১০:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
নিজের জীবনের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে লিখলেন উপন্যাস ‘দ্য সিস্টার্স’ হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩৩) কলম্বিয়ার সংবিধান পরিবর্তনের উদ্যোগ সাকিব ও মাশরাফি ছাড়া পারফরম্যান্স, শ্রীলঙ্কা টেস্ট সিরিজের পর পথ কি? রাষ্ট্রে কখন ও কেন সংখ্যালঘুরা সংগঠিত ধর্ষণের শিকার হয় গ্রামীণ গর্ভবতী নারীদের আয়রন ঘাটতি: অর্ধেকের বেশি রক্তস্বল্পতায় আরব আমিরাত, মরুভূমি শহরে ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা মুরাদনগরে সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণ: ‘এরপর সরকার ক্ষমতায় থাকার যোগ্য নয়’—জাপা চেয়ারম্যান ইরান ও পাকিস্তান থেকে আফগানদের গণনির্বাসনে উদ্বেগ স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্যে নতুন নিষেধাজ্ঞা ভারতের, প্রভাব কেমন হবে

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-২৩)

  • Sarakhon Report
  • ০৪:০০:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • 20

শশাঙ্ক মণ্ডল

দ্বিতীয় অধ্যায়

-সার্কুলার ক্যানেলের প্রস্তাব কার্যকরী করার ব্যাপারে দেরী হল কারণ সরকারের সামনে অনেক সমস্যা ছিল। সুতরাং এই প্রস্তাব কার্যকরী করার পূর্বে বিকল্প পথ হিসাবে কুলটার খালকে কাজে লাগানো যাবে এই ভেবে কুলটার খাল প্রশস্ত করার কার্যকর এক প্রস্তাব সরকার গ্রহণ করলেন। ১৮৩৩ খ্রীষ্টাব্দ থেকে সার্কুলার খাল দিয়ে নৌকা চলাচল শুরু হয়। চিৎপুরের নিকটে গঙ্গা থেকে এই খাল বেরিয়ে সার্কুলার রোডের সমাপ্তি স্থলে বেলেঘাটা খালে গিয়ে মিশেছে বলে একে সার্কুলার ক্যানেল বলা হত। ১৮৩১ খ্রীঃ বোর্ড অফ রেভিনিউ- এর সচিব জি. ইয়াং এর আদেশ বলে সার্কুলার ক্যানেল-এর টাক্সের রেট টালি নালার মতো করার কথা বলা হল।

এই পথ উনিশ শতকের মাঝামাঝির মধ্যে টালির নালার বিকল্প হিসাবে গড়ে উঠল। পূর্ব বাংলা নৌ-বাণিজ্যে এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। ১৮৪৩ এবং ১৮৪৫ এই দুই বছরে সল্টলেক দিয়ে এই খালে ১,৩২,২৩০ টি নৌকা এবং হুগলী নদীর চিৎপুরের মধ্য দিয়ে ৩১,৮৫০ টি নৌকা এই খালে প্রবেশ করছে। সেই সময়ে টালির নালাতে নৌকার সংখ্যা ১০৭৩৯০ (২০) এই খালে এ সময়ে বছরে ২ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। কিন্তু খালের পলি সরানো বা পরবর্তী কালে খাল সংস্কার-এর কোন উদ্যোগ লক্ষ করা গেল না।

