অনুবাদ : ফওজুল করিম
নীল প্রস্তুত করতে প্রয়োজন বিশেষ দক্ষতা ও হাতেনাতে কাজের অভিজ্ঞতা। সেনেগালের জন্য অভিজ্ঞ নীলকর খুঁজে যাওয়ার কাজটি ছিল দুরূহ। ফ্রান্সের নীল সংক্রান্ত মন্ত্রি ১৮২২ সালের সেপ্টেম্বরে গভর্ণর রজারকে লিখেছিলেনঃ
“আপনার জন্য ভাল একজন নীলকর খুঁজে বের করার কাজ এখনো চালিয়ে যাচ্ছি। মনে হয় বাংলাদেশ থেকেই নীলকর নিতে হবে। তবে তা না পাওয়া গেলে অগত্যা ফ্রান্সের নীলকর দিয়ে কাজ চালাতে হবে। সেন্ট ডোমিঙ্গোর (হাইতি) সাবেক এক বাসিন্দা এসেছিল এই কাজের জন্যে” সে বলছে সে নাকি সেখানে একটি নীলকুঠি চালাত। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ১৮২৫ সালের দিকে সরকার নীল চাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কৃষিবিদকে নিয়োগ দান করেন। চার বছর তিনি সেনেগালে থাকবেন। তাঁর বার্ষিক বেতন সাড়ে ৭ হাজার ফ্রাঁ, উপনিবেশের অন্য যে কোনো কৃষি কর্মচারীর চাইতে যার বেতন বেশি। দু’ বছর পর সরকার আরও কিছু নীলকুঠি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়।
এইসঙ্গে সরকার একজন রসায়নবিদ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। রসায়নবিদের নাম মিঃ দেজোন। তিনি বেতন পেতেন নীল কৃষিবিদ হিসাবে। আফ্রিকান শ্রমিকদের কাজ দেখাশোনা করার জন্য ম্যানেজার আর ফোরম্যান হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল মূলটো আর ইউরোপিয়ানদের। শ্রমিকদের অনেকেই ছিল বিদেশী। মিঃ দেজোনের স্থলাভিষিক্ত হন মিঃ দেশুটিনা যিনি ছিলেন বঙ্গদেশের ফরাসী নীলকর। খুব একটা কর্মোদ্যম ছিল না তার কিন্তু তিনি ছিলেন কাজকর্মে সুশৃঙ্খল।
পরের কয়েক বছর পরিস্থিতি দেখেশুনে মনে হল সেনেগালে নীলচাষ সফল হবে এবং আন্তর্জাতিক নীলের ব্যবসার কিছুটা হলেও ফ্রান্স ফেরত পাবে। ফ্রান্সের এই ইচ্ছে রূপ পেল ১৮২৫ সালে পাশ করা একটি আইনের মাধ্যমে। এই আইন অনুসারে ফ্রান্সের নয় এমন কোনো দেশের জাহাজে ফ্রান্সে নীল আমদানী করা হলে সে নীলের উপর উচ্চ হারে কর আরোপ করতে পারবে সরকার। এই আইন কর্তৃপক্ষের জন্য বিশেষ চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশ্বের নীল ব্যবসা কুক্ষিগত করার জন্য বৃটেনের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ফ্রান্সের ভীতি বিশেষ জোরদার ছিল না।
Leave a Reply