০১:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
রোলিং স্টোন স্পেশাল ও ডিজে স্নেকের গানে একদিনেই তিন ফ্রন্ট খুলল স্ট্রে কিডস হরর-কমেডি ‘মেকিং আ ব্রাইডসমেইড’ শেষ, এখন স্ট্রিমিং বিক্রির পথে কেক বানানোর কৌশল: ঘরে বসেই নিখুঁত বেকিংয়ের গাইড লস অ্যাঞ্জেলেসে গ্র্যান্ডে–এরিভোর চমক, ক্লাসিক ডুয়েটেই মাত করল হলিউড মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (অন্তিম পর্ব-৩৬৫) বলিউডের ‘হক’ মুক্তি, আলোচনায় বাস্তব মামলার অনুপ্রেরণা তিন দফা দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে প্রাথমিক শিক্ষকরা নারী নেতৃত্বের প্রতীক ন্যান্সি পেলোসি: যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস থেকে বিদায় এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি পেঁয়াজ নিয়ে নতুন আতঙ্ক , সবজির দামে যখন মানুষ হাঁপিয়ে উঠেছে ফরিদপুরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে আগুন, ভাঙচুর ও আহত ২০ জন

বিশ্বে আলোচিত পাঁচ বিজ্ঞানী

  • Sarakhon Report
  • ১০:১৯:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪
  • 57

মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান

বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা শুধু আগেই নন, এখনো বিশ্বে বিভিন্ন স্থানে সুনামের সাথে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করে চলেছেন। এমনই পাঁচজন বিজ্ঞানীর কথা এখানে তুলে ধরা হলো:

ড. মোহাম্মদ আতাউল করিম

সিলেটের মৌলভীবাজারে জন্ম নেয়া পদার্থবিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ আতাউল করিম (জন্ম ১৯৫৩) ফৌজদারহাট ক্যাডেটে পড়ার সময় যে কঠিন নিয়মের মধ্যে বড় হয়েছেন তা তার জীবনে ব্যাপক প্রভাব রেখেছে। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মেধা তালিকায় স্থান লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মেধাবী ছাত্র বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেটস ডার্টমাউথের প্রোভোস্ট এবং এক্সিকিউটিভ ভাইস চ্যান্সেলর। অপটিক্যাল সিস্টেম, অপটিকাল কমপিউটিং এবং প্যাটার্ন রিকগনিশনে বিশ্বের শীর্ষ ৫০ বিজ্ঞানীর একজন ধরা হয় তাকে।

১৯৮৭ সাল থেকে ম্যাগনেটিভ লেভিটেশন বা ম্যাগলেভ ট্রেন নিয়ে আতাউল করিমের গবেষণা তাকে সারা পৃথিবীতে পরিচিত করে তোলে। যে গবেষণায় সাত বছরেও আলোর মুখ দেখে নি তিনি দায়িত্ব নিয়ে মাত্র দেড় বছরে তা সম্ভব করেন। জার্মানি, চায়না, জাপান ম্যাগলেভ ট্রেন আগেই ব্যবহার শুরু করলেও তার আবিষ্কৃত প্রযুক্তিতে এই ট্রেন হয়েছে দৃষ্টিনন্দন, সাশ্রয়ী এবং দ্রুতগতিসম্পন্ন। ট্রেন চালু হওয়ার পর তার ট্রেনের চাকা লাইনকে স্পর্শ করবে না। নির্মাণ ব্যয় অন্য দেশ থেকে শতকরা নব্বই ভাগ কমিয়ে মাত্র দশভাগে নামিয়ে আনেন। তিনি বিভন্ন পর্যায়ে ৩২৭টি গবেষণা করেছেন। তার গবেষণার বিষয়ের মধ্যে আছে বায়োফিজিক্স, ননলিনিয়ার ইমেজ প্রসেসিং, ইলেক্ট্রো অপটিকাল ডিসপ্লেইস, অপটিকাল কমপিউটিং, শ্যাওলা থেকে জ্বালানি তৈরি, নাইট ভিশন, ইনফরমেশন প্রসেসিং, ইলেকট্রো অপটিকাল সিস্টেম অ্যান্ড রেসপন্স ইত্যাদি। আমেরিকান সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নাসা, ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন, ইডুকেশন ডিপার্টমেন্ট, ন্যাভাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি, রাইট প্যাটারসন ল্যাবরেটরি সহ প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলো তার কাজে পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে।

