০১:০২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৮৭)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০৩:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪
  • 19

শ্রী নিখিলনাথ রায়

রাজস্ববিষয়ে নন্দকুমারের দক্ষতা দিন দিন বৃদ্ধি পাইতে থাকার, নবাব আলিবর্দী খাঁর রাজত্বসময়ে তিনি হিজলী ও মহিষাদলের আমীন নিযুক্ত হইয়া, উক্ত পরগণাদ্বয়ের রাজস্বসংগ্রহে প্রবৃত্ত হন। সরকারের আয় বৃদ্ধি দেখাইতে হইলে, জমিদার ও প্রজাদিগের, সুবিধার প্রতি হস্তক্ষেপ না করিলে চলে না। নন্দকুমার সরকারের আয় বৃদ্ধি করিতে গিয়া নিজেই মহাবিপদে পতিত হইলেন। আলিবদ্দীর সময়ে রায়রায়ান চায়েন রায় খালসার দেওয়ানীপদে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।
জমিদার ও প্রজারা তাঁহার নিকট নন্দকুমারের নামে অভিযোগ উপস্থিত করে এবং সেই সময়ে নন্দকুমারের নিকট সরকারের প্রায় ৮০ হাজার টাকা পাওনা হয়। নন্দকুমারের শত্রুগণ মনে করিতে পারেন যে, নন্দকুমার উক্ত টাকা আত্মসাৎ করিয়াছিলেন। কিন্তু বাস্তবিক নন্দকুমার তাহা করেন নাই। রাজস্ববিষয়ে কার্য্য করিতে গেলে, যেরূপ প্রভু ও কর্মচারীর মধ্যে দেনা পাওনা হয়, নন্দকুমারের নিকট সেরূপই পাওনা হইয়াছিল।
তৎকালে ইহার অনেক দৃষ্টান্ত দেখা যাইত; অনেক কর্মচারীর নিকট মৃত্যুসময় পর্যন্ত টাকা পাওনা থাকিত। বাঙ্গলার রাজস্ববিভাগের প্রধান কাননগো বঙ্গাধিকারিগণের ফার্মানে আমরা ইহার প্রমাণ দেখিতে পাই। কোন বঙ্গাধিকারী প্রধান কাননগোপদে নিযুক্ত হওয়ার সময় যে ফাৰ্ম্মান বা নিয়োগপত্র প্রাপ্ত হইতেন, তাহার পূর্ব্বে তাঁহাকে তাঁহার পূর্ব্বপুরুষগণের নিকট প্রাপ্য সমস্ত সরকারী অর্থ পরিশোধ করিতে হইত। পরে তাঁহারা আপনার নিয়োগসম্বন্ধে নজর দিয়া উক্ত ফার্মান প্রাপ্ত হইতেন। সুতরাং রাজস্ববিভাগের কার্য্য করিতে গেলে, এরূপ দেনাপাওনা নিকাশের পূর্ব্ব পর্যন্ত প্রায়ই থাকিয়া যায়। বর্তমান সময়েও এইরূপ দৃষ্টান্তের অভাব নাই।
নন্দকুমারের নামে অভিযোগ উপস্থিত হইলে, চায়েন রায় আর তাঁহাকে উক্ত পদে রাখিতে ইচ্ছা করেন নাই। তিনি নন্দকুমারকে মুর্শিদাবাদে আহ্বান করিয়া তাঁহার নিকট হইতে সরকারের প্রাপ্য টাকার জন্য অত্যন্ত পীড়াপীড়ি করিতে থাকেন। সহসা রাজস্ববিভাগের কার্য্য হইতে অপসৃত হইলে, অর্থ সংগ্রহ করা হয় না; এই জন্য নন্দকুমারকে অত্যন্ত কষ্টে পতিত হইতে হয়। রায়রায়ানও তাঁহার প্রতি অযথা অত্যা- . চার আরম্ভ করিয়াছিলেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৮৭)

