স্থানীয় স্তরে আরও সূক্ষ্ম পূর্বাভাসের লক্ষ্য
গুগলের গবেষণা শাখা ডিপমাইন্ড নতুন প্রজন্মের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক আবহাওয়ার মডেল চালু করেছে, যার লক্ষ্য স্বল্প সময়ের মধ্যে আরও সূক্ষ্ম ও নির্ভুল পূর্বাভাস দেওয়া। ‘ওয়েদারনেক্সট ২’ নামের এই মডেল স্যাটেলাইট, রাডার ও স্থলভিত্তিক স্টেশনের বিপুল তথ্য ব্যবহার করে কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিনের মধ্যে তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহ ও বৃষ্টিপাতের পরিবর্তন অনুমান করার চেষ্টা করে। পাঠানো প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বিশেষ করে ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ের পথ নির্ণয়ে ঐতিহ্যগত সংখ্যামূলক মডেলের তুলনায় এআই মডেলটি বেশি দক্ষতা দেখাচ্ছে বলে দাবি ডিপমাইন্ডের।
ইউরোপ ও এশিয়ার কয়েকটি জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর আগের সংস্করণ দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে পূর্বাভাস করে দেখেছে। নতুন সংস্করণে কাভারেজ বেড়েছে; বিদ্যুৎ গ্রিড পরিচালনা, বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মতো খাতের জন্য আলাদা টুল যোগ হয়েছে। গুগলের ডেটা সেন্টারে বিশেষ এআই হার্ডওয়্যারে মডেলটি চালানো হয় বলে ঘন ঘন আপডেটেড পূর্বাভাস তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে, যা হঠাৎ শক্তি বাড়ানো ঝড় বা মেঘঝড় বোঝার ক্ষেত্রে জরুরি। গবেষকদের ভাষায়, ‘নাওকাস্টিং’—অর্থাৎ কয়েক ঘণ্টার ক্ষুদ্র সময়সীমার পূর্বাভাসে—এ ধরনের মডেল আশাব্যঞ্জক ফল দিচ্ছে।

জলবায়ু সহনশীলতা বনাম ডেটা ও বিদ্যুৎ খরচ
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যখন চরম আবহাওয়া আরও ঘন ঘন ও অনিশ্চিত হয়ে উঠছে, তখন পুরোনো মডেলের সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তাপপ্রবাহ, মুষলধারে বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়—সবই এখন পৃথিবীর নানা প্রান্তে অবকাঠামোকে চাপে ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই-সহায়ক পূর্বাভাস থাকলে বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় দেশগুলো আগেভাগে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ সরিয়ে নেওয়া, বাঁধ ও বাঁধভাঙা নদী নিয়ন্ত্রণ, কিংবা কৃষিজমিতে পানি সেচের সিদ্ধান্ত আরও দ্রুত ও তথ্যনির্ভরভাবে নিতে পারবে। বীমা কোম্পানি থেকে শুরু করে পুনর্বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোও এমন মডেল ব্যবহার করে ঝুঁকি হিসাব পাল্টানোর চেষ্টা করছে।
তবে এআই নির্ভর আবহাওয়া মডেল নিয়ে কিছু প্রশ্নও উঠছে। বড় মডেল প্রশিক্ষণ ও চালাতে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ লাগে, তা কম নয়; আর সেই বিদ্যুৎ এখনও অনেক জায়গায় জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক গ্রিড থেকে আসে। ডিপমাইন্ড বলছে, আগের তুলনায় ওয়েদারনেক্সট ২ বেশি বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী; কিন্তু সমালোচকদের মতে, জলবায়ু সমাধানে ব্যবহৃত প্রযুক্তির নিজেদের কার্বন ফুটপ্রিন্ট নিয়েও স্বচ্ছ থাকা উচিত।
অন্য এক বিতর্ক নিয়ন্ত্রণ ও প্রবেশাধিকার নিয়ে। যদি অল্পসংখ্যক বড় প্রযুক্তি কোম্পানির হাতে উন্নত পূর্বাভাসের পূর্ণ অবকাঠামো ও অ্যালগরিদম চলে যায়, তবে বহু দেশীয় আবহাওয়া দপ্তর ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়তে পারে। দরিদ্র ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো তখন হয়তো ব্যয়বহুল লাইসেন্স ফি ছাড়া এসব টুলের পূর্ণ সুবিধা পাবে না।
আবহাওয়াবিদেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এআই কোনোভাবেই পদার্থবিদভিত্তিক পুরোনো আবহাওয়া মডেলের বিকল্প নয়; বরং দুটি একত্রে ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবু সাম্প্রতিক অগ্রগতি থেকে ইঙ্গিত মিলছে—খুব শিগগিরই শহর, ইউনিয়ন এমনকি পাড়া-মহল্লা পর্যায়েও আরও বিস্তারিত পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব হতে পারে। প্রশ্নটা হলো, সেই তথ্য কত দ্রুত ও কতটা সমানভাবে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের কাছে পৌঁছাবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















