বাঙালি মধ্যবিত্তের সংর্কীনতা নিয়ে মনে হয় সর্বোচ্চ প্রকাশ সত্যজিত রায়ের “ আগন্তুক” চলচ্চিত্রটি। অন্য কোন উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক ও প্রবন্ধে এত সঠিক প্রকাশ দেখা যায় না।
বাঙালি মধ্যবিত্ত কেন এই সংর্কীণতা থেকে বের হতে পারে না তা নিয়ে বাঙালির কোন সমাজ বিজ্ঞানি ওইভাবে গবেষণা করেননি। বাঙালি জীবনে ভবিষ্যতে যদি কোন নাজমুল করিম জম্মান তিনি হয়তো করতে পারেন।
তবে সত্যজিতের আগন্তুক চলচ্চিত্রের মূল চরিত্র তার যখন “ ছোট দাদু” ( এখানে ছোট অর্থ তিনি সম্পর্কে ছোটকে বলছেন না, বলছেন যে ছুট দেয়) হিসেবে তার ছোট্ট নাতিকে বলছেন, কখনও “ কূপমন্ডুক” হবে না- আর এখানেই সত্যজিত রেখে গেছেন বাঙালি মধ্যবিত্ত চরিত্রের সংর্কীর্ণতার মূল কারণ খোঁজার পথটি।
বাঙালি মধ্যবিত্তের সংকীর্ণতার মূল কারণ যদি এই কূপমন্ডুক ধরা হয় তাহলে কিছুটা হলেও আঁচ করা যায় বাঙালি মধ্যবিত্ত কেন মানসিক সংর্কীণতা থেকে বের হতে পারে না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, দেশ বিদেশ ভ্রমন কেন তাদেরকে কূপমন্ডুকই রেখে দেয়।
সৈয়দ মুজতবা আলী বাঙালিকে অনেক বড় চোখে দেখে বলেছেন, বাঙালি সারা পৃথিবীতে ঘোরে বুক পকেটে একটা “ বাংলাদেশ” নিয়ে। সৈয়দ মুজতবা আলী আগন্তুকের নায়কের মতো কূপমন্ডুকতার উর্ধে একজন মুক্ত মানব ছিলেন। তিনিও রবীন্দ্রনাথের সংঙা অনুযায়ী বাঙালির মধ্যে ভুলক্রমে যে দু্ই একজন মানুষ জম্মিয়া যায় তাঁদের একজন। তাই হয়তো তাঁর নিজের দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছে, বাঙালি সারা পৃথিবীতে ঘোরে বুক পকেটে বাংলাদেশকে নিয়ে।
বাস্তবে দেখা যায় বাঙালি সারা পৃথিবী ঘোরে তার দেশকে বুক পকেটে নিয়ে নয়, বরং তার পশ্চাদপদ মানসিক সংকীর্ণতা নিয়ে। তাই বাঙালির মধ্যে যেমন ভুল ক্রমে দুই একজন মানুষ জম্মিয়া যায় তেমনি সংকীর্ণতার উর্ধে উঠতে পারে দুই একজনই। বাদবাকি কূপমন্ডুক বা কুয়োর ব্যাঙের মতো সংকীর্ণতা যার অন্যতম উপাদান প্রতিহিংসা ও পরশ্রীকাতরতা এ নিয়েই পৃথিবীতেই জীবনটা কাটিয়ে যায়। তার জীবনকালে পৃথিবীর ওপর দিয়ে অযুত নিযুত সূর্যের আলো চলে গেলেও সে আলোতে তার মনোজগতের কোন পরিবর্তন আসে না। সে ওই সংকীর্ণ কুয়োর বাসিন্দাই থাকে।