ড. এম জাহিদ হাসান

‘যারা বলেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান হয় না, তারা হয় বাংলা জানেন না, নয় বিজ্ঞান বোঝেন না।’

বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর এই উক্তিতে ছেলেবেলা থেকেই প্রভাবিত হয়েছিলেন বর্তমানে আমেরিকার প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক পদার্থবিজ্ঞানী ড. এম জাহিদ হাসান তাপস। তিনি ধানমণ্ডি সরকারি বালক বিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসিতে মেধা তালিকায় স্থান করে নেন। ১৯২৯ সালে ‘ভাইল ফার্মিয়ান’ নামে একটি অধরা কণার ধারণা দিয়েছিলেন নোবেল জয়ী পদার্থবিদ হারম্যান ভাইল। এই ঘটনার ৮৫ বছর পর ২০১৪ সালে ভাইল ফার্মিয়ান কণার আবিস্কার করেন ড. জাহিদ হাসান। ২০১৮ সালে নেচার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয় জাহিদ হাসানের আরেকটি বড় আবিস্কারের কথা। এবার তিনি আবিস্কার করেন ‘টপোলজিক্যাল ক্যাগোমে কোয়ান্টাম চুম্বক’। এই আবিস্কারের ফলে কমপিউটার শতগুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন হবে এবং মেডিকাল পরীক্ষা নিরীক্ষার ক্ষেত্রে যুক্ত হবে নতুন প্রযুক্তি। জাহিদ হাসানের প্রকাশিত প্রবন্ধ ব্যাপক ভাবে প্রশংসিত হয়েছে পৃথিবী জুড়ে। তিনি এখন পৃথিবীর অন্যতম মোস্ট সাইটেট সায়েন্টিস্ট। তার লেখা উদ্ধৃত করা হয়েছে হয়েছে চল্লিশ হাজার বার।

সেলিম শাহরিয়ার

১৩০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে দুটো কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষের ফলে যে তরঙ্গ উঠেছিল তার সংকেত এসে ধরা পড়ে এক যন্ত্রে। পাবনার বেড়ায় জন্ম নেয়া আমেরিকার নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেলিম শাহরিয়ার (জন্ম ১৯৬৪) ও তার অন্য সঙ্গীরা এই যন্ত্র তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তার সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়টির  প্রকাশনায় মন্তব্য করা হয়েছে, ‘সেলিম শাহরিয়ার অবদান রেখেছেন মহাকর্ষ তরঙ্গ আবিষ্কারে’। অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের শত বছর আগে বলা আপেক্ষিকতার সূত্রের প্রমাণ এই আবিষ্কারের মাধ্যমে হয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। ঢাকা কলেজে পাঠ শেষ করে এমআইটিতে পড়তে চলে যান সেলিম শাহরিয়ার। নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ইলেট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, কমপিউটার সায়েন্স, পদার্থবিজ্ঞান এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক। পাশাপাশি অ্যাটমিক অ্যান্ড ফোটোনিক টেকনোলজি ল্যাবরেটরির (এপিটিএল)-এর পরিচালক। ১০ বছর চেষ্টা করে তিনি লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ অবজারভেটরি (লাইগো)-র তরঙ্গ সনাক্তকারী যন্ত্রের সংবেদনশীলতা ও ব্যান্ডউইথ বাড়ানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ২০১৫ সালে যন্ত্রের একটি এন্টেনা এক সেকেন্ডের পাঁচ ভাগের এক ভাগ সময়ের জন্য একটা প্রোটনের এক হাজার ভাগের এক ভাগ পরিসরে নড়ে ওঠে। তারা এই যন্ত্রের সংবেদনশীলতা ২০ গুণ বাড়িয়ে মহাকাশে আট হাজার গুণ বড় পরিসরকে তাদের পরীক্ষার আওতায় আনতে পারবেন। এই আবিষ্কারের কারণে পুরো লাইগো টিম তিন মিলিয়ন ডলারের ব্রেকথ্রু পুরষ্কার জেতে। যাদের মধ্যে সেলিম শাহরিয়ার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের সাবেক শিক্ষার্থী দীপঙ্কর তালুকদার আছেন। এই টিমে আছেন পশ্চিমবঙ্গের আরো পাঁচ বাঙালি বিজ্ঞানী সোমক রায়চৌধুরী, তরুণ সৌরদীপ, সুকান্ত বসু, আনন্দ সেনগুপ্ত ও সঞ্জিত মিত্র।

