শশাঙ্ক মণ্ডল
লবণ
তৃতীয় অধ্যায়
এ ধরনের জাল কারবার তিনি অন্তত তিনশ জনের ক্ষেত্রে ধরে ফেলেছেন এবং ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও একজন মাহিন্দরকে লবণ উৎপাদনে নিয়োজিত করা যায়নি। চাষিদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে লবণের মাহিন্দার হবার ব্যাপারে বাঁধা সৃষ্টি হচ্ছে-এ ব্যাপারে সরকারি যন্ত্র নীরব থেকে এদেরকে উৎসাহিত করছে।
এসময় লক্ষ করা যাচ্ছে চাষিরা কিছু সংগঠিতভাবে মালঙ্গীদের বাঁধা দিচ্ছে অগ্রিম বিলি করার ব্যাপারে। ১৭৯৩ এর ৬ই মার্চ কয়েকজন চাষি নদীয়ার জেলাশাসক মিঃ স্পোর্টসউড কে অভিযোগ জানাচ্ছে (২০) সাদিগাছি গ্রামে (বর্তমান হাসনাবাদ থানার ভেবিয়ার নিকটে) জনৈক মালঙ্গী পিওনের মারফৎ জোর করে তাদের অগ্রিম দেবার চেষ্টা করছে। ১৭৯৫ এর মধ্যে রায়মঙ্গল এলাকার লবণ উৎপাদনের ক্ষেত্রে নানা বাধা বিপত্তির ফলে সঙ্কট ঘনিয়ে এল। লবণ এজেন্টের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ জানানো হল সরকারি কর্তৃপক্ষদের তাদের স্বার্থরক্ষার জন্য, যাতে সরকারের অর্থ সংগ্রহের এই স্থির নিশ্চিত ব্যবস্থার কোন ক্ষতি না হয়। কিন্তু ইতিমধ্যে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে ধান এবং নীলের চাষ বাড়ছে।
সেই সঙ্গে চিনি উৎপাদনের জন্য আখের চাষও বাড়ছে। অপেক্ষাকৃতভাবে আর্থিক লাভ একটু বেশি চাষিদের হাতে আসছে। নতুন নতুন বনাঞ্চল গড়ে তোলার প্রয়োজনে রায়তরা জমির লোভে সেদিকে হাত বাড়াচ্ছে। লবণ শিল্পের ক্ষেত্রে সঙ্কট লক্ষ করা গেল। ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে রায়মঙ্গল সল্ট এজেন্সি নদীয়া জেলা থেকে পৃথক করে ২৪ পরগনা সল্ট এজেন্সির সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হল।
কোম্পানির রাজত্ব বাংলাদেশে শুরু হবার সময় থেকে লবণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিখ্যাত ব্যবসায়ীরা-গোকুল ঘোষাল, মহারাজ নন্দকুমার, কাশিমবাজার রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতা বেনিয়ান কান্তবাবু প্রমুখ ব্যক্তিরা। হিজলী মেদিনীপুর সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চলের লবণ ব্যবসার সঙ্গে এঁরা যুক্ত ছিলেন। কোম্পানির রাজত্বের প্রথম দশকে লবণের মাধ্যমে কোম্পানির রাজস্ব বেড়ে গেল, কিন্তু ১৭৭৫-৭৬ এর পর তা কমতে থাকে। অনেকে কারণ হিসাবে ব্যাপক দুর্নীতির কথা উল্লেখ করেছেন এবং ছিয়াত্তরের মন্বন্তর লবণ উৎপাদনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। এ সমযে লবণের বিক্রয়মূল্য কম হতে দেখা গেল। চাহিদার থেকে বাজারে যোগান বেশি।
অনেক বেআইনি মাল বাজারে এসে যাচ্ছে তা লক্ষ করা যাচ্ছিল। ১৭৭৯ খ্রীষ্টাব্দে কলকাতার বাজারে পূর্বের বছরে ১০০ মণ লবণের দাম ১০০ টাকা কমে ৮৭ টাকা হল এরই পাশাপাশি লবণের উৎপাদন ব্যয় বাড়ছিল। এ সময়ে কয়েকবছরের পুরানো গুদামজাত মাল বাজারে এসেছে মারাঠা অধিকৃত এলাকা থেকে এবং মাদ্রাজ বন্দরের সস্তা দামের লবণ বাজারে আসায় লবণের দাম কমে গেল। (১৮)