত্রির কাব্য।

দিবারাত্রির কাব্যে’র ভূমিকায় মানিক বন্দোপধ্যায় নিজেই যা লিখেছিলেন …..

দিবারাত্রির কাব্য আমার একুশ বছর বয়সের রচনা। শুধু প্রেমকে ভিত্তি করে বই লেখার সাহস ওই বয়সেই থাকে। কয়েক বছর তাকে তোলা ছিল। অনেক পরিবর্তন করে গত বছর বঙ্গশ্রীতে প্রকাশ করি।

দিবারাত্রির কাব্য পড়তে বসে যদি কখনো মনে হয় বইখানা খাপছাড়া, অস্বাভাবিক,- তখন মনে রাখতে হবে এটি গল্পও নয় উপন্যাসও নয়, রূপক কাহিনী। রূপকের এ একটা নূতন রূপ। একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্ক দিয়ে সীমাবদ্ধ করে নিলে মানুষের কতগুলি অনুভূতি যা দাঁড়ায়, সেইগুলিকেই মানুষের রূপ দেওয়া হয়েছে। চরিত্রগুলি কেউ মানুষ নয়, মানুষের Projection-মানুষের এক এক টুকরো মানসিক অংশ।

দিবা রাত্রির কাব্য

মানিক বন্দোপাধ্যায়

হেরম্ব চুপ করে থাকে। আকাশে খণ্ড খণ্ড মেম্ব বাতাসের বেগে ছুড়ে চলছিল। এখানে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের ডাক শোনা যায়।

‘আনন্দকে দেখো হেরম্ব। দুঃখ দিও না ওকে। তোমার মাস্টারমশায়ের হাতে আমার যা দুর্দশা হয়েছে ওর যেন সে রকম না হয়। টাকা পয়সা যা রোজগার করেছি সব রেখে গেলাম। আমার ঘরে যে কাঠের সিন্দুক আছে, তাতে সোনার গয়না আর রূপার বাসন-কোসন পাবে। সবচেয়ে বড় চারিটি জিনুকের ডালার। মন্দিরে ঠাকুরের আসনের পিছনে একটা ঘটিতে সতেরোটা মিন্নুকে আছে, ঘরে নিয়ে রেখো। এখানে বেশি দেরি না করে তোমরা কলকাতায় চলে যেও। ঠাকুরের জন্যে ভেবো না, আমি পুজোর ব্যবস্থা করব।। হেরম্ব জিজ্ঞাসা করল, ‘আপনি যাচ্ছেন কোথায়?’

মালতী বলল, ‘আনন্দকে ব’লো আমি তার বাবাকে খুঁজতে গেছি। আর তোমার মাস্টারমশায় যদি কোনদিন ফেরে তাকে ব’লো আমি গোঁসাই ঠাকুরের আশ্রমে আছি, দেখা করতে গেলে কুকুর লেলিয়ে দেব।’

মালতী হাঁটতে আরম্ভ করল। বাগানের গেটের কাছে গিয়ে বলল, ‘ঘরে যাও হেরম্ব। আর শোন, আনন্দকে তুমি বিয়ে করবে তো?’ ‘করব।’

‘ক’রো তাতে দোষ নেই। আনন্দ জন্মাবার আগেই আমাদের বৈরাগী মতে বিয়ে হয়েছিল, হেরম্ব-সাক্ষী আছে। একদিন কেমন খেয়াল হল, দশজন বৈষ্ণব ডেকে অনুষ্ঠানটা করে ফেললাম। আনন্দকে তুমি যদি সমাজে দশজনের মধ্যে তুলে নিতে পার, হেরম্ব’ অন্ধকারে মালতী ব্যাকুল দৃষ্টিতে হেরম্বের মুখের ভাব দেখবার চেষ্টা করল, ‘ভদ্রলোকের সংসর্গই আলাদা।’

হেরম্ব মৃদুস্বরে বলল, ‘তাই, মালতী-বৌদি।’

রাস্তায় নেমে মালতী শহরের দিকে হাঁটতে আরম্ভ করল।

ঘরে ফিরে গিয়ে হেরম্ব দেখল, আনন্দ বিছানায় উঠে বসে আছে।

হেরম্ব বসল।

‘তোমার মা মাস্টারমশায়কে খুঁজতে গেছেন, আনন্দ।’

 

 

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৬২ তম কিস্তি )

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৬২ তম কিস্তি )