শশাঙ্ক মণ্ডল
শিল্প-বাণিজ্য
তৃতীয় অধ্যায়
তৎকালে একধরনের কাপড় খাশিদাস (Embroiderd Tunban) মিশর ও তুরস্কে রপ্তানি করা হত এবং সবটাই প্রায় সুন্দরবনের উত্তরাংশের জেলাগুলিতে উৎপাদিত হত। মিশর তুরস্ক প্রভৃতি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি সামরিক বাহিনীর পোশাকের জন্য ঐ কাপড় আমদানি করত। ১৭৯৫-৯৬ এর দিকে ঐ সব দেশের সামরিক বাহিনীর পোষাকের পরিবর্তন করে ব্রিটিশ ধাঁচের পোশাক তারা চালু করল এবং আমাদের দেশের খাশিদাসের রপ্তানি কমে গেল। (১)
১৮২৪ এর পর কার্পাস উৎপাদনও কমে গেল এবং সেই সঙ্গে সুতার উৎপাদন কমে গেল। ১৮২৮ এর পর বিলাতি সুতায় দেশ ছেয়ে গেল। কার্পাসের জমিতে নীল চাষ শুরু হল। বাংলাদেশে এসমায়ে বিভিন্ন সুতার কাজ হলেও সাধারণ তাঁতিরা ৩০ থেকে ৮০ কাউন্টের সুতার ব্যবহার বেশি করত। ১০০-২০০ কাউন্টের সুতা সূক্ষ্ম বস্ত্রাদিতে ব্যবহার করা হত। এই ধরনের কাপড় সাধারণতঃ বিদেশের বাজারের দিকে তাকিয়ে করা হত। বিদেশী সুতার দাম অপেক্ষাকৃত কম দেশি সুতার তুলনায় অনেকক্ষেত্রে ১/৩ থেকে ১/২ কম হয়ে পড়ল।
দিন দিন নানা ধরনের কাপড় তৈরির প্রবণতা কমছে। ১৮৪০ এর দিকে ৩৬ রকমের কাপড় উৎপাদনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে; শাড়ি কাপড়ের নানা নামও লক্ষ করা যাচ্ছে- আগুনপাট, কাসপার্ট, আসমানতারা, হীরামন, নীলাম্বরী, যাত্রাসিদ্ধি, খুঞ্চানেত, মুঞাফুল, অগ্নিফুল, মেঘডুম্বর, মেঘনীল, গঙ্গাজলি, মুক্তামণি, কনকলতা, আনন্দাই, ধূপছায়া, পবনবাহার, লক্ষ্মীবিলাস, বসন্তবাহার, উদয়তারা, বালুচরি। কয়েক দশকের মধ্যে তাঁতশিল্পের ধংসের কাজ সম্পূর্ণ হল। দারিদ্র সমাজজীবনের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল।
তাঁতশিল্পের সঙ্গে যুক্ত শিল্পীরা বেকার শ্রমিকে পরিণত হল এবং জমির দিকে হাত বাড়াল। কৃষিক্ষেত্রে জনসংখ্যার চাপ বাড়ল। পুরানো অতীত ঐতিহ্যসমৃদ্ধ স্বর্গপুরী পরিণত হল হতভাগ্য অশিক্ষিত দারিদ্রপীড়িত মানুষের দেশে। In comparison to its earlier reputation as the paradise of nations East Bengal came to be Known as a land of ignorant and poverty stricken masses. Nafiz Ahmed. Eco. Geo. of East Pak. (ou. P.) Page 104 সমগ্র উনিশ শতক ধরে ধীরে ধীরে তাঁতশিল্পের নাভিশ্বাস দেখা দিল। স্বদেশী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বরিশাল খুলনা যশোর ফরিদপুর ঢাকা ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন প্রান্তে তাঁতশিল্পের ক্ষেত্রে কিছুটা গতির সৃষ্টি হল।