টালির নালা থেকে ২০ মাইল লম্বা এক খাল ক্যাওড়া পুকুরের মধ্যে দিয়ে দক্ষিণে মগরাহাট পর্যন্ত চালু ছিল- এই খাল দিয়ে জয়নগর মজিলপুর যাওয়া যেত। শিবনাথ শাস্ত্রী তাঁর আত্মজীবনীতে এই পথের বর্নণা রেখে গেছেন। উনিশ শতকের শেষ ভাগেও ধান চালের একটা বিখ্যাত গঞ্জ ছিল মগরাহাট। ইস্পাহানি কোম্পানির ধানের গোডাউন এখানে ছিল। সারা সুন্দরবন এলাকার ধান এখানে সংগ্রহ করা হত এবং নৌকার সাহায্যে কলকাতায় চালান দেওয়া হত। টালির নালার পাশে আজকের কসবা বেহালা ছিল সেদিনকার বিখ্যাত গঞ্জ। তাঁতের কাপড় গৃহস্থালী জিনিসপত্র বরিশাল, খুলনা, ফরিদপুর প্রভৃতি পূর্ববাংলার জেলাগুলো থেকে এখানে আনা হত। কলকাতা থেকে বরিশাল এর সরাসরি দূরত্ব ১৮৭ মাইল কিন্তু নদীপথে তা দাঁড়ায় আটশ থেকে হাজার মাইলের মত।

নানা বাঁক মোড় পেরিয়ে নৌকাগুলি কলকাতা থেকে সুন্দরবন-এর ভয়ঙ্কর নদীপথে বাখরগঞ্জ পৌঁছাতে লাগত এক মাস থেকে দেড় মাস। ১৯১১ খ্রীষ্টাব্দে বাখরগঞ্জ থেকে কলকাতা পর্যন্ত এক বস্তা ধানের ভাড়া লাগত ৩ থেকে ৩.৫০ আনা। একটা চার দাড়ির টাপুরে নৌকার ভাড়া ছিল ৫০ টাকার মতো। এই পথটা পৃথিবীর অন্যতম প্রধান আভ্যন্তরীণ নদীপথ হিসাবে সে যুগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। বৎসরে ১০ লক্ষ টন মাল এ পথে পরিবহণ হত যার আর্থিক মূল্য ছিল ৪০ লক্ষ স্টার্লিং(১২১)। মাথাভাঙ্গা, চূর্ণি নদীকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ রাজত্বে উনিশ শতকে একটা উল্লেখযোগ্য নৌপথ গড়ে উঠেছিল। এই পথে নীল, পাট, গুড়, চিনি, কার্পাস শিল্পজাত দ্রব্যাদি পরিবাহিত হত। ১৮২০-২১ খ্রীষ্টাব্দে টোল আদায় করা হচ্ছে ১৫৬৩৪ টাকা ৪ আনা। এই নৌপথ সেদিন প্রশাসনগতভাবে নদীয়া জেলা শাসক নিয়ন্ত্রণ করতেন।(২২)

 

নিজের জীবনের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে লিখলেন উপন্যাস ‘দ্য সিস্টার্স’

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-২৩)

০৪:০০:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শশাঙ্ক মণ্ডল

দ্বিতীয় অধ্যায়

-সার্কুলার ক্যানেলের প্রস্তাব কার্যকরী করার ব্যাপারে দেরী হল কারণ সরকারের সামনে অনেক সমস্যা ছিল। সুতরাং এই প্রস্তাব কার্যকরী করার পূর্বে বিকল্প পথ হিসাবে কুলটার খালকে কাজে লাগানো যাবে এই ভেবে কুলটার খাল প্রশস্ত করার কার্যকর এক প্রস্তাব সরকার গ্রহণ করলেন। ১৮৩৩ খ্রীষ্টাব্দ থেকে সার্কুলার খাল দিয়ে নৌকা চলাচল শুরু হয়। চিৎপুরের নিকটে গঙ্গা থেকে এই খাল বেরিয়ে সার্কুলার রোডের সমাপ্তি স্থলে বেলেঘাটা খালে গিয়ে মিশেছে বলে একে সার্কুলার ক্যানেল বলা হত। ১৮৩১ খ্রীঃ বোর্ড অফ রেভিনিউ- এর সচিব জি. ইয়াং এর আদেশ বলে সার্কুলার ক্যানেল-এর টাক্সের রেট টালি নালার মতো করার কথা বলা হল।

