১১:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৩৪)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • 9

শশাঙ্ক মণ্ডল

শিল্প-বাণিজ্য

তৃতীয় অধ্যায়

ধানচালের বড় ব্যাপারীদের নিজস্ব পরিবহণ ব্যবস্থার অঙ্গ হিসাবে বড় বড় নৌকার মালিকানা তাদের হাতে থাকত । মুর্শিদাবাদের চারটি পরিবার ধানচালের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত এদের আধিপত্যের কাছে নবাব ও পরবর্তী কালে কোম্পানিকে বশ্যতা স্বীকার করতে হয়েছিল। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তুলনামূলকভাবে ভারতের অন্য প্রদেশের তুলনায় বাংলাদেশে অধিকতর স্থিতিশীলতা ছিল। এজন্য বিদেশি বণিকরা বাংলাদেশে বাণিজ্য করার ব্যাপারে বেশি উৎসাহ দেখিয়েছিল।

মুর্শিদকুলি খাঁর মৃত্যু পর্যন্ত (১৭২৭ খ্রীঃ) বাংলাদেশ ছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে an area of good order and good Govt. অবশ্য মারাঠা হাঙ্গামার সময় ৪০-৪৩ খ্রীষ্টাব্দে এই শান্তি বিঘ্নিত হয়েছিল এবং হুগলীনদীর পশ্চিম তীরের ৫/৬ টি জেলার মধ্যে তা সীমাবদ্ধ ছিল। ভাগীরথীর পশ্চিমতীরে মেদিনীপুর হাওড়া হুগলী বিপন্ন হওয়ায় ঐ এলাকার অনেক মানুষ সুন্দরবনের উত্তরাংশের জনবসতিগুলিতে এসে জোটে আশ্রয়ের সন্ধানে।

– সে যুগে জমিদাররা তাদের নিজস্ব এলাকার হাট গঞ্জ কসবাতে শান্তি-শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করত। এবং বাণিজ্যের জন্য তোলা (টোল) আদায় করত। ডায়মন্ডহারবারের নিকট নূরপুরে টোল আদায় কেন্দ্রের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। হুগলী নদীতে ৬৩ জায়গায় এ ধরনের খাজনা আদায়ের চৌকি ছিল। বণিকদের কাছ থেকে কর আদায়ের পরিমাণ ছিল অপেক্ষাকৃত কম। কৃষকদের তাদের উৎপন্ন ফসলের ১/৪ অংশ খাজনা হিসাব দিতে হত কিন্তু বণিকরা শুল্ক দিত ২.৫০ থেকে ৫ শতাংশ। অনেক ক্ষেত্রে অন্তঃশুষ্ক ঘুষ দিয়েই রেহাই পাওয়া যেত।

জমিদাররা সে যুগে নিজেদের গ্রাম বা এলাকার স্বার্থে বড় বড় ব্যাপারী ব্যবসায়ীদের রীতিমত তোয়াজ করে চলত। নানাধরনের সুযোগ সুবিধা ও ছাড় তারা পেত। নবাব দরবারে বার্ষিক কিস্তির টাকা শোধ দেবার সময় ব্যবসায়ীদের কাছে জমিদারদের হাত পাততে হত। অনেক সময় জমিদাররা অসুবিধায় পড়লে নবাব দরবারে যোগাযোগ করানোর জন্য এসব বড় ব্যবসায়ীদের সাহায্য তারা নিত। কিন্তু এটা মনে রাখা দরকার সে যুগে সম্রাট বা নবাবদের ওপর ব্যবসায়ীদের বিশাল প্রভাব ছিল না। উৎপাদন সম্পর্কের সঙ্গে বণিকদের সরাসরি যোগাযোগ না থাকলেও জমিদারদের সঙ্গে বণিকদের মাঝে মাঝে বিরোধ দেখা দিত কিন্তু তা কোন ক্ষেত্রে উচ্চতম পর্যায়ে পৌঁছায়নি।

