১২:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৫৫)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪
  • 18
শশাঙ্ক মণ্ডল
 লবণ

তৃতীয় অধ্যায়

এ সময়ে সল্ট চৌকির সুপার যিনি অবশ্যই সাহেব হবেন তাঁর মাসিক বেতন দুই হাজার টাকা। তার পাশাপাশি একজন দেশীয় লবণ দারোগার বেতন মাসিক ২৫-৩০ টাকা। ক্যাশকিপারের বেতন ১২ টাকা, পিওনদের মাসিক বেতন ২ টাকা আট আনা। কর্মচারীরা অনেকসময় নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে অর্থ আত্মসাৎ করত। অনেক সময় এই ঘুষের টাকার ভাগ নিয়ে বিরোধ হত। যশোর জেলার লবণ চৌকির সেরেস্তাদার সূর্যকান্ত মুখার্জি এবং লবণ সুপার মিঃ হকিন্সের মধ্যে বিরোধ হয় ঘুষের টাকার ভাগ নিয়ে।

এরা চোরাই লবণ ব্যবসার সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করে ফলাও কারবার শুরু করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লবণ বাণিজে এসব কম বেতনভোগী কর্মচারীদের প্রাধান্য ছিল-

Everything was left at the mercy of these native illpaid officers’ – N.K. Sinha—Midnapore Salt Papers.

বিভিন্ন সময়ে লবণের দাম বেড়েছে কিন্তু প্রাথমিক উৎপাদক মালঙ্গী-মাহিন্দারদের মজুরি সেই অনুযায়ী বাড়েনি। ২৪ পরগণার বিভিন্ন প্রান্তে মালঙ্গীদের মজুরির বিষয় নিয়ে ১৮৬০ সালের দিকে সরকারের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান চালানো হয় এবং তাতে ধরা পড়ল দীর্ঘকাল ধরে বিভিন্ন সময়ে লবণের দাম বাড়লেও মালঙ্গীদের মজুরি প্রায় একই থেকে গেছে বিগত ৫০ বছর ধরে। ১৮৪৮ খ্রীষ্টাব্দে বাগুন্ডী সল্ট এজেন্সির সুপারের হিসাবে থেকে জানা যাচ্ছে মালঙ্গীরা ১০০ মণ লবণ তৈরির জন্য মজুরি হিসাবে পাচ্ছে ১৫/১৬ টাকা মজুর হিসাবে দৈনিক ২ আনা করে পাচ্ছে।

সে যুগে একটাকায় আট জন মজুর পাওয়া যেত। ১০০ মণ লবণ তৈরির জন্য ১০ জন লোককে নুনমাটি যোগাড় করা থেকে জ্বালানি পর্যন্ত ১৫ দিন সময় দিতে হত। সে সময়ে কৃষিজাত ফসলের ভালো দাম বাজারে চাষিরা পেত না। মুদ্রার সঙ্কট, যোগাযোগ ব্যবস্থার অসুবিধার জন্য ফসলের ভালো দাম চাষিরা পেত না।

কৃষকদের অনেকগুলি মাস বিশেষ করে শীতকালের শেষ থেকে বর্ষা শুরু পর্যন্ত অলসভাবে বসে থাকতে হত। এসময়ে বিকল্প কাজের সন্ধান দিয়েছিল লবণ শিল্প। অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে ১০০ মণ লবণের সরকারি বিক্রয় মূল্য-ছিল ৩০০ টাকা। ১৭৯১ খ্রীষ্টাব্দে বাংলার বিভিন্ন স্থানে ১০০ মণ লবণ বিক্রয় হচ্ছে ২৩৪ টাকা থেকে ৩১৪ টাকা। ১৮৪৮ খ্রীষ্টাব্দে লবণের পাইকারি বিক্রয়মূল্য ছিল প্রতিমণ ৪ টাকা ২ আনা। আর প্রজাদের কাছে ডিলাররা প্রতিমণ ৪ টাকা ৬ আনা হিসাবে বিক্রয় করত।

