০৮:০২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫
তিন বিপর্যয়ের যৌথ আঘাতেই কি পৃথিবী বদলে গেল ২০২৫-এর সেরা টিভি শো: কূটনীতি, যুদ্ধ, রহস্য ও সম্পর্কের অদ্ভুত সব গল্প মানুষকে খুশি রাখার ফাঁদ: কেন আমরা ‘হ্যাঁ’ বলতে বাধ্য হই এবং মুক্তির পথ কোথায় দারিয়াগঞ্জের মুঘল প্রাচীর ঃ শেষ প্রহরীর আর্তনাদ তানজানিয়ার সহিংস নির্বাচনেই অর্থনীতির ওপর ঘনিয়ে আসছে অনিশ্চয়তা পুরুষরা কি সত্যিই বেশি কষ্টে ভোগে? ‘ম্যান ফ্লু’ নিয়ে নতুন বৈজ্ঞানিক রহস্য উন্মোচন আফ্রিকার নীল-কার্বন বিপ্লব: উপকূল রক্ষায় কার্বন ক্রেডিট কি নতুন আশা? লিসার সাহসী লুক নিয়ে নতুন জল্পনা: লুই ভুঁইতোঁ ইভেন্টে নজর কাড়লেন কে-পপ তারকা মিষ্টি পানীয় কর থেকে প্লাস্টিক নিষেধাজ্ঞা—২০২৬ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসছে ছয়টি নতুন নিয়ম দুবাইয়ে মৃত্যুবরণ করলেন আমিরাতপ্রবাসী ভারতীয় ‘সুপারম্যান’ দেবেশ মিস্ত্রি

জম্মু-কাশ্মীরে জয়ী ফারুক আবদুল্লাহ-কংগ্রেসের জোট, হরিয়ানায় তৃতীয়বার বিজেপি সরকার

  • Sarakhon Report
  • ১১:৩১:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪
  • 58

ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় জয়ী হয়েছে ফারুক আবদুল্লাহর দল ন্যাশনাল কনফারেন্স ও কংগ্রেসের জোট। হরিয়ানাতে বিজেপি তৃতীয়বারের জন্য সরকার গড়তে চলেছে।

মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া দুই বিধানসভা ভোটের প্রায় সব আসনের চূড়ান্ত ফলাফলই সন্ধ্যায় চলে এসেছে। তবে ভারতীয় সময় রাত নটাতেও হরিয়ানার একটি আসনের চূড়ান্ত ফল এখনও আসে নি।

দুটি বিধানসভাতেই মোট আসন সংখ্যা ৯০টি করে।

জম্মু-কাশ্মীরে ন্যাশনাল কনফারেন্স ও কংগ্রেসের জোট পেয়েছে ৪৮টি আসন। বিজেপি পেয়েছে ২৯টি।

কাশ্মীরের জন্য বিশেষ সাংবিধানিক রক্ষা কবচ – ৩৭০ ধারা বিলোপের আগে যিনি ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, সেই মেহবুবা মুফতির দল পিডিপি খুব খারাপ ফল করেছে। তারা মাত্র তিনটি আসন পেয়েছে। আম আদমি পার্টি ও সিপিআইএম একটি করে আসন পেয়েছে। নির্দলীয় সাতটি এবং অন্য একটি রাজ্যভিত্তিক দল একটি আসনে জিতেছে।

হরিয়ানায় বিজেপি পেয়েছে ৪৮টি আসন, কংগ্রেস ৩৬টি আসনে জিতেছে। লোকদল দুটি ও নির্দলীয় প্রার্থীরা তিনটি আসন পেয়েছেন।

এই প্রথমবার হরিয়ানায় কোনও একটি দল একটানা তৃতীয়বার সরকার গড়তে চলেছে।

বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলি অবশ্য জানিয়েছিল যে জম্মু-কাশ্মীরে কোনও দল বা জোটই স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না, অন্যদিকে হরিয়ানায় কংগ্রেস ক্ষমতায় আসবে এমনটাও জানিয়েছিল বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলি।

ওই সমীক্ষা সম্পূর্ণভাবে ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

জম্মু-কাশ্মীরে ১০ বছর পরে বিধানসভার ভোট হল

জম্মু-কাশ্মীরে ১০ বছর পরে ভোট

জম্মু-কাশ্মীরের যখন রাজ্যের মর্যাদা ছিল, সেখানে শেষবার ভোট হয়েছিল ২০১৪ সালে। বিশেষ সাংবিধানিক রক্ষাকবচ ২০১৯ সালে তুলে নেওয়ার পরে আর বিধানসভা নির্বাচন হয় নি সেখানে। তবে স্থানীয় ও লোকসভার ভোট নেওয়া হয়েছিল বর্তমানে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলটিতে।