এই পথ উনিশ শতকের মাঝামাঝির মধ্যে টালির নালার বিকল্প হিসাবে গড়ে উঠল। পূর্ব বাংলা নৌ-বাণিজ্যে এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। ১৮৪৩ এবং ১৮৪৫ এই দুই বছরে সল্টলেক দিয়ে এই খালে ১,৩২,২৩০ টি নৌকা এবং হুগলী নদীর চিৎপুরের মধ্য দিয়ে ৩১,৮৫০ টি নৌকা এই খালে প্রবেশ করছে। সেই সময়ে টালির নালাতে নৌকার সংখ্যা ১০৭৩৯০ (২০) এই খালে এ সময়ে বছরে ২ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। কিন্তু খালের পলি সরানো বা পরবর্তী কালে খাল সংস্কার-এর কোন উদ্যোগ লক্ষ করা গেল না।

টালির নালা থেকে ২০ মাইল লম্বা এক খাল ক্যাওড়া পুকুরের মধ্যে দিয়ে দক্ষিণে মগরাহাট পর্যন্ত চালু ছিল- এই খাল দিয়ে জয়নগর মজিলপুর যাওয়া যেত। শিবনাথ শাস্ত্রী তাঁর আত্মজীবনীতে এই পথের বর্নণা রেখে গেছেন। উনিশ শতকের শেষ ভাগেও ধান চালের একটা বিখ্যাত গঞ্জ ছিল মগরাহাট। ইস্পাহানি কোম্পানির ধানের গোডাউন এখানে ছিল। সারা সুন্দরবন এলাকার ধান এখানে সংগ্রহ করা হত এবং নৌকার সাহায্যে কলকাতায় চালান দেওয়া হত। টালির নালার পাশে আজকের কসবা বেহালা ছিল সেদিনকার বিখ্যাত গঞ্জ। তাঁতের কাপড় গৃহস্থালী জিনিসপত্র বরিশাল, খুলনা, ফরিদপুর প্রভৃতি পূর্ববাংলার জেলাগুলো থেকে এখানে আনা হত। কলকাতা থেকে বরিশাল এর সরাসরি দূরত্ব ১৮৭ মাইল কিন্তু নদীপথে তা দাঁড়ায় আটশ থেকে হাজার মাইলের মত।

নানা বাঁক মোড় পেরিয়ে নৌকাগুলি কলকাতা থেকে সুন্দরবন-এর ভয়ঙ্কর নদীপথে বাখরগঞ্জ পৌঁছাতে লাগত এক মাস থেকে দেড় মাস। ১৯১১ খ্রীষ্টাব্দে বাখরগঞ্জ থেকে কলকাতা পর্যন্ত এক বস্তা ধানের ভাড়া লাগত ৩ থেকে ৩.৫০ আনা। একটা চার দাড়ির টাপুরে নৌকার ভাড়া ছিল ৫০ টাকার মতো। এই পথটা পৃথিবীর অন্যতম প্রধান আভ্যন্তরীণ নদীপথ হিসাবে সে যুগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। বৎসরে ১০ লক্ষ টন মাল এ পথে পরিবহণ হত যার আর্থিক মূল্য ছিল ৪০ লক্ষ স্টার্লিং(১২১)। মাথাভাঙ্গা, চূর্ণি নদীকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ রাজত্বে উনিশ শতকে একটা উল্লেখযোগ্য নৌপথ গড়ে উঠেছিল। এই পথে নীল, পাট, গুড়, চিনি, কার্পাস শিল্পজাত দ্রব্যাদি পরিবাহিত হত। ১৮২০-২১ খ্রীষ্টাব্দে টোল আদায় করা হচ্ছে ১৫৬৩৪ টাকা ৪ আনা। এই নৌপথ সেদিন প্রশাসনগতভাবে নদীয়া জেলা শাসক নিয়ন্ত্রণ করতেন।(২২)