ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
শামানদের মধ্যে অনেকেরই নানা ধরনের গুণ বা কাজের ক্ষমতা লক্ষ্য করা যায়। কেউ খুব ভাল দাই-এর কাজ করে। আবার কেউ খুব জড়িবুটি বা ভেষজ কাজে দক্ষ। আবার কেউ শরীরে হাড় সরে গেলে তা ঠিক করে দেবার কাজেও বেশ পটু। এদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত হলেন ডাক্তার-পুরোহিত। এরা সাধারণ গ্রামবাসীদের মন, শরীর এবং আত্মার ব্যাধিও সারাতে পারেন।
মায়ারা শারীরিক স্বাস্থ্য, রোগকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। কেননা তাদের কাছে শরীর এবং আত্মা প্রায় সমার্থক। সপানমায়া দনএলিখো পানতি-এর মতে শরীরে রোগ আসে অপবিত্র দেবতা বা পূর্বপুরুষদের আত্মার ইচ্ছাকে বহন করে। এই রোগ উপশম কোনো ওষুধ বা ফরমাইসি জড়িবুটি দিয়ে সম্ভব নয়। রোগ সারবে আধ্যাত্মিক মনের সংশ্লেষের মধ্য দিয়ে।
নিউ ইয়র্ক স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বারবারা টেডলক (Barbara Tedlock)-এর অন্য ধরনের এক অভিমত আছে। তিনি মনে করেন রোগ বা ব্যাধি আসলে ঈশ্বর এবং পূবপুরুষদের সেবা করার এক আদেশমাত্র। এই রোগ হল ছয় রকম। সাপ, ঘোড়া, পেটের রোগ, হাড় সরে যাওয়া এবং টাকা হারানো। এইসব রোগ এবং টাকা হারানো রোগীর দৈনন্দিন জীবনে অসুবিধা, সমস্যা নিয়ে আসে।
‘কিচে’ (Quiche) মায়া গোষ্ঠীর মধ্যে জীবনযাত্রার অন্যতম একটি রীতিও খুব লক্ষ্যণীয়।’কিচে’ অঞ্চলে যখন কোনো জমি বিক্রয় করা হয় তখন নতুন জমিদার জমির পুরনো মালিকদের স্মরণ করে। এই স্মরণ অনুষ্ঠানকে গাম্ভীর্য দেওয়ার জন্য সাম্প্রতিক কোনো তীর্থস্থান বা মন্দিরে প্রার্থনা করা হয়। এই স্থান এবং মন্দিরতর স্থান নির্বাচন অঞ্চলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঠিক করা হয়। এক্ষেত্রে পাহাড়, গুহা, হ্রদ-এর অগ্রাধিকার থাকে।
টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের লিন্ডা সিলে (Linda Schele) মনে করেন যে ওয়ারাব আলজা (Warab Alja) শব্দটি ক্লাসিক মায়া যুগের ওয়েবিল (Waybil) শব্দ থেকে এসেছে। Waybil শব্দটির অর্থ হল ঘুমন্ত বাড়ি (Sleeping House)। ওয়েবিলব (Waybilob) ক্লাসিক যুগের খুব পরিচিত বিষয়। ১৯৮৯ সালে গুয়াতেমালা ইনস্টিটিউট অব অ্যানথ্রপলজি অ্যান্ড হিস্ট্রির গবেষক হুয়ান পেদ্রো মান্দার এক বিরাট এলাকা খনন করার সময় এই ধরনের মিনার (Shrine)-এর সন্ধান পান।
মায়াদের সাম্প্রতিক ধর্মীয় আচার-বিচার পর্যবেক্ষণ করে পুরাতাত্ত্বিক এবং নৃতাত্ত্বিকগণ কিছু সমালোচনা সুলভ জ্ঞান অর্জন করেছেন। এইসব পুরাতাত্ত্বিক অন্বেষণ থেকে একথা বলা যায় যে ক্লাসিক মায়ায়ুগের জীবনযাত্রার অনেক কিছু এখনো জানার সুযোগ আছে।
(চলবে)