জম্মু ও কাশ্মীরে তিন দফায় ভোট নেওয়া হয়েছিল, গড়ে ৬৩ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে।

যদিও ন্যাশনাল কনফারেন্সের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হয়েছিল, তবে কংগ্রেসের জেতা আসনের সংখ্যা দেখে বোঝা যাচ্ছে যে তারা সহযোগী দলের ভূমিকাতেই থেকেছে।

নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে যে জম্মুর হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলিতে বিজেপি জয়ী হয়েছে আর কাশ্মীর উপত্যকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলিতে ন্যাশনাল কনফারেন্স জোট জয়ী হয়েছে বেশি সংখ্যায়। অঞ্চল ও ধর্মের ভিত্তিতেই যে ভোট ভাগ হয়েছে, সেটাও বেশ বোঝা যাচ্ছে।

সাম্বা, উধমপুর, কাঠুয়ার মতো জম্মুর হিন্দু অধ্যুষিত জেলাগুলিতে বিজেপি বেশিরভাগ আসন পেয়েছে। নির্বাচনি প্রচারের সময় বিজেপি এই জেলাগুলিতে বেশি জোর দিয়েছিল বলে বিবিসির সহযোগী সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে এখানে চারটি জনসভা করেছেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ১৪টি জনসভা করেছেন।

অন্যদিকে জম্মুর মুসলিম জনসংখ্যা অধ্যুষিত রাজৌরি ও পুঞ্চ জেলায় বিজেপি মুসলিম প্রার্থী দিয়েছিল, কিন্তু ফলাফলে তার খুব একটা প্রভাব পড়েনি বলেই বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন।

সাংবাদিক তারিক বাট বলছেন, “বিজেপি মুসলিম অধ্যুষিত আসনগুলিতে মুসলিম প্রার্থীদের টিকিট দিয়েছিল এই ভেবে যে তাদের হিন্দু ভোট ব্যাংক তো অক্ষত থাকবেই, এর সঙ্গে প্রার্থী মুসলমান হওয়ার কারণে মুসলমান ভোটাররাও তাকেই ভোট দেবেন। কিন্তু ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে মুসলিম ভোটাররা বিজেপিকে প্রত্যাখ্যানই করেছেন।”

জম্মু অঞ্চলে এগিয়ে থেকেছে বিজেপি

৩৭০ ধারার প্রভাব

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ৩৭০ ধারা বিলোপের পর থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক, চাকরি ও জমির মালিকানা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।

তারিক বাট বলছেন, “কাশ্মীর অঞ্চলের ফলাফল থেকে যে বার্তাটি উঠে আসছে তা হলো মানুষ ৩৭০ অপসারণের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। ন্যাশনাল কনফারেন্সের প্রতি মানুষের আস্থা রয়েছে, সেটাও দেখা গেল।“

ন্যাশনাল কনফারেন্স জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা ফিরে পেতে লড়াই করার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জম্মু-কাশ্মীরের নির্বাচনের আগে ন্যাশনাল কনফারেন্স বা কংগ্রেসের সমর্থনে কোনও ঢেউ ওঠেনি। কিন্তু ফলাফল স্পষ্টতই এই জোটের দিকে গেছে।

এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তারিক বাট বলছেন, “জম্মু ও কাশ্মীরে যে পরিবর্তন ঘটেছে, সেই পরিবেশে, কেবল একটি দলই বিজেপির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল – তা হল ন্যাশনাল কনফারেন্স।

তিনি বলছেন যে ন্যাশনাল কনফারেন্সের জন্য হয়তো কোনও ‘ওয়েভ’ ছিল না, কিন্তু তাদের সম্পর্কে মানুষের ধারণা ছিল ৩৭০ ধারার ইস্যুটা হয়তো তারাই তুলে ধরবে। এ কারণেই তাদের ফলাফল এত ভাল হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিবিসির সহযোগী সংবাদদাতা মজিদ জাহাঙ্গীর বলছেন, “ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতারাও ভাবতে পারেন নি যে কাশ্মীর উপত্যকায় দল ৪০টির থেকেও বেশি আসন পাবে।“

