তৃতীয় অধ্যায়
সেদিন গ্রামের প্রধান ও নায়েব মশাইদের মধ্যস্থতায় একবছরের নির্দিষ্ট চুক্তিতে প্রতিটি চাষি কয়েক পালি ধান কর্মকার, কুমারকে দেবে এবং তার বিনিময়ে চাষিদের জিনিসপত্র সারাই বা তৈরি করে দেবে। কিন্তু পরবর্তীকালে কলের জিনিসপত্র গ্রামের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে থাকল। ধানের চুক্তির পরিবর্তে নগদ অর্থ এসে গেল এবং শেষ পর্যন্ত বিদেশি কলের উন্নতমানের জিনিসপত্রের কাছে এরা পিছু হটতে বাধ্য হল।
বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় চতুর্থ দশকে গ্রামের এসব কুঠীর শিল্পীরা নিজেদের জাত ব্যবসা পরিত্যাগ করে অন্য পেশার দিকে হাত বাড়াচ্ছে তা লক্ষ্য করা গেল। আমাদের আলোচ্য বিভিন্ন জেলার সরকারী গেজেটিয়ারগুলিতে লক্ষ্য করা যাচ্ছিল গ্রামের এ ধরনের কুটির শিল্পীদের সংখ্যা ক্রমাগত কমের দিকে আর তারা প্রতিনিয়ত কৃষি শ্রমিকদের সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছে।
সমগ্র ব্রিটিশ রাজত্ব জুড়ে ধীরে ধীরে প্রচলিত কুটির শিল্পগুলি ধ্বংস হয়ে গেল। যা কিছু অবশিষ্ট ছিল তার শিল্পীরা চরম দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন যাপন করতে লাগল। সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে যে নৌশিল্প তা ধীরে ধীরে বন্ধ হবার উপক্রম হল; গ্রামীণ অনেক মহিলা ঢেঁকিতে ধান থেকে চাল তৈরি করে অথবা কাঁথা সেলাই করে গৃহস্থ ঘরের বৌঝিদের হাত থেকে কিছু কিছু উপার্জন করত তাও বন্ধ হয়ে গেল।
সুন্দরবনের বনজ শিল্পকে কেন্দ্র করে কোন শিল্প গড়ে তোলার প্রচেষ্টা লক্ষ করা গেল না সব মানুষই কৃষির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ল। সে যুগে জঘন্যতম সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে কৃষি অর্থনীতি আবর্তিত হত এবং তার ফলে সীমাহীন দারিদ্র্য অনটনের মধ্য দিয়ে মানুষগুলি জীবনযাত্রা নির্বাহ করত।
Sarakhon Report 



















