১০:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
সাঙ্গু নদী: বান্দরবানের হৃদয়ে পাহাড়, নদী আর জীবনের ছন্দ একটি বিষয় এখনও জেন- জি দের জন্য ম্যানুয়ালি আছে জাপানে ভালুকের হামলা থামছে না, নীতিতে ‘নিরাপত্তা–সংরক্ষণ’ সমন্বয়ের ভাবনা” নোরা ফাতেহি তার নতুন গান শেয়ার করলেন, শুরু হলো তার পপ গার্ল যুগ ব্ল্যাক ফ্রাইডের আগেই এম৪ ম্যাকবুক এয়ারে রেকর্ড ছাড় বিশ্বের সেরা ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার স্বীকৃতি পেল সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফাকিহ হাসপাতাল সংখ্যালঘু কলেজছাত্রী শমরিয়া রানী নিখোঁজের ১৫ দিন: পরিবার ও মানবাধিকার কর্মীদের রহস্যজনক আচরণের অভিযোগ তারকাখচিত রক অ্যান্ড রোল হল অব ফেম ২০২৫, একযোগে ডিসনি প্লাসে সম্প্রচার  গুগল প্লে ও ইউটিউবের নতুন কেনা সিনেমা আর পড়বে না মুভিজ অ্যানিওয়্যারে সাহিত্য প্রচারে শারজাহের ভূমিকা: সংস্কৃতি ও জ্ঞানের সেতুবন্ধন

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১০৫)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • 59
শশাঙ্ক মণ্ডল

কৃষি ও কৃষক

চতুর্থ অধ্যায়

গ্রামকে পুলিশ ও জোতদার জমিদারের লাঠিয়াল বাহিনীর হাত থেকে রক্ষার জন্য দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা, সংবাদ আদান প্রদানের ব্যবস্থা, গ্রামরক্ষী বাহিনী গঠন করা হল এবং এসব ব্যাপারে সর্বত্র এলাকার কৃষকরা প্রধান ভূমিকা নিল। মহিলারাও পিছিয়ে থাকল না, পরবর্তীকালে তেভাগা আন্দোলনে অনেক মহিলা নির্মম অত্যাচারের সাক্ষী হয়েছে এবং অনেকে শহীদ হয়েছে। পুলিশ গ্রামে ঢোকার সাথে সাথে মহিলারা শাঁখ বাজিয়ে সকলকে সতর্ক করে দিয়েছে; অনেকসময় নেতৃস্থানীয় কর্মীকে মহিলার বেশ ধরিয়ে দূরে সরিয়ে দিতে সাহায্য করেছে। কৃষকরা প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্র লাঠি-বল্লম টাঙ্গি নিয়ে ট্রেনিং ক্যাম্পে যোগ দিচ্ছে। পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের জঙ্গি মেজাজ দেখে যত পিছু হটছে কৃষকদের মনোবল তত বেড়ে যাচ্ছে। চাষিদের আক্রমণের কাছে ছোট ইজারাদার জোতদাররা নতি স্বীকার করছে এই দৃশ্য দেখা গেল সুন্দরবনের বিভিন্ন মহল্লাতে।

সুন্দরবনের ২৪ পরগনা অংশে যখন আন্দোলন চলছে তখন কৃষক সমিতির উদ্যোগে যশোর- এর পাঁজিয়াতে তেভাগার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় কিন্তু মধ্যচাষিদের বিরোধিতায় আন্দোলন দানা বাঁধতে পারেনি। খুলনার ডুমুরিয়া থানার বিভিন্ন গ্রামে তেভাগা আন্দোলন দুর্বার হয়ে ওঠে। বিভিন্ন গ্রামে পুলিশ ক্যাম্পের সাহায্য নিয়ে জোতদার ধান তোলার চেষ্টা করলে জিয়েলতলা গ্রামে পুলিশের সংঘর্ষে একজন কৃষক মারা যায় এবং অনেকে আহত হয়। তৎকালীন বিধান সভার সদস্য জ্যোতি বসু গুলি চালনার তদন্তের জন্য উক্ত গ্রামে আসেন এবং খুলনার গান্ধী ময়দানে বিশাল জনসভায় কৃষকদের ন্যায্য দাবি সমর্থন করেন এবং গুলি চালনার তীব্র প্রতিবাদ করেন। পরবর্তীকালে বিধানসভায় কৃষকদের সমর্থনে তাঁর ভাষণ আমাদের দেশের বিধানসভাগুলির বক্তৃতার শ্রেষ্ঠ নজির হিসাবে অনেকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

শোভনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় তেভাগার দাবিতে আন্দোলন চলে। খুলনার মাকড়ডন ও সেচবুনিয়ায় কৃষকরা সংঘবদ্ধভাবে তেভাগা আন্দোলনে সামিল হয় এবং ভাগচাষিরা জমি দখল রেখে পরবর্তীকালে কয়েক বছর চাষাবাদ করে। দাকোপ, রামপাল প্রভৃতি থানায় তেভাগার দাবিতে আন্দোলন লক্ষ করা যাচ্ছিল। দেশ বিভাগের পরেও এই আন্দেলেনের রেশ চলতে থাকে। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে আন্দোলনকে অনেক জায়গায় বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলা হয় এবং তৎকালীন পাক সরকার শিশুরাষ্ট্রের দোহাই দিয়ে নির্মম অত্যাচার শুরু করে। নড়াইলের কৃষক সংগ্রামে অমল সেন, বাচ্চু ঘোষ, নূরজাহান, কৃষ্ণবিনোদ রায়দের নাম স্মরণীয় হয়ে আছে। খুলনার কৃষক আন্দোলনে প্রমথ ভৌমিক, বিষ্ণু চ্যাটার্জি, খোকা বোস অ্যাডভোকেট আব্দুল জব্বার, কুমার মিত্র সে যুগে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন।

ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টির পূর্ব বাংলার বিস্তীর্ণ এলাকায় কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব থাকলেও বর্গাচাষির আন্দোলনে খুব একটা সক্রিয় ভূমিকা নেয়নি। অবশ্য একথা সত্য ফজলুল হক সাহেব প্রবর্তিত ঋণসালিসি বোর্ড কৃষকদের ঋণ থেকে মুক্তি দিতে যথেষ্ট সাহায্য করেছিল এবং বাংলাদেশের কৃষকদের জীবনে এই সিদ্ধান্ত আর্শীবাদ হিসাবে এসেছিল। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বরিশালের কৃষক আন্দোলনকে প্রভাবিত করার জন্য সেদিন লীগ-এর দোসরদের পক্ষ থেকে বোঝান হয়েছিল সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে দেশ ভাগ হলে দরিদ্র প্রজাদের দুঃখের দিন শেষ হবে।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

সাঙ্গু নদী: বান্দরবানের হৃদয়ে পাহাড়, নদী আর জীবনের ছন্দ

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১০৫)

১২:০০:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
শশাঙ্ক মণ্ডল

কৃষি ও কৃষক

চতুর্থ অধ্যায়

গ্রামকে পুলিশ ও জোতদার জমিদারের লাঠিয়াল বাহিনীর হাত থেকে রক্ষার জন্য দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা, সংবাদ আদান প্রদানের ব্যবস্থা, গ্রামরক্ষী বাহিনী গঠন করা হল এবং এসব ব্যাপারে সর্বত্র এলাকার কৃষকরা প্রধান ভূমিকা নিল। মহিলারাও পিছিয়ে থাকল না, পরবর্তীকালে তেভাগা আন্দোলনে অনেক মহিলা নির্মম অত্যাচারের সাক্ষী হয়েছে এবং অনেকে শহীদ হয়েছে। পুলিশ গ্রামে ঢোকার সাথে সাথে মহিলারা শাঁখ বাজিয়ে সকলকে সতর্ক করে দিয়েছে; অনেকসময় নেতৃস্থানীয় কর্মীকে মহিলার বেশ ধরিয়ে দূরে সরিয়ে দিতে সাহায্য করেছে। কৃষকরা প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্র লাঠি-বল্লম টাঙ্গি নিয়ে ট্রেনিং ক্যাম্পে যোগ দিচ্ছে। পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের জঙ্গি মেজাজ দেখে যত পিছু হটছে কৃষকদের মনোবল তত বেড়ে যাচ্ছে। চাষিদের আক্রমণের কাছে ছোট ইজারাদার জোতদাররা নতি স্বীকার করছে এই দৃশ্য দেখা গেল সুন্দরবনের বিভিন্ন মহল্লাতে।

