সারাক্ষণ ডেস্ক
৯ জুন দিল্লিতে রাষ্ট্রপতির বাসভবনে মন্ত্রীপরিষদের শপথ গ্রহণকারী পরিচিত মুখগুলি দেখে বোঝাই যাচ্ছিলনা যে নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)সদ্য একটি সাধারণ নির্বাচনে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে।
জোট সরকার চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সমঝোতার সমস্ত আলোচনার জন্য মিঃ মোদি আগ্রহী ছিলেন কারন সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলেও কোনও কিছুতেই তেমন কোনো পরিবর্তন হবে না। তবুও অবস্থাটা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জন্য বেশ কয়েকটি নতুন চ্যালেঞ্জকে ধোঁয়াশার মধ্যে রাখে।
এখন, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সে (এনডিএ) জোটের অংশীদারদের দাবি পূরণ করাই তার প্রথম কাজ। তাকে একটি পুরোনো বিরোধিতা এবং একটি চিন্তাযুক্ত সময়ের সাথেও লড়াই করতে হবে।তবে, এই মুহুর্তে নতুন মোদী সরকার দেখতে অনেকটা পুরনো সরকারের মতোই।
মূল নিয়োগ অপরিবর্তিতই আছে। অমিত শাহ, মিঃ মোদীর ভরসার ডান হাত যিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রিই থেকে গেছেন। সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর, বিদেশ মন্ত্রী, রাজনাথ সিং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং নির্মলা সীতারামন অর্থমন্ত্রী হিসাবে বহাল রয়েছেন।
১০ জুন নতুন মন্ত্রিসভার গৃহীত প্রথম সিদ্ধান্তটি ছিল মিস্টার মোদির ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পগুলির একটি যা দরিদ্র ভারতীয়দের জন্য একটি গৃহনির্মাণ কর্মসূচি ছিল। এটি মোদির রাজনৈতিক এজেন্ডার কল্যাণমূলক অংশের প্রতি অবিরত প্রতিশ্রুতির একটি ধারাবাহিক অংশ।
নবনিযুক্ত মন্ত্রীরা অন্যান্য ক্ষেত্রেও নীতির ধারাবাহিকতার উপর জোর দিয়েছিলেন। তবুও মিঃ মোদি শীঘ্রই আরও গুরুতর পরীক্ষার মুখোমুখি হবেন।ইতোমধ্যেই এনডিএ-র বেশিরভাগ দলই অগ্নিপথ প্রকল্পের অবিলম্বে পর্যালোচনা চায়।
এই প্রোগ্রামটি ২০২২ সালে চালু করা হয়েছিল যেটি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে বেশিরভাগ নতুন সদস্যদের আজীবন নিয়োগ দেওয়ার পরিবর্তে একটি নির্দিষ্ট চার বছরের মেয়াদের জন্য নিয়োগের মাধ্যমে খরচ কমানোর প্রয়াস ছিল।
চাকরির অভাব, বিশেষ করে তরুণদের জন্য। ভোটারদের অর্থনৈতিক উদ্বেগের কারনকে পূর্ববর্তী মোদী সরকার অবজ্ঞার চোখে দেখেছিল।
বিজেপির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র, জনতা দল (ইউনাইটেড) পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বিহার থেকে এবং দক্ষিণে অন্ধ্র প্রদেশের তেলেগু দেশম পার্টির কাছ থেকে তাদের রাজ্যগুলির জন্য আরও অর্থের দাবি মি. মোদীর আর্থিক সুবিধাকে আঘাত হানতে পারে।
আরেকটি চ্যালেঞ্জ হল এই সরকারের প্রথম সংসদের নতুন করে উত্থানের গুরুত্ব, যা ২৪ শে জুন প্রথমবারের মতো বসবে৷ এছাড়া, বিরোধী দলকে পাশ কাটিয়ে চলা সরকারের পক্ষে কঠিন হবে, যারা নির্বাচনে তাদের লাভের কারণে একীভূত হয়েছে।
অপরদিকে, কংগ্রেস পার্টি, সবচেয়ে বড় বিরোধী দল তারা ইতিমধ্যেই নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশের দৌড়ে স্টক মার্কেটের কারসাজির অভিযোগ তদন্তের দাবি করেছে যখন এক্সিট পোলগুলি এনডিএ-র জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল।
এদিকে, ইতিমধ্যে বিজেপির মিত্ররা সংসদীয় স্পিকারের পদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে।
স্পিকার, যিনি টেকনিক্যালি নির্দলীয় হন কিন্তু গত এক দশক ধরে বিজেপি তাদের দল থেকেই বাছাই করেছিলেন। দল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া বিধায়কদের অযোগ্য ঘোষণা করার একমাত্র ক্ষমতা রয়েছে স্পীকারের হাতে।
চূড়ান্ত ঝুঁকি হতে পারে মিঃ মোদীর নিজস্ব রাজনৈতিক শিবিরে অনৈক্য।কারন , উত্তর প্রদেশের বিজেপির কেন্দ্রস্থলে কর্মীরা, যেখানে দলটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, প্রকাশ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত লাভের জন্য নির্বাচনী প্রচারে নাশকতার অভিযোগ করেছে।
আরও আকর্ষণীয় ব্যাপার হলো এই যে, ১১ ই জুন, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবত যিনি একটি আধাসামরিক স্বেচ্ছাসেবক সংস্থার প্রধান, যার উপর বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলে কাজ করার জন্য নির্ভর করেন সেই মোহন ভাগবতই মিঃ মোদির নির্বাচনী প্রচারণার প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছিলেন।
ভবিষ্যতে আরএসএস হয়তো দলীয় নীতি প্রণয়নে বৃহত্তর ভূমিকার দাবি করতে পারে। সম্ভাব্যভাবে এনডিএ প্রকারের সাথে বিরোধ সৃষ্টি করতে পারে। তবে, মিস্টার মোদী ইতোমধ্যে তার পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলেছেন।
Leave a Reply