১০:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৫২)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪
  • 21
শশাঙ্ক মণ্ডল
 লবণ

তৃতীয় অধ্যায়

লর্ড কর্নওআলিস অবশ্য সীমাবদ্ধ কিছু এলাকায় নীলামের ব্যবস্থা করেছিলেন- বণিকদের একচেটিয়া ব্যবসা খর্ব করার জন্য ১৮৩৩ খ্রীষ্টাব্দে এই নীলাম প্রথা রদ করা হল। লবণ উৎপাদন এবং হোলসেল্ ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রয়ের ব্যবস্থার দায়িত্ব দেওয়া হল Board of Salt & Opium এর অপর। এরা লবণ উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন সল্ট এজেন্সি পরিচালনা করত। দীর্ঘকাল পর্যন্ত এই ব্যবস্থা চালু ছিল কিন্তু ইতিমধ্যে জ্বালানি সঙ্কট নতুন নতুন এলাকায় কৃষির প্রচলন এবং সেই সঙ্গে সরকার দেখলেন বিদেশি লবণ আমদানির মধ্য দিয়ে যে টাকা আয় হবে তা অভ্যন্তরীণ লবণ উৎপাদন ও বন্টনের মধ্য দিয়ে আয়ের সমান। ইংলন্ডে তখন লিভারপুল ও অন্যত্র লবণের কারখানা গড়ে উঠেছে জাহাজি মালিকদের স্বার্থ এর সঙ্গে জড়িত ছিল।
পরাধীন ভারত হয়ে দাঁড়ায় ইংলন্ডের কলকারখানায় উৎপাদিত পণ্য বিপণনের উর্বর ক্ষেত্র। সুতরাং স্বদেশি লবণ শিল্প দারুণ ভাবে মার খেল। উনিশ শতকের শেষের দিকে এই শিল্পের মৃত্যু-লক্ষণ পরিস্ফুট হল। তবে দীর্ঘকাল লবণ আইন টিকে থাকল। আমাদের দেশের মানুষ ঘর থেকে এক পা ফেলে মাটি নিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় লবণ সে তৈরি করতে পারবে না-সে ইংল্যাণ্ডের লিভারপুলের লবণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে বাধ্য হল। নুন আনতে পাস্তা ফুরোয় যে দেশের অধিকাংশ মানুষের সে দেশ লবণের অধিকার থেকে বঞ্চিত হল- যা অতি সহজে আমাদের দেশে উৎপাদিত হতে পারে।
২৪ পরগনার সন্ট কমিশনারের নেতৃত্বে উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে সুন্দরবনের বর্তমান বসিরহাট, ডায়মন্ডহারবার, আলিপুর মহকুমাসহ খুলনা জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের লবণ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রিত করার জন্য বসিরহাটের বাগুন্ডি এবং বারুইপুরে লবণ চৌকিগুলির সুপারিনটেনডেন্টের অফিস ছিল। ১৮২২ খ্রীষ্টাব্দে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ২৪ পরগনার লবণের সেরেস্তাদার হয়েছিলেন। পরে Board of Customs Salt & Opium-এর দেওয়ান হয়েছিলেন- এ পদ সে যুগে খুবই সম্মানের ছিল।
১৮৩৩ এ হাড়োয়ার বালান্দা আড়ং এর মালঙ্গীরা এ এলাকার লবণ দারোগা গোপীমোহন মল্লিক এবং দ্বারকানাথের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন-দ্বারকানাথকে ঘুষ দিতে হবে তাই ‘দ্বারকানাথ বন্দোবস্ত’ নামে মালঙ্গীদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করছে লবণ চৌকির দারোগা গোপীমোহন মল্লিক। বারাসাতের ম্যাজিস্ট্রেট হার্ভার্ট মিলটন তদন্ত করে মালঙ্গীদের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। পরবর্তী কলে Court of Directors এ বিষয়ে তদন্ত করে এবং অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে অভিযোগ থেকে রেহাই পেলেন স্বারকানাথ।
বাগুন্ডীর সুপারের অফিস থেকে ১১ টি লবণ চৌকি পর্যবেক্ষণ করা হত। প্রতিটি চৌকিতে একজন লবণ দারোগা দু’জন পাইক এবং একজন পিওন থাকত। এরা ঐ চৌকিতে বেআইনি লবণ তৈরি হচ্ছে কিনা তার খোঁজ খবর নিত এবং লবণ উৎপাদন এবং বিক্রয়ের ব্যাপারে ডিলারদের ওপর নজর রাখত। বাগুন্ডীর ১১ টি চৌকি হল বালিয়া, বয়ড়া, বাদুড়িয়া, চাদুড়িয়া, গোবরডাঙা, রজিপুর, হেভেলগঞ্জ, ওডল্যান্ডস ক্রীক, বাঁশতলা, ও আশাশুনি- শেষের তিনটি চৌকি বর্তমান বাংলাদেশে। নদীতে পেট্রল বোট থেকে বে-আইনি লবণ চলাচলের ওপর তদারক করা হত।

