০৫:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
ইরান ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়েছে এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য নেই: মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগন্নাথ মন্দির আর প্রসাদ বিতরণ নিয়ে কেন রাজনৈতিক বিতর্ক পশ্চিমবঙ্গে? মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ও গঙ্গা জলচুক্তি নবায়ন নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন: বাংলাদেশের বড় একটি ভুল, প্রতিশোধ বনাম সংস্কার সাকিব আল হাসান: বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এক অমর কিংবদন্তি বাংলা নাটকের সুপারস্টার অপূর্বের জন্মদিন আজ শিবসা নদী: শতবর্ষী এক প্রাণপ্রবাহ ও তার সুন্দরবনের প্রভাব ইরান যুদ্ধ ও ‘ট্রাম্প নীতি’ চীনের বহুমুখী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে ঘোলাটে করে দিচ্ছে আসিয়ান এখন আর কেবল বৈশ্বিক পুঁজির নীরব গ্রাহক নয় প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-১৯)

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৭৫)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ জুন ২০২৪
  • 19

শ্রী নিখিলনাথ রায়

কিন্তু সাধারণতঃ তিনি ঐ সকল পন্থার বিরোধিনীই ছিলেন। আলি- বন্দী খাঁ কদাচ তাঁহার কথা অমান্য করিতেন না। তাঁহার জ্ঞান ও দূরদর্শিতা এত দূর বিস্তৃত ছিল যে, নবাব সর্ব্বদা বলিতেন যে, নবাববেগমের সিদ্ধান্ত ও ভবিষ্যদ্বাণী কদাচ অনন্তথা হইবার নহে।। তিনি কেবল মুর্শিদাবাদের রাজপ্রাসাদন্তিত পর্যাস্কোপরি উপবেশন করিয়া সুরমা ভাগীরথীশোভা সন্দর্শনে জীবন যাপন করিতেন না। কিন্তু নবাবের সহিত ভয়াবহ মহারাষ্ট্রীয় ও আফগানসমরে উপস্থিত থাকিয়া, তাঁহার মনে সর্ব্বদা উৎসাহের সঞ্চার করিয়া দিতেন। রণক্ষেত্রের ভীষণ দৃশ্য তাঁহার মনে রমণীজনপুলভ ভীতির সঞ্চার না করিয়া উৎসাহ ও আনন্দ আনয়ন করিত। নবাবের সহিত যুদ্ধক্ষেত্রে গমন করিয়া তিনি কোন কোন সময়ে অত্যন্ত বিপদ্‌গ্রস্তও হইয়াছেন।

তথাপি স্বামীকে পরিত্যাগ করিয়া একাকিনী প্রাসাদ-প্রকোষ্ঠে অবস্থান করেন নাই। আমরা তাঁহার এক সময়ের বিপদের কথা উল্লেখ করিতেছি। যৎকালে মহারাষ্ট্রীয়গণ স্বর্ণপ্রসবিনী বঙ্গভূমির অতুল ঐশ্বর্য্যের কথা শুনিয়া বাঙ্গলা রাজ্য মন্থন করিবার জন্য অগ্রসর হইয়াছিল, সেই সময়ে নবাব তাহাদিগকে দমন করিবার অভিপ্রায়ে উড়িষ্যা হইতে বর্দ্ধমানাভি- মুখে অগ্রসর হন। সে যুদ্ধে নবাবের সহিত নবাববেগমও উপস্থিত ছিলেন। বেগম ‘লণ্ডা’ নামে এক হস্তীর পৃষ্ঠে আরোহণ করিয়া, সেই ভয়ঙ্কর সমরসাগরের উত্তাল তরঙ্গে ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত হইতেছিলেন।

মহারাষ্ট্রীয়গণ সেই হস্তীকে ধৃত করিয়া নবাববেগমকে বন্দী করিবার জন্য চেষ্টা করিতেছিল, কিন্তু নবাবের জনৈক সেনাপতি ওমর খাঁর পুত্র মোসাহেব খাঁ অসীম বীর্য্যবত্তা দেখাইয়া সেই কৃতান্তদূতদিগের হস্ত’ হইতে। হস্তী ও বেগমের উদ্ধারসাধন করেন। * এইরূপ আরও অনেক স্থলে তিনি রণক্ষেত্রের অসীম কষ্ট অকাতরে সহ্য করিয়াছেন। তথাপি কখনও হৃদয়দৌর্ব্বল্য দেখাইয়া গৃহকোণে অবস্থিতি করেন নাই। যদিও তৎকালে বাদশাহ ও নবাবগণ আপন আপন বেগমদিগকে লইয়া অনেক সময়ে সমরক্ষেত্রে উপস্থিত থাকিতেন, তথাপি এরূপ নির্ভীকচিত্তে রণোল্লাসের আনন্দোপভোগের কথা আমরা সকল স্থলে জানিতে পারি না।

রাণা রাজসিংহের সৈন্যহস্তে বন্দী হইয়া বাদশাহ আরঙ্গজেবের বেগমেরা আর্তনাদে আকাশ বিদীর্ণ করিয়াছিলেন; কিন্তু দুর্দমনীয় মহারাষ্ট্রীয়দিগের হস্তে বহুবার কষ্ট ভোগ করিয়াও কখন সেই মহীয়সী মহিলার হৃদয় বিচলিত হয় নাই। আমরা পূর্ব্বে উল্লেখ করিয়াছি যে, বাজ্যসংক্রান্ত যাবতীয় প্রধান প্রধান কার্য্যে নবাববেগমের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ ছিল। দুই একটি ঐতিহাসিক ঘটনার সহিত তাঁহার সেই সম্বন্ধের উল্লেখ করা যাইতেছে। সকলেই অবগত আছেন যে, নবাব আলিবন্দী খাঁর সময়ে বঙ্গরাজ্য বারংবার মহারাষ্ট্রীয়গণ কর্তৃক আক্রান্ত হয়। তিনি তাহাদিগের অত্যাচারে জর্জরিত এবং অনন্যোপায় হইয়া বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ব্বক, রঘুক্তী ভোঁসলার সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিতকে মনকরার ময়দানে নিহত করেন।

