শশাঙ্ক মণ্ডল
লবণ
তৃতীয় অধ্যায়
এ প্রসঙ্গে স্মরণীয় মাদ্রাজ উপকূলে সূর্যতাপে তৈরি খারকুচ লবণ বাংলাদেশের লবণের তুলনায় দামে অনেক সস্তা ছিল। বাংলায় লবণ তৈরি হত লবণ জল জ্বালিয়ে এই পন্থায় লবণের উৎপাদন ব্যয় আপেক্ষাকৃত বেশি পড়ত। মাদ্রাজের লবণ শিল্প গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল জাহাজি মালিকরা। কলকাতা বন্দর থেকে এরা মাল নিয়ে যেত মাদ্রাজ এবং দক্ষিণ- ভারতের বিভিন্ন বন্দরে। মাল খালাস করে ফেরার সময় অনেক কম ভাড়ায় জাহাজে ঐ লবণ কলকাতায় পৌঁছে দিত। (২৯)
উনিশ শতকের শুরুতে লবণ বাণিজ্য পরিচালনার জন্য কোম্পানি ছয়টি কেন্দ্র বা এজেন্সি গড়ে তুলেছিল। হিজলী তমলুক বাগুণ্ডী বারুইপুর বাখরগঞ্জ ও পরবর্তীকালে চট্টগ্রামে এজেন্সি গড়ে তোলা হলেও তার উৎপাদন ছিল খুবই সামান্য। জ্বালানির সঙ্কট এবং জমি বেশি করে চাষের আওতায় চলে যাওয়ায় লবণ উৎপাদনে চট্টগ্রাম বেশি সাফল্য দেখাতে পারেনি। ১৮৫৭ খ্রীষ্টাব্দের দিকে সমগ্র বাংলার লবণ উৎপাদন ছিল ৪০ লক্ষ মণ। হিজলীর উৎপাদন এ সময়ে ছিল ১০২৮৩৫ মণ। হিজলী বিভিন্ন সময়ে ৮ থেকে ১১ লক্ষ মণ উৎপাদন করেছে। হিজলী তমলুক একত্রে ধরলে বাংলার অর্ধেক লবণ এখানে উৎপাদিত হত।
They were capable of supplying half the demand of Bengal at that time when monopoly was abandoned and unrestricted importation of cheap foreign salt began.’ (0)
এ সময়ে বারুইপুর সল্ট এজেন্সির অধীনে হাড়োয়া, গোপালপুর, রানিগাছি, কুলটি, ভাঙর, ক্যানিং, মাতলা, রাজারহাট, ডায়মন্ডহারবার, সাগরদ্বীপ, গড়িয়া, সোনারপুর, বালিগঞ্জ প্রভৃতি লবণ চৌকিগুলিতে তিন থেকে সাড়ে তিনলক্ষ মণ লবণ উৎপাদন হত। আর এসময়ে বসিরহাটের বাগুন্ডী সল্ট এজেন্সির চৌকিগুলিতে লবণ উৎপাদন হচ্ছে ৪ থেকে ৫ লক্ষ মণ। ১৭৮০ খ্রীষ্টাব্দে ৬ই অক্টোবর হেস্টিংস লবণের ব্যাপারে নতুন পদ্ধতি চালু করেন কম্পট্রলারের অধীনে সল্ট এজেন্ট এর পদ সৃষ্টি করা হল এবং মালঙ্গীদের সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব এজেন্টের হাতে ছেড়ে দেওয়া হল। এজেন্টের কাছ থেকে লবণ উৎপাদনের জন্য অগ্রিম দাদন নিত মালঙ্গীরা এবং তাদের উৎপাদিত লবণ এজেন্টকে দিতে হত। এভাবে ১৭৭২ এর ইজারাদারি প্রথার অবলুপ্তি ঘটানো হল।
সরকার লবণ উৎপাদন এবং বিক্রয়ের একচেটিয়া অধিকার গ্রহণ করলেন। ১৭৮৪-৮৫ খ্রীষ্টাব্দে এই পদ্ধতির মধ্য দিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আয় হল ৬২৫৭৪৭ পাউন্ড এবং নিঃসন্দেহে ভূমি রাজস্বের পরেই এর স্থান। ১৭৯৩ এর ১৫ই মার্চ থেকে কম্পট্রলারের পরিবর্তে ‘বোর্ড অব ট্রেড’ এর অধীনে লবণ বাণিজ্যকে নিয়ে আসা হল। কিন্তু এর মধ্যে বাংলাদেশের ১৭৬ এর মন্বন্তরের প্রভাব লবণ শিল্পের ওপর পড়েছে। ১৭৬৯ খ্রীস্টাব্দে যশোর জেলার ১৫৫৯টি লবণ তৈরির এলাকা ছিল-মন্বস্তরের পরের বছর ১০২৯ টিতে কাজ হল। বাকি জায়গাগুলিতে লোকের অভাবে কাজ বন্ধ হল। ১৭৭১ খ্রীষ্টাব্দে বেড়ে গিয়ে ১১০০ তে পরিণত হল। এই এলাকায় ১১৭৬ বাংলা সালে লবণ তৈরি হয়েছিল ১.১৫৫৭০ মণ এবং এই উৎপাদন ছিল মন্বন্তরের পূর্ব-বছরের। কিন্তু মন্বন্তরের বছরে তা কমে দাঁড়াল ৪৩৯৫১ মণ।