এক দশকে ‘নারী-প্রধান’ পরিচয় ফিকে হয়ে গেছে
এক সময় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) শিল্পে ৮০% পর্যন্ত শ্রমিক ছিলেন নারী। ২০২১ সালে এই হার নেমে এসেছে ৫৩.৭%-এ। ব্যবসা-বাণিজ্যের খবরের ভাষ্যও বলছে, এই কমার ধারা অব্যাহত রয়েছে।
কীভাবে কমছে?
২০১৪ সালে নারী শ্রমিকের হার ছিল ৫৬%, ২০২৩ সালে নেমে দাঁড়িয়েছে ৫৩%। আইএলও-র হিসাবে এখন ৪.২ মিলিয়ন পোশাক শ্রমিকের মধ্যে প্রায় ৬০% নারী, তবে এই হারও ধীরে ধীরে কমছে।

কেন এই পতন?
মেশিন ও অটোমেশন: নতুন যন্ত্র আসায় অনেক কাজের ধরন বদলে গেছে। যন্ত্র চালানোর জন্য বেশি দক্ষতা দরকার, যেখানে পুরুষদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
দক্ষতার অভাব: নারী শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের সুযোগ খুব কম। মালিকরা উৎপাদনের লক্ষ্য দেখিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে চান না।
পারিবারিক চাপ: সন্তানের যত্ন, গর্ভাবস্থা বা বাড়ি-কারখানার দূরত্বের কারণে অনেক নারী স্বেচ্ছায় কাজ ছেড়ে দিচ্ছেন।
নিরাপত্তা ও পরিবেশ: যৌন হয়রানি, দীর্ঘ সময় কাজ, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন অনেক নারী।
কোভিড-১৯: মহামারিতে অর্ডার বাতিল ও কারখানা বন্ধ হওয়ায় অনেক নারী কাজ হারিয়েছেন, যার প্রভাব এখনও আছে।
অর্থনীতিতে প্রভাব
নারী শ্রমিকের আয় কমলে গ্রামের অর্থনীতি ও শহরের নিম্ন আয়ের মানুষের কেনাকাটা কমে যায়। এতে দেশের সামগ্রিক চাহিদা কমে, উৎপাদন খরচ বাড়ে এবং প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ক্ষুণ্ন হয়।

সমাধান কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন—
- নারী-বন্ধু কর্মপরিবেশ গড়া (ডে-কেয়ার, নিরাপদ আবাসন, যৌন হয়রানি রোধ)।
- লক্ষ্যভিত্তিক প্রশিক্ষণ (সেলাই-কাটিং থেকে ডিজিটাল প্যাটার্ন তৈরি শেখানো)।
- ন্যায্য মজুরি ও মাতৃত্বকালীন সুবিধা নিশ্চিত করা।
- নারীদের প্রযুক্তি প্রশিক্ষণে কোটা রাখা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকার, মালিক ও ক্রেতাদের একসাথে বসে দ্রুত ন্যায্য রূপান্তরের পরিকল্পনা করতে হবে। না হলে এই শিল্পে নারীর অংশগ্রহণ আরও কমে যাবে এবং অর্থনীতিও ঝুঁকিতে পড়বে।
বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের সাফল্য নারী শ্রমিকদের পরিশ্রমেই গড়া। প্রযুক্তি ও সামাজিক পরিবর্তনের কারণে তাঁদের সংখ্যা কমে গেলে শুধু পরিবার নয়, পুরো অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই এখনই কার্যকর নীতি নিতে হবে, নইলে ‘নারী-প্রধান’ গার্মেন্টসের গল্প ইতিহাস হয়ে যাবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















