ইউনেস্কোর উদ্যোগে টেকসই উত্তরাধিকার
শারজাহ আন্তর্জাতিক বইমেলা ২০২৫-এ আয়োজিত এক বিশেষ সেশনে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইউনেস্কোর ‘ওয়ার্ল্ড বুক ক্যাপিটাল’ উদ্যোগের প্রকৃত সাফল্য নির্ভর করে এর উত্তরাধিকার টিকিয়ে রাখার সক্ষমতার ওপর।
সাহিত্য—সংস্কৃতির সেতু
চলমান ৪৪তম শারজাহ আন্তর্জাতিক বইমেলা (SIBF)-এর একটি আলোচনায় শারজাহ ও এথেন্সের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিরা একমত হন যে সাহিত্য মানবতার সবচেয়ে টেকসই সাংস্কৃতিক সেতু। “ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড বুক ক্যাপিটাল ইনিশিয়েটিভ” শীর্ষক আলোচনায় সাহিত্য ও পাঠাভ্যাসের মাধ্যমে বৈশ্বিক সংলাপকে কীভাবে আরও দৃঢ় করা যায়, সে বিষয়েই গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সেশনটি পরিচালনা করেন কালিমাত ফাউন্ডেশনের পরিচালক আমনা আল মাজমি। তিনি বলেন, “শারজাহ সবসময়ই এমন একটি জায়গা, যেখানে সৃজনশীলতা ও জ্ঞান একসঙ্গে বিকশিত হয়।”
শতবর্ষের জ্ঞানভিত্তিক যাত্রা
প্যানেলিস্ট মারওয়া আল আকরুবি, যিনি শারজাহ ওয়ার্ল্ড বুক ক্যাপিটাল ২০১৯-এর প্রকল্পনেতা এবং হাউস অব উইজডমের নির্বাহী পরিচালক, বলেন, “শারজাহ সংস্কৃতিতে তার অবস্থান গড়ে তুলেছিল অনেক আগে থেকেই; এই উপাধি কেবল তার স্বীকৃতি দিয়েছে।”

তিনি উল্লেখ করেন, এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে শারজাহ শিক্ষা, জ্ঞান ও গ্রন্থাগার গঠনে বিনিয়োগ করেছে। ড. শেখ সুলতান বিন মোহাম্মদ আল কাসিমির দূরদর্শী নেতৃত্বে শারজাহ সাংস্কৃতিক উন্নয়নের এক স্থায়ী ভিত্তি স্থাপন করেছে।
এর অন্যতম উদাহরণ হলো “হোম লাইব্রেরি” প্রকল্প, যার মাধ্যমে ৪২,৩৬৬টি এমিরাতি পরিবারকে সম্পূর্ণ সাজানো ব্যক্তিগত লাইব্রেরি উপহার দেওয়া হয়েছে—যা আরব অঞ্চলে এক অনন্য উদ্যোগ।
এথেন্সের পুনর্জাগরণে বইয়ের ভূমিকা
ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড বুক ক্যাপিটাল নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও পেন গ্রিসের প্রতিনিধি, আনা রাউসি, বলেন, “গ্রিস যখন অর্থনৈতিক মন্দায় ভুগছিল, তখন এথেন্স ‘ওয়ার্ল্ড বুক ক্যাপিটাল’ উপাধি পেয়ে নতুন প্রাণ ফিরে পায়।”
তিনি জানান, এ উদ্যোগ গ্রিসে সংস্কৃতির প্রতি মানুষের গর্ব ফিরিয়ে আনে এবং বইকে আবারও জীবনের অংশ করে তোলে। “আমরা বইকে শিল্প, সঙ্গীত ও চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত করেছি, যেন পাঠাভ্যাস হয় আনন্দদায়ক ও সবার জন্য উন্মুক্ত।”
উত্তরাধিকার টিকিয়ে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ
দুই বক্তাই একমত হন যে এই উপাধির আসল পরীক্ষা হলো এর স্থায়ী প্রভাব বজায় রাখা। আল আকরুবি বলেন, “শারজাহ নিয়মিত নতুন উদ্যোগ, প্রকাশনা প্রকল্প ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এই যাত্রা অব্যাহত রেখেছে।”
তিনি আরও জানান, শারজাহ বৈশ্বিক মানবিক কর্মকাণ্ডেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে—যেমন বৈরুত বন্দরের বিস্ফোরণের পর স্থানীয় গ্রন্থাগার পুনর্গঠনে সহায়তা এবং আফ্রিকার গিনি ও অন্যান্য সংকটপীড়িত অঞ্চলের স্কুলগুলোতে শিক্ষাসামগ্রী প্রেরণ করছে।

তার ভাষায়, “এসব প্রচেষ্টা রাজনৈতিক নয়; এগুলো জ্ঞান ও সংস্কৃতির সেতু।”
রাউসি বলেন, “ওয়ার্ল্ড বুক ক্যাপিটাল নেটওয়ার্ক কেবল এক বছরের উপাধি নয়; এটি সহযোগিতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক, যা সংস্কৃতিকে জীবন্ত রাখে।”
বই—সভ্যতার প্রাণ
আলোচনার শেষে বক্তারা বলেন, শারজাহ ও এথেন্স প্রমাণ করেছে যে বই কেবল মুদ্রিত বস্তু নয়, বরং সমাজের বিকাশ ও পারস্পরিক সংযোগের ভিত্তি।
শারজাহ আন্তর্জাতিক বইমেলা ২০২৫-এর আয়োজন
এই বছর ৫ নভেম্বর শুরু হওয়া SIBF ২০২৫-এ ৬৬টি দেশের ২৫০ জনেরও বেশি লেখক, শিল্পী ও চিন্তাবিদ অংশ নিচ্ছেন। “বিটুইন ইউ অ্যান্ড আ বুক” থিমে আয়োজিত এই ১২ দিনের মেলায় অংশ নিচ্ছে ২,৩৫০ প্রকাশক—যার মধ্যে রয়েছে ১,২২৪টি আরব ও ১,১২৬টি আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থা। এখানে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকছে লক্ষাধিক বইয়ের সম্ভার।
#SharjahInternationalBookFair #WorldBookCapital #Sharjah #Athens #Literature #Culture #SIBF2025 #Books
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















