১২:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

মায়া সভ্যতার ইতিহাস (পর্ব-৩৮)

  • Sarakhon Report
  • ০৫:৫৫:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪
  • 16

সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়

জমি সংরক্ষণের পবিত্রতা এবং আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা

 মায়াদের মধ্যে প্রচলিত লোকাচার, ধর্মীয় বিশ্বাস মূলত তাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে একাত্মভাবে জড়িয়ে আছে। তাই পেশা, জীবন, সাংস্কৃতিক চর্চা, আনন্দ-অনুষ্ঠান সব কিছুর সঙ্গেই আমরা লোকাচারের অনুষঙ্গ খুঁজে পাই। এই প্রসঙ্গেই আমরা মায়াদের জমি, বিশেষত চাষের জমি সম্পর্কিত প্রথার উল্লেখ করতে পারি। মায়া জনগোষ্ঠী সাধারণত বসত জমি, চাষের জমি সব কিছুতেই আত্মার উপস্থিতি অনুভব করে। মায়া জনজাতির প্রত্যেকে মনে করে যে তারা জমির সঙ্গে পরিবেশেরই অঙ্গ।

প্রাকৃতিক পরিবেশ তাদের অস্তিত্বরই ভিন্নতর প্রকাশ একথা তারা বিশ্বাস করে। তাই জমি বা পরিবেশকে কোনভাবে আঘাত বা অপমান করা হল প্রকৃতিকে আঘাতেরই নামান্তর। প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করা সেই অর্থে তাদের কাছে কার্যত একটি ঐতিহ্যগত পবিত্র কাজ। আগের জন্মের গুরুজন বা পূর্বপুরুষরা এই কাজই সচেতনভাবে করে গেছেন এবং সেই কারণে গ্রামের অভিজ্ঞ এবং প্রধান মানুষদের সঙ্গে মায়ারা সব সময় প্রয়োজনীয় আলোচনা করে,পরামর্শ গ্রহণ করে। একথাও এইসঙ্গে তাদের মনকে বোঝায় যে এই জমি, পরিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষার সঙ্গে আত্মাগত কিছু বিশ্বাস জড়িয়ে থাকে।

এমনকি এই আত্মিক বিশ্বাসও দেখা যায় যে জমি এবং আত্মার মধ্যে এক ধরণের অংশীদারী সম্পর্ক আছে। প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণই বলে দেয় মায়ারা কেমন এবং তাদের বিশ্বাসের বৈচিত্র্যই বা কী। মায়ারা অনেক ক্ষেত্রে দেবতার কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণ করে কীভাবে জমির পেছনের দিকে গাছ বা শস্যর বীজ বুনবে বা কী করে জন্তু এবং প্রাণীদের দেবতাকে আঘাত করবে।

মায়াদের আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই ইঙ্গিত প্রকাশ করা হয় যে তারা চাষ-আবাদ, শিকার-উৎসবকে কতটা শ্রদ্ধা করে। এই শ্রদ্ধা আত্ম-নিবেদন থেকে মায়ারা এই শিক্ষাই নিয়েছে কতটা তারা নিজেদের জন্য গ্রহণ করবে। প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত কিছু নিতে তারা রাজী নয়। পরিবেশের ক্ষতি মায়াদের জীবনযাত্রা ও জীবনচর্চার বাইরের ব্যাপার।

(চলবে)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস (পর্ব-৩৭)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস (পর্ব-৩৭)

জনপ্রিয় সংবাদ

মায়া সভ্যতার ইতিহাস (পর্ব-৩৮)

০৫:৫৫:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়

জমি সংরক্ষণের পবিত্রতা এবং আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা

 মায়াদের মধ্যে প্রচলিত লোকাচার, ধর্মীয় বিশ্বাস মূলত তাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে একাত্মভাবে জড়িয়ে আছে। তাই পেশা, জীবন, সাংস্কৃতিক চর্চা, আনন্দ-অনুষ্ঠান সব কিছুর সঙ্গেই আমরা লোকাচারের অনুষঙ্গ খুঁজে পাই। এই প্রসঙ্গেই আমরা মায়াদের জমি, বিশেষত চাষের জমি সম্পর্কিত প্রথার উল্লেখ করতে পারি। মায়া জনগোষ্ঠী সাধারণত বসত জমি, চাষের জমি সব কিছুতেই আত্মার উপস্থিতি অনুভব করে। মায়া জনজাতির প্রত্যেকে মনে করে যে তারা জমির সঙ্গে পরিবেশেরই অঙ্গ।

প্রাকৃতিক পরিবেশ তাদের অস্তিত্বরই ভিন্নতর প্রকাশ একথা তারা বিশ্বাস করে। তাই জমি বা পরিবেশকে কোনভাবে আঘাত বা অপমান করা হল প্রকৃতিকে আঘাতেরই নামান্তর। প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করা সেই অর্থে তাদের কাছে কার্যত একটি ঐতিহ্যগত পবিত্র কাজ। আগের জন্মের গুরুজন বা পূর্বপুরুষরা এই কাজই সচেতনভাবে করে গেছেন এবং সেই কারণে গ্রামের অভিজ্ঞ এবং প্রধান মানুষদের সঙ্গে মায়ারা সব সময় প্রয়োজনীয় আলোচনা করে,পরামর্শ গ্রহণ করে। একথাও এইসঙ্গে তাদের মনকে বোঝায় যে এই জমি, পরিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষার সঙ্গে আত্মাগত কিছু বিশ্বাস জড়িয়ে থাকে।

এমনকি এই আত্মিক বিশ্বাসও দেখা যায় যে জমি এবং আত্মার মধ্যে এক ধরণের অংশীদারী সম্পর্ক আছে। প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণই বলে দেয় মায়ারা কেমন এবং তাদের বিশ্বাসের বৈচিত্র্যই বা কী। মায়ারা অনেক ক্ষেত্রে দেবতার কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণ করে কীভাবে জমির পেছনের দিকে গাছ বা শস্যর বীজ বুনবে বা কী করে জন্তু এবং প্রাণীদের দেবতাকে আঘাত করবে।

মায়াদের আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই ইঙ্গিত প্রকাশ করা হয় যে তারা চাষ-আবাদ, শিকার-উৎসবকে কতটা শ্রদ্ধা করে। এই শ্রদ্ধা আত্ম-নিবেদন থেকে মায়ারা এই শিক্ষাই নিয়েছে কতটা তারা নিজেদের জন্য গ্রহণ করবে। প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত কিছু নিতে তারা রাজী নয়। পরিবেশের ক্ষতি মায়াদের জীবনযাত্রা ও জীবনচর্চার বাইরের ব্যাপার।

(চলবে)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস (পর্ব-৩৭)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস (পর্ব-৩৭)