সুন্দরবনের ২৪ পরগনা অংশে যখন আন্দোলন চলছে তখন কৃষক সমিতির উদ্যোগে যশোর- এর পাঁজিয়াতে তেভাগার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় কিন্তু মধ্যচাষিদের বিরোধিতায় আন্দোলন দানা বাঁধতে পারেনি। খুলনার ডুমুরিয়া থানার বিভিন্ন গ্রামে তেভাগা আন্দোলন দুর্বার হয়ে ওঠে। বিভিন্ন গ্রামে পুলিশ ক্যাম্পের সাহায্য নিয়ে জোতদার ধান তোলার চেষ্টা করলে জিয়েলতলা গ্রামে পুলিশের সংঘর্ষে একজন কৃষক মারা যায় এবং অনেকে আহত হয়। তৎকালীন বিধান সভার সদস্য জ্যোতি বসু গুলি চালনার তদন্তের জন্য উক্ত গ্রামে আসেন এবং খুলনার গান্ধী ময়দানে বিশাল জনসভায় কৃষকদের ন্যায্য দাবি সমর্থন করেন এবং গুলি চালনার তীব্র প্রতিবাদ করেন। পরবর্তীকালে বিধানসভায় কৃষকদের সমর্থনে তাঁর ভাষণ আমাদের দেশের বিধানসভাগুলির বক্তৃতার শ্রেষ্ঠ নজির হিসাবে অনেকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

শোভনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় তেভাগার দাবিতে আন্দোলন চলে। খুলনার মাকড়ডন ও সেচবুনিয়ায় কৃষকরা সংঘবদ্ধভাবে তেভাগা আন্দোলনে সামিল হয় এবং ভাগচাষিরা জমি দখল রেখে পরবর্তীকালে কয়েক বছর চাষাবাদ করে। দাকোপ, রামপাল প্রভৃতি থানায় তেভাগার দাবিতে আন্দোলন লক্ষ করা যাচ্ছিল। দেশ বিভাগের পরেও এই আন্দেলেনের রেশ চলতে থাকে। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে আন্দোলনকে অনেক জায়গায় বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলা হয় এবং তৎকালীন পাক সরকার শিশুরাষ্ট্রের দোহাই দিয়ে নির্মম অত্যাচার শুরু করে। নড়াইলের কৃষক সংগ্রামে অমল সেন, বাচ্চু ঘোষ, নূরজাহান, কৃষ্ণবিনোদ রায়দের নাম স্মরণীয় হয়ে আছে। খুলনার কৃষক আন্দোলনে প্রমথ ভৌমিক, বিষ্ণু চ্যাটার্জি, খোকা বোস অ্যাডভোকেট আব্দুল জব্বার, কুমার মিত্র সে যুগে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন।

ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টির পূর্ব বাংলার বিস্তীর্ণ এলাকায় কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব থাকলেও বর্গাচাষির আন্দোলনে খুব একটা সক্রিয় ভূমিকা নেয়নি। অবশ্য একথা সত্য ফজলুল হক সাহেব প্রবর্তিত ঋণসালিসি বোর্ড কৃষকদের ঋণ থেকে মুক্তি দিতে যথেষ্ট সাহায্য করেছিল এবং বাংলাদেশের কৃষকদের জীবনে এই সিদ্ধান্ত আর্শীবাদ হিসাবে এসেছিল। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বরিশালের কৃষক আন্দোলনকে প্রভাবিত করার জন্য সেদিন লীগ-এর দোসরদের পক্ষ থেকে বোঝান হয়েছিল সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে দেশ ভাগ হলে দরিদ্র প্রজাদের দুঃখের দিন শেষ হবে।