মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন।
মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে।
তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু।
তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক
‘হ্যাঁ সেই ভালো, তুই চাপিস কারে যা রহমান, ওর সঙ্গে পাল্লা দেওয়া তোর কম্মো নয়, ও হলো জিনিশ সদরঘাটের পিনিস, সারাসেনের হিস্ট্রি গিলে গিলে ওর পেট জয়ঢাক হ’য়ে আছে; ধোপে টিকবি না তুই ওর কাছে। ওর তুলনায় চুনোপুটি তুই।’ একটু থেমে খোকা বললে, ‘ওয়ার্কস্ প্রোগ্রাম, জাতীয় সংহতিতে শালিমার গার্ডেনের ভূমিকা, হীররাঞ্জা আর খটক নৃত্যের সৌন্দর্য–মাত্র এই চারটে স্ক্রীপ্ট লিখেছিলি তুই টিভির জন্যে। তাও শালা মওলার চাপে প’ড়ে; ও শালাই তোকে ফাঁসিয়েছিলো। ও কিছু নয়, নুরুদ্দিনের কীর্তির তুলনায় এগুলো সব নস্যি। ও অনেক সিনিয়র আমাদের চেয়ে; খন্দকের যুদ্ধে ও ছিলো, বদরের যুদ্ধেও ছিলো, ও তারিকের সঙ্গে জিব্রাল্টারে গেছে, জয় করেছে স্পেন, গ্রানাডায় আলহামরা ওরই তৈরি, এমন তাড়ান তাড়িয়েছিলো ও আবু রুশদকে-‘
একটা সিগ্রেট ধরিয়ে নুরুদ্দিনের ঠোঁটে গুঁজে দিয়ে মওলা বললে, ‘ভ্যালিয়মের কথা মনে পড়ছে নাকি সিনিয়র?’
‘ফালতু কথা ছাড়।’ নুরুদ্দিন খাঁউ ক’রে উঠলো।
রহমান বললে, ‘কি যে বলিস, ভ্যালিয়ম তো আজকাল সবসময় ওর পকেটেই থাকে; হাতড়ে বের করতে দেরি হয় ব’লে কুলুপের ঢিল রাখাও ছেড়ে দিয়েছে। প্রায়ই তো বলছে, হাতপায়ের তলা ঘামে, মাথার ভিতরে একটা কাঠঠোকরা হরদম ঠোকর মারছে, জান ধড়ফড় করছে; চেকারের হাতে ধরা পড়ার ভয়ে জানটা যে কোনো সময় চলন্ত বগি থেকে ঘপাং ক’রে লাফ দিতে পারে–‘
‘তাহলে খামোশ হ’য়ে যা ভাই!’ মওলা বললে, ‘হঠাৎ যদি ওর শরীর খারাপ করে!’
খোকা বললে, ‘খ’চে গেলি নাকি নুরুদ্দিন? আর এক রাউন্ড চা হ’য়ে যাক?’
‘হোক।’
‘তোর খারাপ লাগবে না?’ রহমান টিপ্পনী কাটে।
‘তা একটু লাগবে বৈকি। তবে সঙ্গে যদি সমুচা কিংবা ফুটকেক ধরনের কিছু থাকে, অন্তত ভালো লাগাবার চেষ্টার কোনো ত্রুটি হবে না।’
‘চান্স লিচ্ছ ব্রাদার?’ রহমান বললে, ‘অবশ্য এ হ্যাবিটটা তোর আজকের নয়।”
গালে সমুচা পুরে খুব জাঁক ক’রে চায়ের কাপে একটা লম্বা চুমুক মেরে নুরুদ্দিন বললে, ‘এসব আমি গায়ে মাখি না, যার যা ইচ্ছে বলুক, তৃপ্তি পাচ্ছে, পাকা আসল কথা যেটা সেটা এই, কুকুর কুকুরকে দংশন করছে।”
‘রক্ষে করো, এক লাফে একেবারে চীনপন্থী হ’য়ে গেলি।’
‘কেন চীনেমাটির কাপে চা খাচ্ছি ব’লে?’
‘ওই এক ধরন তোদের, কখনো কখনো এমন কথা বলিস যা নিজেরাও বুঝিস না ভালোমতন-‘ ঊর্ধ্ববাহু হ’য়ে আড়মোড়া ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে রহমান বললে, ‘অবশ্য তোর দিক থেকে মস্ত একটা লাভ হয়েছে, পর পর কয়েকটা বছর একটানা সুরমা দেওয়ার ফলে চোখের ব্যামোটাই ছেড়ে গেছে। নাকি এখনো ট্রাবল দেয়?’
Leave a Reply