তার কথায়, “মনে হচ্ছে ভোটাররা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, ন্যাশনাল কনফারেন্স যদি আগে কোনও ভুল করে থাকে, সেটা ভুলে গিয়েই দলটিকে সমর্থন করতে হবে। একটা বার্তা স্পষ্ট, ভোটাররা কাশ্মীর উপত্যকা থেকে বিজেপিকে সরিয়ে দিতে চেয়েছেন।”

ভিনেশ ফোগট – অলিম্পিকসে ভারতের কুস্তীগির কংগ্রেসের হয়ে লড়ে জয়ী হয়েছেন কংগ্রেসের টিকিটে

কোন ম্যাজিকে বিজেপি জিতল হরিয়ানাতে

হরিয়ানাতে এবার বিজেপি পরাজিত হওয়ার কথা বিভিন্ন বুথ ফেরত সমীক্ষা যেমন জানিয়েছিল, তেমনই বিজেপি বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও সেরকমটাই আশা করেছিল।

ওই রাজ্যের কৃষকদের ক্ষোভ বা সেনাবাহিনীতে কয়েক বছরের জন্য নিয়োগ করার যে ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্প চালু হয়েছে, সেটা – এরকম অনেক কারণেই বিজেপির প্রতি মানুষের অসন্তোষের কথা বলা হচ্ছিল।

কিন্তু ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে সেই সব ফ্যাক্টর কাজ করে নি।

প্রবীণ সাংবাদিক হেমন্ত আত্রি মনে করেন, “এই ফলাফলের পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ বিজেপির মাইক্রো-ম্যানেজমেন্ট। হরিয়ানায় বিজেপি সুচতুর ভাবে অ-জাঠ ভোট নিজেদের দিকে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।“

আরেক বিশ্লেষক আদেশ রাওয়ালের মতে, “হরিয়ানায় প্রায় ২২ শতাংশ জাঠ ভোট রয়েছে, যারা নানা বিষয় নিয়েই সোচ্চার হয়। অ-জাঠরা ভেবেছিল যে কংগ্রেস জিতলে জাঠ নেতা ভূপিন্দর সিং হুডা হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী হবেন, তাই তারা কংগ্রেসর বিপক্ষে বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন।“

“এবার হরিয়ানায় বিধানসভা নির্বাচনে জাঠ ও অ-জাতের ভিত্তিতে ভোট ভাগ হয়েছে, যা সরাসরি কংগ্রেসের পরাজয়ের কারণ হয়েছে,” মন্তব্য মি. রাওয়ালের।

আবার কংগ্রেসের অন্তর্দন্দ্বও দলটির পরাজয়ের কারণ বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক।

হেমন্ত আত্রি মনে করেন, হরিয়ানায় দলাদলি ও ভুল টিকিট বণ্টনের কারণে কংগ্রেস প্রায় ১৩টি আসন হারিয়েছে। এবার হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ২৫ টি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করেছিল। এর মধ্যে ১৬ জন প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।

অন্যদিকে কংগ্রেস তাদের আগের বারের সব জয়ী এমএলএ-কেই প্রার্থী করেছিল। তাদের অর্ধেকেরও বেশি প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন।

বিবিসি নিউজ বাংলা

জনপ্রিয় সংবাদ

তিন বিপর্যয়ের যৌথ আঘাতেই কি পৃথিবী বদলে গেল

জম্মু-কাশ্মীরে জয়ী ফারুক আবদুল্লাহ-কংগ্রেসের জোট, হরিয়ানায় তৃতীয়বার বিজেপি সরকার

১১:৩১:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪

ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় জয়ী হয়েছে ফারুক আবদুল্লাহর দল ন্যাশনাল কনফারেন্স ও কংগ্রেসের জোট। হরিয়ানাতে বিজেপি তৃতীয়বারের জন্য সরকার গড়তে চলেছে।

মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া দুই বিধানসভা ভোটের প্রায় সব আসনের চূড়ান্ত ফলাফলই সন্ধ্যায় চলে এসেছে। তবে ভারতীয় সময় রাত নটাতেও হরিয়ানার একটি আসনের চূড়ান্ত ফল এখনও আসে নি।

দুটি বিধানসভাতেই মোট আসন সংখ্যা ৯০টি করে।

জম্মু-কাশ্মীরে ন্যাশনাল কনফারেন্স ও কংগ্রেসের জোট পেয়েছে ৪৮টি আসন। বিজেপি পেয়েছে ২৯টি।

