শিবলী আহম্মেদ সুজন
সাপের মাথার মণি
বিশেষত গ্রামীণ জীবনেই এ ধরনের একটা কথা প্রচলিত আছে, এ ধরনের একটা কথা কেউ কেউ মেঘলা অন্ধকার রাতে সাপের মাথায় মণি দেখেছেন, ব্যাঙের মুখে লাল আলোর আভা বা আলো দেখেছেন। এসব কথা শুনে শৈশবে আমরাও ভয়-বিচলিত হতাম এবং অন্ধকার বর্ষারাতে জানালা দিয়ে বাইরে দৃষ্টি গলিয়ে সাপের মাথায় মণি এবং ব্যাঙের মুখে লাল আলোর আভা খোঁজার চেষ্টা করেছি।
সাপের সেই মণি সংগ্রহের একটা পদ্ধতি আমাদের তখন জানা থাকলেও বাস্তবে সেই দুর্লভ সাপের মণির সাক্ষাৎ আমরা কোনো দিনও পাইনি। সাপুড়ে-বেদেরা প্রধানত এসব মুখরোচক গালগল্পের প্রচারক। সাপ দেখিয়ে লোক ভোলানোর পার্শ্ব- আকর্ষণ হিসেবেই তারা এসব আজগুবি ঘটনার অবতারণা করে থাকে।
অনেক সাপুড়ে সাধারণত এ রকমটা দাবি করে থাকে যে, তারা নাকি রাজসাপের মাথা থেকে মণি (যা সাত রাজার ধনের সমান) সংগ্রহ করেছে বা করতে সক্ষম। কিন্তু এমন মূল্যবান সম্পদ সংগ্রহকারী সাপুড়ে বা বেদেদের ভাগ্য তাহলে কোনো দিন ফেরে না কেন? আশ্চর্য হওয়ারই কথা।
আসলে বিষধর সাপের মাথার ওপর একটা ছিদ্র থাকে। মুখ বন্ধ অবস্থায় সেই ছিদ্র দিয়ে সাপ জিহ্বা বের করতে পারে। তা সাপ বিশেষ প্রয়োজনের তাগিদেই করে থাকে। ওইভাবে বের করা জিব দিয়ে সাপ এর পরিপার্শ্ব থেকে খাদ্য সন্ধান ও এর সাবধান হওয়া সহায়ক সংকেত বা প্রতিবেশগত অন্য কোনো ইঙ্গিত সংগ্রহ করে থাকে।
এ ক্ষেত্রে সাপুড়ে সাধারণত যা করে থাকে, তা হলো, তাদের বাক্সবন্দী সাপগুলোর মাথার সেই ছিদ্রপথে আগে থেকেই রং-বেরঙের পাথর বসিয়ে রাখে। সেই পাথরই সূর্যকিরণে সাধারণত জ্বলজ্বল করে ওঠে।
এ ছাড়া ওই সব সাপের মাথার ওপরকার উল্লিখিত ছিদ্রপথের আশপাশের চকচকে আঁশের ওপর সূর্য বা চাঁদের আলো পড়লে অনেক সময় তা বিচ্ছুরিত হয়। সেই রশ্মি বিচ্ছুরণকেই সাপুড়ে-বেদেরা কৌশলে সাপের মাথার মণি বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
তবে এমনটা ভাবার কিছুটা যুক্তিসংগত কারণও রয়েছে। কোনো বিশেষ প্রজাতির সাপ বা ব্যাঙ দু-একটি চকমকি ধরনের পাথর মুখে বা এর অন্য কোনো অঙ্গে পুরে রাখে। সেটা এরা করে থাকে হয়তো এদের অভিজ্ঞতালব্ধ খাদ্য সংগ্রহের তাড়না থেকেই।
অন্ধকার রাতে সেই সাপ হয়তো এর মুখের ভেতরকার উজ্জ্বল পাথরটি এর সামনে রেখে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। অন্ধকারে আলো দেখলে কীটপতঙ্গ ও অন্যান্য ছোট প্রাণী সাধারণত সহজে আকৃষ্ট হয়। এইভাবে আকৃষ্ট হওয়া কীটপতঙ্গদের এরা ধরে ধরে ক্ষুধা নিবারণ করে থাকে।
প্রখ্যাত লেখক রেজাউর রহমান–এর বইয়ের সহায়তায় এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।
Leave a Reply