১১:০৩:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

শ্রী নিখিলনাথ রায়

রাজস্ববিষয়ে নন্দকুমারের দক্ষতা দিন দিন বৃদ্ধি পাইতে থাকার, নবাব আলিবর্দী খাঁর রাজত্বসময়ে তিনি হিজলী ও মহিষাদলের আমীন নিযুক্ত হইয়া, উক্ত পরগণাদ্বয়ের রাজস্বসংগ্রহে প্রবৃত্ত হন। সরকারের আয় বৃদ্ধি দেখাইতে হইলে, জমিদার ও প্রজাদিগের, সুবিধার প্রতি হস্তক্ষেপ না করিলে চলে না। নন্দকুমার সরকারের আয় বৃদ্ধি করিতে গিয়া নিজেই মহাবিপদে পতিত হইলেন। আলিবদ্দীর সময়ে রায়রায়ান চায়েন রায় খালসার দেওয়ানীপদে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।
জমিদার ও প্রজারা তাঁহার নিকট নন্দকুমারের নামে অভিযোগ উপস্থিত করে এবং সেই সময়ে নন্দকুমারের নিকট সরকারের প্রায় ৮০ হাজার টাকা পাওনা হয়। নন্দকুমারের শত্রুগণ মনে করিতে পারেন যে, নন্দকুমার উক্ত টাকা আত্মসাৎ করিয়াছিলেন। কিন্তু বাস্তবিক নন্দকুমার তাহা করেন নাই। রাজস্ববিষয়ে কার্য্য করিতে গেলে, যেরূপ প্রভু ও কর্মচারীর মধ্যে দেনা পাওনা হয়, নন্দকুমারের নিকট সেরূপই পাওনা হইয়াছিল।
তৎকালে ইহার অনেক দৃষ্টান্ত দেখা যাইত; অনেক কর্মচারীর নিকট মৃত্যুসময় পর্যন্ত টাকা পাওনা থাকিত। বাঙ্গলার রাজস্ববিভাগের প্রধান কাননগো বঙ্গাধিকারিগণের ফার্মানে আমরা ইহার প্রমাণ দেখিতে পাই। কোন বঙ্গাধিকারী প্রধান কাননগোপদে নিযুক্ত হওয়ার সময় যে ফাৰ্ম্মান বা নিয়োগপত্র প্রাপ্ত হইতেন, তাহার পূর্ব্বে তাঁহাকে তাঁহার পূর্ব্বপুরুষগণের নিকট প্রাপ্য সমস্ত সরকারী অর্থ পরিশোধ করিতে হইত। পরে তাঁহারা আপনার নিয়োগসম্বন্ধে নজর দিয়া উক্ত ফার্মান প্রাপ্ত হইতেন। সুতরাং রাজস্ববিভাগের কার্য্য করিতে গেলে, এরূপ দেনাপাওনা নিকাশের পূর্ব্ব পর্যন্ত প্রায়ই থাকিয়া যায়। বর্তমান সময়েও এইরূপ দৃষ্টান্তের অভাব নাই।
নন্দকুমারের নামে অভিযোগ উপস্থিত হইলে, চায়েন রায় আর তাঁহাকে উক্ত পদে রাখিতে ইচ্ছা করেন নাই। তিনি নন্দকুমারকে মুর্শিদাবাদে আহ্বান করিয়া তাঁহার নিকট হইতে সরকারের প্রাপ্য টাকার জন্য অত্যন্ত পীড়াপীড়ি করিতে থাকেন। সহসা রাজস্ববিভাগের কার্য্য হইতে অপসৃত হইলে, অর্থ সংগ্রহ করা হয় না; এই জন্য নন্দকুমারকে অত্যন্ত কষ্টে পতিত হইতে হয়। রায়রায়ানও তাঁহার প্রতি অযথা অত্যা- . চার আরম্ভ করিয়াছিলেন।