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৩৪)

১২:০০:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শশাঙ্ক মণ্ডল

শিল্প-বাণিজ্য

তৃতীয় অধ্যায়

ধানচালের বড় ব্যাপারীদের নিজস্ব পরিবহণ ব্যবস্থার অঙ্গ হিসাবে বড় বড় নৌকার মালিকানা তাদের হাতে থাকত । মুর্শিদাবাদের চারটি পরিবার ধানচালের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত এদের আধিপত্যের কাছে নবাব ও পরবর্তী কালে কোম্পানিকে বশ্যতা স্বীকার করতে হয়েছিল। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তুলনামূলকভাবে ভারতের অন্য প্রদেশের তুলনায় বাংলাদেশে অধিকতর স্থিতিশীলতা ছিল। এজন্য বিদেশি বণিকরা বাংলাদেশে বাণিজ্য করার ব্যাপারে বেশি উৎসাহ দেখিয়েছিল।

মুর্শিদকুলি খাঁর মৃত্যু পর্যন্ত (১৭২৭ খ্রীঃ) বাংলাদেশ ছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে an area of good order and good Govt. অবশ্য মারাঠা হাঙ্গামার সময় ৪০-৪৩ খ্রীষ্টাব্দে এই শান্তি বিঘ্নিত হয়েছিল এবং হুগলীনদীর পশ্চিম তীরের ৫/৬ টি জেলার মধ্যে তা সীমাবদ্ধ ছিল। ভাগীরথীর পশ্চিমতীরে মেদিনীপুর হাওড়া হুগলী বিপন্ন হওয়ায় ঐ এলাকার অনেক মানুষ সুন্দরবনের উত্তরাংশের জনবসতিগুলিতে এসে জোটে আশ্রয়ের সন্ধানে।

– সে যুগে জমিদাররা তাদের নিজস্ব এলাকার হাট গঞ্জ কসবাতে শান্তি-শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করত। এবং বাণিজ্যের জন্য তোলা (টোল) আদায় করত। ডায়মন্ডহারবারের নিকট নূরপুরে টোল আদায় কেন্দ্রের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। হুগলী নদীতে ৬৩ জায়গায় এ ধরনের খাজনা আদায়ের চৌকি ছিল। বণিকদের কাছ থেকে কর আদায়ের পরিমাণ ছিল অপেক্ষাকৃত কম। কৃষকদের তাদের উৎপন্ন ফসলের ১/৪ অংশ খাজনা হিসাব দিতে হত কিন্তু বণিকরা শুল্ক দিত ২.৫০ থেকে ৫ শতাংশ। অনেক ক্ষেত্রে অন্তঃশুষ্ক ঘুষ দিয়েই রেহাই পাওয়া যেত।

জমিদাররা সে যুগে নিজেদের গ্রাম বা এলাকার স্বার্থে বড় বড় ব্যাপারী ব্যবসায়ীদের রীতিমত তোয়াজ করে চলত। নানাধরনের সুযোগ সুবিধা ও ছাড় তারা পেত। নবাব দরবারে বার্ষিক কিস্তির টাকা শোধ দেবার সময় ব্যবসায়ীদের কাছে জমিদারদের হাত পাততে হত। অনেক সময় জমিদাররা অসুবিধায় পড়লে নবাব দরবারে যোগাযোগ করানোর জন্য এসব বড় ব্যবসায়ীদের সাহায্য তারা নিত। কিন্তু এটা মনে রাখা দরকার সে যুগে সম্রাট বা নবাবদের ওপর ব্যবসায়ীদের বিশাল প্রভাব ছিল না। উৎপাদন সম্পর্কের সঙ্গে বণিকদের সরাসরি যোগাযোগ না থাকলেও জমিদারদের সঙ্গে বণিকদের মাঝে মাঝে বিরোধ দেখা দিত কিন্তু তা কোন ক্ষেত্রে উচ্চতম পর্যায়ে পৌঁছায়নি।