শ্রী নিখিলনাথ রায়
যাহা হউক, মুতাক্ষরীনের কথা স্বীকার করিতে গেলে, ক্লাইবের দেওয়ান ও মুন্সী নিযুক্ত হইয়াছিলেন। নন্দকুমার সে সময়ে পলাশীর যুদ্ধের সময় কিন্তু রামচাঁদ ক্লাইবের দেওয়ানের ও নবকৃষ্ণ মুন্সীর কার্য্য করিতেন বলিয়া উল্লিখিত হন। আবার কলিকাতার, বড়বাজারের কাশীরাম নামে এক ব্যক্তি ক্লাইবের দেওয়ান ছিলেন বলিয়া শুনা যায়। নবাব হওয়ার পর হইতেই, মীর জাফর পাটনার শাসনকর্তা রামনারায়ণকে উচ্ছেদ করিতে কৃতসঙ্কল্প হন।
ক্লাইব রামনারায়ণের রক্ষার জন্য অনেক চেষ্টা করেন। এই সময়ে নন্দকুমার অনেকবার ক্লাইবের উকীল হইয়া নবাবের নিকট গিয়াছিলেন। ইহার পর ক্লাইব সসৈন্যে পাটনায় যাত্রা করিলে, নন্দকুমার তাঁহার সঙ্গে তথায় গমন করেন। ক্লাইব নন্দ- কুমারের চতুরতা, বুদ্ধিমত্তা ও কার্য্যদক্ষতায় এতদূর সন্তুষ্ট হইয়াছিলেন যে, সর্ব্বদা তাঁহাকে সঙ্গে রাখিতেন এবং যাবতীয় গুরুতর কার্য্যে তাঁহার পরামর্শ গ্রহণ করিতেন। রাজা দুর্লভরামও নন্দকুমারকে পাটনায় যাইতে দেখিয়া তাঁহাকে আপনার উকীল নিযুক্ত করিয়া, ক্লাইবের সহা- য়তার জন্য সমস্ত ব্যয় স্বয়ং নন্দকুমারের হস্তে প্রদান করেন।
তাহার পর রাজা দুর্লভরাম নিজেই পাটনায় উপস্থিত হন। তৎকালে নন্দকুমারের ক্ষমতা এতদূর প্রবল হইয়াছিল যে, সাধারণে তাঁহাকে ‘কালা কর্ণেল’ বলিত। পাটনা হইতে তাঁহারা পুনর্ব্বার মুর্শিদাবাদে উপস্থিত হন। এই সময় ক্লাইব নন্দকুমারের উপর এতই সন্তুষ্ট ছিলেন যে, তাঁহাকে পুনর্ব্বার হুগলী ও হিজলী প্রভৃতির দেওয়ানী প্রদান করিতে নবাবকে বিশেষরূপে অনুরোধ করেন। এই সময়ে আমীর বেগ খাঁ হুগলী, হিজলী প্রভৃতি প্রদেশের ফৌজদার ছিলেন।
নবাব ক্লাইবের অনুরোধে নন্দকুমারকে সেই সকল প্রদেশের দেওয়ান নিযুক্ত করিলেন। সেই সময়ে কোম্পানীও নন্দকুমারের কার্য্যে ও ব্যবহারে সন্তুষ্ট হইয়া তাঁহাকে আপনাদের অধীনতায় একটি পদ প্রদান করেন। মীর জাফর পলাশীর যুদ্ধের পূর্ব্বে ইংরেজদিগকে অনেক অর্থ দিতে প্রতিশ্রুত হইয়াছিলেন; কিন্তু সিংহাসনে উপবিষ্ট হইয়া দেখেন যে, রাজকোষ শূন্য। অগত্যা ইংরেজদিগকে তিনি সে টাকার বিনিময়ে বর্দ্ধমান প্রভৃতির রাজস্ব ছাড়িয়া দেন। কোম্পানী নন্দকুমারকে তাঁহাদিগের প্রতি অনুরক্ত বিবেচনা করিয়া, ১৭৫৮ খৃঃ অব্দের ১৯শে আগষ্ট তাঁহাকে ঐ সমস্ত স্থানের তহশীলদার নিযুক্ত করিলেন।
Sarakhon Report 



