কাশ্মীরের জন্য বিশেষ সাংবিধানিক রক্ষা কবচ – ৩৭০ ধারা বিলোপের আগে যিনি ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, সেই মেহবুবা মুফতির দল পিডিপি খুব খারাপ ফল করেছে। তারা মাত্র তিনটি আসন পেয়েছে। আম আদমি পার্টি ও সিপিআইএম একটি করে আসন পেয়েছে। নির্দলীয় সাতটি এবং অন্য একটি রাজ্যভিত্তিক দল একটি আসনে জিতেছে।

হরিয়ানায় বিজেপি পেয়েছে ৪৮টি আসন, কংগ্রেস ৩৬টি আসনে জিতেছে। লোকদল দুটি ও নির্দলীয় প্রার্থীরা তিনটি আসন পেয়েছেন।

এই প্রথমবার হরিয়ানায় কোনও একটি দল একটানা তৃতীয়বার সরকার গড়তে চলেছে।

বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলি অবশ্য জানিয়েছিল যে জম্মু-কাশ্মীরে কোনও দল বা জোটই স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না, অন্যদিকে হরিয়ানায় কংগ্রেস ক্ষমতায় আসবে এমনটাও জানিয়েছিল বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলি।

ওই সমীক্ষা সম্পূর্ণভাবে ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

জম্মু-কাশ্মীরে ১০ বছর পরে বিধানসভার ভোট হল

জম্মু-কাশ্মীরে ১০ বছর পরে ভোট

জম্মু-কাশ্মীরের যখন রাজ্যের মর্যাদা ছিল, সেখানে শেষবার ভোট হয়েছিল ২০১৪ সালে। বিশেষ সাংবিধানিক রক্ষাকবচ ২০১৯ সালে তুলে নেওয়ার পরে আর বিধানসভা নির্বাচন হয় নি সেখানে। তবে স্থানীয় ও লোকসভার ভোট নেওয়া হয়েছিল বর্তমানে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলটিতে।

জম্মু ও কাশ্মীরে তিন দফায় ভোট নেওয়া হয়েছিল, গড়ে ৬৩ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে।

যদিও ন্যাশনাল কনফারেন্সের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হয়েছিল, তবে কংগ্রেসের জেতা আসনের সংখ্যা দেখে বোঝা যাচ্ছে যে তারা সহযোগী দলের ভূমিকাতেই থেকেছে।

নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে যে জম্মুর হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলিতে বিজেপি জয়ী হয়েছে আর কাশ্মীর উপত্যকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলিতে ন্যাশনাল কনফারেন্স জোট জয়ী হয়েছে বেশি সংখ্যায়। অঞ্চল ও ধর্মের ভিত্তিতেই যে ভোট ভাগ হয়েছে, সেটাও বেশ বোঝা যাচ্ছে।

সাম্বা, উধমপুর, কাঠুয়ার মতো জম্মুর হিন্দু অধ্যুষিত জেলাগুলিতে বিজেপি বেশিরভাগ আসন পেয়েছে। নির্বাচনি প্রচারের সময় বিজেপি এই জেলাগুলিতে বেশি জোর দিয়েছিল বলে বিবিসির সহযোগী সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে এখানে চারটি জনসভা করেছেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ১৪টি জনসভা করেছেন।

অন্যদিকে জম্মুর মুসলিম জনসংখ্যা অধ্যুষিত রাজৌরি ও পুঞ্চ জেলায় বিজেপি মুসলিম প্রার্থী দিয়েছিল, কিন্তু ফলাফলে তার খুব একটা প্রভাব পড়েনি বলেই বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন।

সাংবাদিক তারিক বাট বলছেন, “বিজেপি মুসলিম অধ্যুষিত আসনগুলিতে মুসলিম প্রার্থীদের টিকিট দিয়েছিল এই ভেবে যে তাদের হিন্দু ভোট ব্যাংক তো অক্ষত থাকবেই, এর সঙ্গে প্রার্থী মুসলমান হওয়ার কারণে মুসলমান ভোটাররাও তাকেই ভোট দেবেন। কিন্তু ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে মুসলিম ভোটাররা বিজেপিকে প্রত্যাখ্যানই করেছেন।”

জম্মু অঞ্চলে এগিয়ে থেকেছে বিজেপি

৩৭০ ধারার প্রভাব

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ৩৭০ ধারা বিলোপের পর থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক, চাকরি ও জমির মালিকানা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।

তারিক বাট বলছেন, “কাশ্মীর অঞ্চলের ফলাফল থেকে যে বার্তাটি উঠে আসছে তা হলো মানুষ ৩৭০ অপসারণের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। ন্যাশনাল কনফারেন্সের প্রতি মানুষের আস্থা রয়েছে, সেটাও দেখা গেল।“