ইরান ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়েছে এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য নেই: মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৭৫)

১১:০০:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ জুন ২০২৪

শ্রী নিখিলনাথ রায়

কিন্তু সাধারণতঃ তিনি ঐ সকল পন্থার বিরোধিনীই ছিলেন। আলি- বন্দী খাঁ কদাচ তাঁহার কথা অমান্য করিতেন না। তাঁহার জ্ঞান ও দূরদর্শিতা এত দূর বিস্তৃত ছিল যে, নবাব সর্ব্বদা বলিতেন যে, নবাববেগমের সিদ্ধান্ত ও ভবিষ্যদ্বাণী কদাচ অনন্তথা হইবার নহে।। তিনি কেবল মুর্শিদাবাদের রাজপ্রাসাদন্তিত পর্যাস্কোপরি উপবেশন করিয়া সুরমা ভাগীরথীশোভা সন্দর্শনে জীবন যাপন করিতেন না। কিন্তু নবাবের সহিত ভয়াবহ মহারাষ্ট্রীয় ও আফগানসমরে উপস্থিত থাকিয়া, তাঁহার মনে সর্ব্বদা উৎসাহের সঞ্চার করিয়া দিতেন। রণক্ষেত্রের ভীষণ দৃশ্য তাঁহার মনে রমণীজনপুলভ ভীতির সঞ্চার না করিয়া উৎসাহ ও আনন্দ আনয়ন করিত। নবাবের সহিত যুদ্ধক্ষেত্রে গমন করিয়া তিনি কোন কোন সময়ে অত্যন্ত বিপদ্‌গ্রস্তও হইয়াছেন।

তথাপি স্বামীকে পরিত্যাগ করিয়া একাকিনী প্রাসাদ-প্রকোষ্ঠে অবস্থান করেন নাই। আমরা তাঁহার এক সময়ের বিপদের কথা উল্লেখ করিতেছি। যৎকালে মহারাষ্ট্রীয়গণ স্বর্ণপ্রসবিনী বঙ্গভূমির অতুল ঐশ্বর্য্যের কথা শুনিয়া বাঙ্গলা রাজ্য মন্থন করিবার জন্য অগ্রসর হইয়াছিল, সেই সময়ে নবাব তাহাদিগকে দমন করিবার অভিপ্রায়ে উড়িষ্যা হইতে বর্দ্ধমানাভি- মুখে অগ্রসর হন। সে যুদ্ধে নবাবের সহিত নবাববেগমও উপস্থিত ছিলেন। বেগম ‘লণ্ডা’ নামে এক হস্তীর পৃষ্ঠে আরোহণ করিয়া, সেই ভয়ঙ্কর সমরসাগরের উত্তাল তরঙ্গে ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত হইতেছিলেন।

মহারাষ্ট্রীয়গণ সেই হস্তীকে ধৃত করিয়া নবাববেগমকে বন্দী করিবার জন্য চেষ্টা করিতেছিল, কিন্তু নবাবের জনৈক সেনাপতি ওমর খাঁর পুত্র মোসাহেব খাঁ অসীম বীর্য্যবত্তা দেখাইয়া সেই কৃতান্তদূতদিগের হস্ত’ হইতে। হস্তী ও বেগমের উদ্ধারসাধন করেন। * এইরূপ আরও অনেক স্থলে তিনি রণক্ষেত্রের অসীম কষ্ট অকাতরে সহ্য করিয়াছেন। তথাপি কখনও হৃদয়দৌর্ব্বল্য দেখাইয়া গৃহকোণে অবস্থিতি করেন নাই। যদিও তৎকালে বাদশাহ ও নবাবগণ আপন আপন বেগমদিগকে লইয়া অনেক সময়ে সমরক্ষেত্রে উপস্থিত থাকিতেন, তথাপি এরূপ নির্ভীকচিত্তে রণোল্লাসের আনন্দোপভোগের কথা আমরা সকল স্থলে জানিতে পারি না।

রাণা রাজসিংহের সৈন্যহস্তে বন্দী হইয়া বাদশাহ আরঙ্গজেবের বেগমেরা আর্তনাদে আকাশ বিদীর্ণ করিয়াছিলেন; কিন্তু দুর্দমনীয় মহারাষ্ট্রীয়দিগের হস্তে বহুবার কষ্ট ভোগ করিয়াও কখন সেই মহীয়সী মহিলার হৃদয় বিচলিত হয় নাই। আমরা পূর্ব্বে উল্লেখ করিয়াছি যে, বাজ্যসংক্রান্ত যাবতীয় প্রধান প্রধান কার্য্যে নবাববেগমের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ ছিল। দুই একটি ঐতিহাসিক ঘটনার সহিত তাঁহার সেই সম্বন্ধের উল্লেখ করা যাইতেছে। সকলেই অবগত আছেন যে, নবাব আলিবন্দী খাঁর সময়ে বঙ্গরাজ্য বারংবার মহারাষ্ট্রীয়গণ কর্তৃক আক্রান্ত হয়। তিনি তাহাদিগের অত্যাচারে জর্জরিত এবং অনন্যোপায় হইয়া বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ব্বক, রঘুক্তী ভোঁসলার সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিতকে মনকরার ময়দানে নিহত করেন।