শশাঙ্ক মণ্ডল
প্রথম অধ্যায়
ভাটিদেশের সুন্দরবন নামে পরিচিত হবার পিছনের কারণ নানাভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা হয়েছে। অনেকে সুন্দরবন নামটির উৎপত্তির কারণ হিসাবে সুন্দরবনের সুন্দরী গাছের কথা উল্লেখ করেছেন। সুন্দরবনের জঙ্গলে বিভিন্ন ধরণের গাছ জন্মে – বান কেওড়া, গরান, হোগলা গোল এধরনের অসংখ্য গাছ সুন্দরবনের মধ্যে লক্ষ করা যাবে। এসব গাছের মধ্যে সুন্দরী গাছ খুবই মূল্যবান। সুন্দরী কাঠ পালিশের পক্ষে খুবই উপযুক্ত হওয়ায় এর কাঠ থেকে নৌকা তৈরি করা হয়। অপেক্ষাকৃত কম লবণাক্ত জঙ্গলে এই গাছ বেশি জন্মে। আজকের সুন্দরবনের জঙ্গলে সুন্দরী গাছ খুবই বিরল।
সুন্দরীগাছের বন থেকে সুন্দরবন এটা সঠিক নয়। অনেকে সমুদ্রতীরবর্তী বন থেকে সোঁদরবন তার থেকে সুন্দরবন এই মনে করেন। যে বন দেখতে সুন্দর তাকে সুন্দরবন হিসাবে ভাবা হয়েছে। বিশাল নদীর দুই তীরের সীমাহীন সবুজ অরণ্যের নয়ন মনোহর দৃশ্য যে কোন মানুষকে মুগ্ধ করবে। বিভিন্ন বিদেশী পর্যটকদের কাছে সুন্দরবনের এই শ্যামশ্রী তার নয়ন মনোহারী দৃশ্য বারবার ধরা পড়েছে। সুতরাং সেই অর্থে সমুদ্রতীরবর্তী সুন্দর মনোহারী বন সুন্দরবন নামে পরবর্তীকালে পরিচিত হয়েছে।
সুন্দরবনকে নিয়ে ব্রিটিশ আমলের শুরু থেকে প্রায় একশ বছর ধরে প্রতিনিয়ত সরকার চেষ্টা করেছে- বেশি বেশি করে এর সম্পদকে নিজস্ব অধিকারে নিয়ে আসতে। ভূমি রাজস্ব আদায়ের ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে নানারকম পরিকল্পনা কোম্পানির পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছিল।
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে যশোরের জজ ও কালেক্টর হেঙ্কেল সাহেব খুলনা যশোর ২৪ পরগণা অংশের পূর্বে হরিণঘাটা নদীতীর থেকে পশ্চিমে রায়মঙ্গল বরাবর বিশাল ভূখণ্ডে ১৪৪ টি লটে বিভাগ করে ৬৪৯২৮ বিঘা জমি রায়তদের মধ্যে বিলি করার ব্যবস্থা করেন। কোম্পানির আশা ছিল রায়তরা নিজেদের জমি বন কেটে চাষযোগ্য করে নেবে। তার ফলে সমগ্র এলাকা জনবসতিপূর্ণ হয়ে উঠবে। মোগলযুগের মত আবার এই এলাকায় কৃষিসমৃদ্ধি দেখা দেবে the former prosperity of cultivation of the Sundarbans during Mughal Empire – আবার ফিরে আসবে।
Leave a Reply