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৫২)

১২:০০:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪
শশাঙ্ক মণ্ডল
 লবণ

তৃতীয় অধ্যায়

লর্ড কর্নওআলিস অবশ্য সীমাবদ্ধ কিছু এলাকায় নীলামের ব্যবস্থা করেছিলেন- বণিকদের একচেটিয়া ব্যবসা খর্ব করার জন্য ১৮৩৩ খ্রীষ্টাব্দে এই নীলাম প্রথা রদ করা হল। লবণ উৎপাদন এবং হোলসেল্ ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রয়ের ব্যবস্থার দায়িত্ব দেওয়া হল Board of Salt & Opium এর অপর। এরা লবণ উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন সল্ট এজেন্সি পরিচালনা করত। দীর্ঘকাল পর্যন্ত এই ব্যবস্থা চালু ছিল কিন্তু ইতিমধ্যে জ্বালানি সঙ্কট নতুন নতুন এলাকায় কৃষির প্রচলন এবং সেই সঙ্গে সরকার দেখলেন বিদেশি লবণ আমদানির মধ্য দিয়ে যে টাকা আয় হবে তা অভ্যন্তরীণ লবণ উৎপাদন ও বন্টনের মধ্য দিয়ে আয়ের সমান। ইংলন্ডে তখন লিভারপুল ও অন্যত্র লবণের কারখানা গড়ে উঠেছে জাহাজি মালিকদের স্বার্থ এর সঙ্গে জড়িত ছিল।
পরাধীন ভারত হয়ে দাঁড়ায় ইংলন্ডের কলকারখানায় উৎপাদিত পণ্য বিপণনের উর্বর ক্ষেত্র। সুতরাং স্বদেশি লবণ শিল্প দারুণ ভাবে মার খেল। উনিশ শতকের শেষের দিকে এই শিল্পের মৃত্যু-লক্ষণ পরিস্ফুট হল। তবে দীর্ঘকাল লবণ আইন টিকে থাকল। আমাদের দেশের মানুষ ঘর থেকে এক পা ফেলে মাটি নিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় লবণ সে তৈরি করতে পারবে না-সে ইংল্যাণ্ডের লিভারপুলের লবণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে বাধ্য হল। নুন আনতে পাস্তা ফুরোয় যে দেশের অধিকাংশ মানুষের সে দেশ লবণের অধিকার থেকে বঞ্চিত হল- যা অতি সহজে আমাদের দেশে উৎপাদিত হতে পারে।
২৪ পরগনার সন্ট কমিশনারের নেতৃত্বে উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে সুন্দরবনের বর্তমান বসিরহাট, ডায়মন্ডহারবার, আলিপুর মহকুমাসহ খুলনা জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের লবণ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রিত করার জন্য বসিরহাটের বাগুন্ডি এবং বারুইপুরে লবণ চৌকিগুলির সুপারিনটেনডেন্টের অফিস ছিল। ১৮২২ খ্রীষ্টাব্দে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ২৪ পরগনার লবণের সেরেস্তাদার হয়েছিলেন। পরে Board of Customs Salt & Opium-এর দেওয়ান হয়েছিলেন- এ পদ সে যুগে খুবই সম্মানের ছিল।
১৮৩৩ এ হাড়োয়ার বালান্দা আড়ং এর মালঙ্গীরা এ এলাকার লবণ দারোগা গোপীমোহন মল্লিক এবং দ্বারকানাথের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন-দ্বারকানাথকে ঘুষ দিতে হবে তাই ‘দ্বারকানাথ বন্দোবস্ত’ নামে মালঙ্গীদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করছে লবণ চৌকির দারোগা গোপীমোহন মল্লিক। বারাসাতের ম্যাজিস্ট্রেট হার্ভার্ট মিলটন তদন্ত করে মালঙ্গীদের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। পরবর্তী কলে Court of Directors এ বিষয়ে তদন্ত করে এবং অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে অভিযোগ থেকে রেহাই পেলেন স্বারকানাথ।
বাগুন্ডীর সুপারের অফিস থেকে ১১ টি লবণ চৌকি পর্যবেক্ষণ করা হত। প্রতিটি চৌকিতে একজন লবণ দারোগা দু’জন পাইক এবং একজন পিওন থাকত। এরা ঐ চৌকিতে বেআইনি লবণ তৈরি হচ্ছে কিনা তার খোঁজ খবর নিত এবং লবণ উৎপাদন এবং বিক্রয়ের ব্যাপারে ডিলারদের ওপর নজর রাখত। বাগুন্ডীর ১১ টি চৌকি হল বালিয়া, বয়ড়া, বাদুড়িয়া, চাদুড়িয়া, গোবরডাঙা, রজিপুর, হেভেলগঞ্জ, ওডল্যান্ডস ক্রীক, বাঁশতলা, ও আশাশুনি- শেষের তিনটি চৌকি বর্তমান বাংলাদেশে। নদীতে পেট্রল বোট থেকে বে-আইনি লবণ চলাচলের ওপর তদারক করা হত।