তৃতীয় অধ্যায়
বিশাল সুন্দরবনের কৃষিজীবীদের জীবনের প্রয়োজনে প্রচুর গবাদি পশু তারা পালন করত এবং সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে গবাদি পশুর মৃত্যু লেগেই থাকত। এই পশুর চামড়া সংগ্রহ করে দেশীয় পদ্ধতিতে তাকে কিছুটা পাকা চামড়ায় পরিণত করে কলকাতায়। পাঠানো হত। এলাকার মানুষরা সাধারণত এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকত।
এরা পশুচামড়ার জন্য উপযুক্ত মূলা পেত না-ফড়িয়া পাইকাররা এদেরকে কম মূল্য দিয়ে সেই সব দ্রব্য সংগ্রহ করত। পরবর্তীকালে লক্ষ করা যাচ্ছে বিশেষ করে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ সমকালে অনেক মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করে ফেলেছে। মুসলিম সমাজের অনেকে পশু চামড়ার ব্যাপারী হিসাবে বিভিন্ন গঞ্জ থেকে মাল সংগ্রহ করে কলকাতায় চালান দিত।
উনিশ শতকের শেষের দিকে হাড় এর চিরুনি তৈরির জন্য যশোর এ বাঙালীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় The Jesore Comb Button Mat Manufacturing Company যদিও উদ্যোক্তারা হাড় থেকে চিরুনি বোতাম তৈরির পাশাপাশি মাদুর তৈরির কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু মেদিনীপুর থেকে রেলে পাতি নিয়ে এসে মাদুর তৈরি করার ক্ষেত্রে এই কোম্পানী বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি।
সেজন্য শেষ পর্যন্ত মাদুর তৈরির পরিকল্পনা বাতিল করে চিরুনি ও বোতাম তৈরিতে মনোনিবেশ করে এবং চিরুনি বোতাম তৈরির ব্যাপারে ভারতের অগ্রণী স্বদেশি প্রাতিষ্ঠান হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করে। অনেক আর্থিক অসুবিধার মধ্যে ধীরে ধীরে এই শিল্পের ক্ষেত্রে অগ্রণী প্রতিষ্ঠান হিসাবে ১৯২০ এর মধ্যে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করে। সরকারি নানা রকম বাধা নিষেধ, আর্থিক অস্বচ্ছলতা অস্বীকার করে মধ্যবিত্ত বাঙালির মূলধনকে পাথেয় করে বিদেশ থেকে এরা উন্নত যন্ত্রপাতি আমদানি করে এবং ধীরে ধীরে এই শিল্পে সাফল্য লাভ করে।
সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তের জলাজমিতে পাতি জন্মে। এই পাতি কেটে শুকিয়ে মাদুর তৈরি করার পদ্ধতি আমাদের দেশে বহুকাল থেকে চলে আসছে। সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষকরা তাদের প্রয়োজনমত মাদুর নিজেরা তৈরি করে নিত। অতিরিক্ত হলে হাটের ব্যাপারীদের কাছে তা বিক্রয় করে দিত।