ন্যাশনাল কনফারেন্স জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা ফিরে পেতে লড়াই করার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জম্মু-কাশ্মীরের নির্বাচনের আগে ন্যাশনাল কনফারেন্স বা কংগ্রেসের সমর্থনে কোনও ঢেউ ওঠেনি। কিন্তু ফলাফল স্পষ্টতই এই জোটের দিকে গেছে।

এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তারিক বাট বলছেন, “জম্মু ও কাশ্মীরে যে পরিবর্তন ঘটেছে, সেই পরিবেশে, কেবল একটি দলই বিজেপির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল – তা হল ন্যাশনাল কনফারেন্স।

তিনি বলছেন যে ন্যাশনাল কনফারেন্সের জন্য হয়তো কোনও ‘ওয়েভ’ ছিল না, কিন্তু তাদের সম্পর্কে মানুষের ধারণা ছিল ৩৭০ ধারার ইস্যুটা হয়তো তারাই তুলে ধরবে। এ কারণেই তাদের ফলাফল এত ভাল হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিবিসির সহযোগী সংবাদদাতা মজিদ জাহাঙ্গীর বলছেন, “ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতারাও ভাবতে পারেন নি যে কাশ্মীর উপত্যকায় দল ৪০টির থেকেও বেশি আসন পাবে।“

তার কথায়, “মনে হচ্ছে ভোটাররা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, ন্যাশনাল কনফারেন্স যদি আগে কোনও ভুল করে থাকে, সেটা ভুলে গিয়েই দলটিকে সমর্থন করতে হবে। একটা বার্তা স্পষ্ট, ভোটাররা কাশ্মীর উপত্যকা থেকে বিজেপিকে সরিয়ে দিতে চেয়েছেন।”

ভিনেশ ফোগট – অলিম্পিকসে ভারতের কুস্তীগির কংগ্রেসের হয়ে লড়ে জয়ী হয়েছেন কংগ্রেসের টিকিটে

কোন ম্যাজিকে বিজেপি জিতল হরিয়ানাতে

হরিয়ানাতে এবার বিজেপি পরাজিত হওয়ার কথা বিভিন্ন বুথ ফেরত সমীক্ষা যেমন জানিয়েছিল, তেমনই বিজেপি বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও সেরকমটাই আশা করেছিল।

ওই রাজ্যের কৃষকদের ক্ষোভ বা সেনাবাহিনীতে কয়েক বছরের জন্য নিয়োগ করার যে ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্প চালু হয়েছে, সেটা – এরকম অনেক কারণেই বিজেপির প্রতি মানুষের অসন্তোষের কথা বলা হচ্ছিল।

কিন্তু ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে সেই সব ফ্যাক্টর কাজ করে নি।

প্রবীণ সাংবাদিক হেমন্ত আত্রি মনে করেন, “এই ফলাফলের পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ বিজেপির মাইক্রো-ম্যানেজমেন্ট। হরিয়ানায় বিজেপি সুচতুর ভাবে অ-জাঠ ভোট নিজেদের দিকে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।“

আরেক বিশ্লেষক আদেশ রাওয়ালের মতে, “হরিয়ানায় প্রায় ২২ শতাংশ জাঠ ভোট রয়েছে, যারা নানা বিষয় নিয়েই সোচ্চার হয়। অ-জাঠরা ভেবেছিল যে কংগ্রেস জিতলে জাঠ নেতা ভূপিন্দর সিং হুডা হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী হবেন, তাই তারা কংগ্রেসর বিপক্ষে বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন।“

“এবার হরিয়ানায় বিধানসভা নির্বাচনে জাঠ ও অ-জাতের ভিত্তিতে ভোট ভাগ হয়েছে, যা সরাসরি কংগ্রেসের পরাজয়ের কারণ হয়েছে,” মন্তব্য মি. রাওয়ালের।

আবার কংগ্রেসের অন্তর্দন্দ্বও দলটির পরাজয়ের কারণ বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক।

হেমন্ত আত্রি মনে করেন, হরিয়ানায় দলাদলি ও ভুল টিকিট বণ্টনের কারণে কংগ্রেস প্রায় ১৩টি আসন হারিয়েছে। এবার হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ২৫ টি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করেছিল। এর মধ্যে ১৬ জন প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।

অন্যদিকে কংগ্রেস তাদের আগের বারের সব জয়ী এমএলএ-কেই প্রার্থী করেছিল। তাদের অর্ধেকেরও বেশি প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন।

বিবিসি নিউজ বাংলা