ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
দ্বিতীয়ত যে ডাক্তার আত্মা দিয়ে প্রথাগত লোকাচার ও অনুষ্ঠান সম্পর্কে জানেন এবং কম বয়সে গ্রামের প্রবীণ মানুষের কাছে এই বিদ্যা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তবে এই প্রসঙ্গে একথাও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে এই বুশ ডাক্তাররা বৃষ্টিবন-এর থেকেই গাছ-গাছালি কষ্ট করে সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে কিছু লতাগুল্ম নদীর পাড়ে, কাছাকাছি কোথাও জন্মায়। আবার কিছু গাছ-লতাগুল্ম পাহাড় এলাকার থেকে সংগ্রহ করেন।
খুব দক্ষ অভিজ্ঞ ডাক্তাররা অনেক গাছ-জঙ্গলের মধ্য থেকে ঠিক আসল গাছটি তাক-নজরে চিহ্নিত করতে পারেন এবং এক্ষেত্রেও ঐ প্রয়োজনীয় গাছ কাটার আগে সেই ডাক্তার মন্ত্র উচ্চারণ করে প্রার্থনা করেন এবং আত্মার দেবতার থেকে কাছ কাটার অনুমতি সংগ্রহ করেন।

বুশ ডাক্তার রোগ সারাবার বা নির্ণয় করার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু পদ্ধতি গ্রহণ করেন। সাধারণভাবে রোগীর অসুস্থতার লক্ষণগুলি পর্যবেক্ষণ করেন। কখনো আবার পাথর ব্যবহার করেন বা কোনো বিশেষ ধরনের প্রার্থনা সংগীত করেন। চেলিজের একজন সাম্প্রতিক ডাক্তার এলিযো পান্তি (Elijco Panti)-ও রোগীর হাতের নাড়ি দেখে রোগ চিহ্নিত করেন। রোগ সারাবার ক্ষেত্রে গাছ-গাছালি যেমন ব্যবহার করেন তেমনি কোনো কোনো সময় ঘরের মধ্যে বসে প্রার্থনা বা ধ্যান করতে বলেন।
আবার কখনো চা বা পোলটিস (Poultice) সংগ্রহ এবং প্রার্থনা উভয় কাজ করারও নির্দেশ দেন। মায়া জনগোষ্ঠীর লোকাচার, লোকবিশ্বাস, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এক কথায় সহজ ও স্পষ্ট। ভারতীয় ধর্মীয় সমাজ বা হিন্দুশাস্ত্রের মত হাজার দেবতা উপদেবতা এবং নানা ধরনের বিশ্বাস, গোষ্ঠী এবং তার জটিলতা নেই বললেই চলে। স্থাপত্য নির্মাণ, গুহা নির্মাণ, দৈনন্দিন আহারের জন্য শিকার, জীবনের নানা রকম সমস্যা, অসুবিধা সব ক্ষেত্রেই পূর্বপুরুষ, আত্মা এবং আত্মা সব বস্তুর মধ্যে বিরাজ করে এই বিশ্বাস মায়াদের ধর্মীয় জগতের অন্যতম লক্ষ্যণীয় বৈশিষ্ট্য। অনেকটা হিন্দু ধর্মের সব বস্তুর মধ্যে ভগবান আছেন এই বিশ্বাস মায়াদের সঙ্গে তুলনা করা যায়।
(চলবে)
Sarakhon Report 



