জনপ্রিয় সংবাদ

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৫৫)

১২:০০:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪
শশাঙ্ক মণ্ডল
 লবণ

তৃতীয় অধ্যায়

এ সময়ে সল্ট চৌকির সুপার যিনি অবশ্যই সাহেব হবেন তাঁর মাসিক বেতন দুই হাজার টাকা। তার পাশাপাশি একজন দেশীয় লবণ দারোগার বেতন মাসিক ২৫-৩০ টাকা। ক্যাশকিপারের বেতন ১২ টাকা, পিওনদের মাসিক বেতন ২ টাকা আট আনা। কর্মচারীরা অনেকসময় নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে অর্থ আত্মসাৎ করত। অনেক সময় এই ঘুষের টাকার ভাগ নিয়ে বিরোধ হত। যশোর জেলার লবণ চৌকির সেরেস্তাদার সূর্যকান্ত মুখার্জি এবং লবণ সুপার মিঃ হকিন্সের মধ্যে বিরোধ হয় ঘুষের টাকার ভাগ নিয়ে।

এরা চোরাই লবণ ব্যবসার সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করে ফলাও কারবার শুরু করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লবণ বাণিজে এসব কম বেতনভোগী কর্মচারীদের প্রাধান্য ছিল-

Everything was left at the mercy of these native illpaid officers’ – N.K. Sinha—Midnapore Salt Papers.

বিভিন্ন সময়ে লবণের দাম বেড়েছে কিন্তু প্রাথমিক উৎপাদক মালঙ্গী-মাহিন্দারদের মজুরি সেই অনুযায়ী বাড়েনি। ২৪ পরগণার বিভিন্ন প্রান্তে মালঙ্গীদের মজুরির বিষয় নিয়ে ১৮৬০ সালের দিকে সরকারের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান চালানো হয় এবং তাতে ধরা পড়ল দীর্ঘকাল ধরে বিভিন্ন সময়ে লবণের দাম বাড়লেও মালঙ্গীদের মজুরি প্রায় একই থেকে গেছে বিগত ৫০ বছর ধরে। ১৮৪৮ খ্রীষ্টাব্দে বাগুন্ডী সল্ট এজেন্সির সুপারের হিসাবে থেকে জানা যাচ্ছে মালঙ্গীরা ১০০ মণ লবণ তৈরির জন্য মজুরি হিসাবে পাচ্ছে ১৫/১৬ টাকা মজুর হিসাবে দৈনিক ২ আনা করে পাচ্ছে।

সে যুগে একটাকায় আট জন মজুর পাওয়া যেত। ১০০ মণ লবণ তৈরির জন্য ১০ জন লোককে নুনমাটি যোগাড় করা থেকে জ্বালানি পর্যন্ত ১৫ দিন সময় দিতে হত। সে সময়ে কৃষিজাত ফসলের ভালো দাম বাজারে চাষিরা পেত না। মুদ্রার সঙ্কট, যোগাযোগ ব্যবস্থার অসুবিধার জন্য ফসলের ভালো দাম চাষিরা পেত না।

কৃষকদের অনেকগুলি মাস বিশেষ করে শীতকালের শেষ থেকে বর্ষা শুরু পর্যন্ত অলসভাবে বসে থাকতে হত। এসময়ে বিকল্প কাজের সন্ধান দিয়েছিল লবণ শিল্প। অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে ১০০ মণ লবণের সরকারি বিক্রয় মূল্য-ছিল ৩০০ টাকা। ১৭৯১ খ্রীষ্টাব্দে বাংলার বিভিন্ন স্থানে ১০০ মণ লবণ বিক্রয় হচ্ছে ২৩৪ টাকা থেকে ৩১৪ টাকা। ১৮৪৮ খ্রীষ্টাব্দে লবণের পাইকারি বিক্রয়মূল্য ছিল প্রতিমণ ৪ টাকা ২ আনা। আর প্রজাদের কাছে ডিলাররা প্রতিমণ ৪ টাকা ৬ আনা হিসাবে বিক্রয় করত।