শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৩৯ অপরাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-৪৭)

  • Update Time : বুধবার, ১০ জুলাই, ২০২৪, ১২.০০ পিএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

খোকা বললে, ‘ছেড়ে দে, বাজে কথা আর ভালো লাগছে না। ও শালা লেবু, বেশি কচলালে তিতকুটে মেরে যাবে। চল ওঠা যাক–‘

মওলা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললে, ‘আমাকেও উঠতে হবে, কাজ ফেলে এসেছি অনেক। এইরে, আবার একঝাঁক স্বেচ্ছাসেবক ঢুকেছে, চল চল কাটি–‘

রেক্স থেকে বেরিয়ে একটা পান গালে পোরে খোকা। এমনিতে সে পান খায় না; কিন্তু রেক্স থেকে বেরুনোর সঙ্গে গালে পান গোঁজার কোথায় একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে, প্রতিবারই বেরুবার সময় গলির মুখটায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই তার মুখ থেকে ফশ ক’রে পানের কথাটা বেরিয়ে যায়।

কোন্দিকে যাওয়া যায় এখন। এই মুহূর্তে বাড়ি ফেরার কোনো ইচ্ছেই নেই তার, যদিও বের হবার সময় পৈপৈ ক’রে ব’লে দিয়েছে রজু যতো শিগগির সম্ভব ফিরতে। নির্ঘাত কাঁইখাপ্পা হবে রঞ্জু। চটুক। খোকা মনে মনে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায়–বেশি আঙ্কারা দেওয়া চলবে না, খবরদারির মাত্রা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে, ভবিষ্যতে আরো অসু- বিধায় ফেলতে পারে; আর কোনো গুণ থাকুক আর নাই থাকুক, হাতের

মুঠো শক্ত করার বিদ্যায় সব মেয়েই কমবেশি পারদর্শিতা অর্জন করতে পারে।

এই এক স্বভাব খোকার, ঘরে থাকলে জুবড়ে প’ড়ে থাকে, বাইরে বের হালে ঘরের কথা ভুলে যায়। দীর্ঘ বিরতির পর যখন গুহা থেকে বের হয়, কিংবা নিশুতি রাত মাথায় ক’রে সারা শহরকে ঘুম পাড়িয়ে যখন ঘরে ফেরে, তখন মনে মনে নিজেকে সংশোধন করার জন্যে তৈরি হয় খোকা; কিন্তু ওই পর্যন্তই।

আত্মীয়স্বজন খুব কম নেই ঢাকা শহরে। আর্মানিটোলায় এক মামা আছে। সিদ্ধেশ্বরীতে চাচা থাকে, একেবারে আপন না হ’লেও ঘনিষ্ঠতা খুব বেশি! খালা-খালু, ভাই-বোনেরা আছে মতিঝিল কলোনীতে। ওদের সঙ্গে মিশে বেশ আনন্দও পায় সে।

তবু এই নিরালম্ব মুহূর্তে ওসব পথে পা বাড়ানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই তার। আসল কথা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে তার খুব একটা জমে না কখনোই। সাধারণত ধারেকাছে ঘেঁসে না, এড়িয়ে চলে; নিজেরাই উপযাচক হ’য়ে প্রায় সকলেই কালেভদ্রে খোঁজ-খবর নিয়ে যায়। অভিযোগের পাহাড় জমা হয়। এই নিয়ে রঞ্জুর সঙ্গে তার মাঝে মাঝে তীব্র কথা কাটাকাটি হয়। নিজের অনুপস্থিতিতে খোকা যখন আত্মীয়স্বজনের কাছে তিরষ্কৃত হয় তখন ভীষণ খারাপ লাগে রঞ্জুর; খোকা নারাজ এসব কানে তুলতে, তার ধারণা এইসব মাখামাখি এক ধরনের স্কুল গ্রাম্যতা, সুখ বলতে সে বোঝে নিরুপদ্রব থাকা।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024