সেলিম শাহরিয়ার এখন আণবিক ঘড়ি তৈরির কাজে ব্যস্ত আছেন। এই ঘড়ি যখন বিভিন্ন গ্রহে পালসার হিসেবে বসানো হবে তখন তরঙ্গ দিয়ে গবেষণা করা যাবে। এর আগে শুধু আলো দিয়ে মহাকাশ গবেষণা হয়েছে।

রুবাব খান

ঢাকার উদয়ন স্কুলের বাংলা মিডিয়ামে ক্লাস সিক্সে থাকতেই অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট হওয়ার মনছবি দেখা শুরু করেন রুবাব ইমরোজ খান সৌরভ। অ্যাস্ট্রোফিজিক্স বাংলাদেশে পড়ানো হতো না। অথচ এই বিষয়টির সূচনা করেছিলেন একজন বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু। রুবার খান সেই পরম্পরাকেই ধরে রেখেছেন। তিনি আমেরিকার কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন। তিনি তার পিএইচডি থিসিস উৎসর্গ করেন জন্মভূমি বাংলাদেশকে। আমেরিকায় তিনি নাসায় যোগদান করেন। নাসাতে রুবাব খান শুরুতে দায়িত্ব পান হাবল, স্পিটজার ও হার্শেল নামের তিনটি টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করা। এরপর তিনি ও তার দল জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের দায়িত্ব পান যেটি মহাশূন্যে পাঠানো হয় পরবর্তী প্রজন্মের পরিদর্শক হিসেবে। জ্যোতির্বিজ্ঞানী রুবাব খানের নেতৃত্বে তার গবেষণা দল পরবর্তীতে খুঁজে পায় পাঁচটি মহাতারকা। পৃথিবীর ১০ হাজার আলোকবর্ষের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল ও বড় আকারের নক্ষত্রের নাম ‘এটা ক্যারিনাই’। এটি সূর্যের চেয়ে প্রায় দেড়শ গুণ বড়। আগে ধারণা করা হতো এতো বড় নক্ষত্র নভোম-লে আর নেই। রুবাব খানের দল সে ধারণা বদলে দিয়ে এটা ক্যারিনাই- এর সমমানের পাঁচটি মহাতারকার খোঁজ পেয়েছেন। এই আবিস্কার মহাকাশ গবেষণাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে।

দীপঙ্কর তালুকদার

লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ অবজারভেটরি (লাইগো)-র যে বিজ্ঞানী টিম ২০১৫ সালে দুই ব্ল্যাকহোলের মিলনের ফলে সৃষ্ট তরঙ্গ সনাক্ত করেন তাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের সাবেক শিক্ষার্থী দীপঙ্কর তালুকদার (জন্ম ১৯৭৭) আছেন। তিনি যখন লাইগোর হয়ে তরঙ্গ সনাক্তকরণের কাজে ব্যস্ত তখন তার মায়ের মৃত্যু হলেও দেশে আসতে পারেন নি। বরগুনার সন্তান দীপঙ্কর আমেরিকায় শিক্ষক হিসেবে পান স্টিফেন হকিংকে। আমেরিকায় তার গবেষনার বিষয় ছিল ‘মহাকাশের স্থানীয় অ্যাস্ট্রো ফিজিকাল উৎসসমূহ থেকে কীভাবে দীর্ঘকালীন মহাকর্ষ তরঙ্গ খোঁজা যায়’। বরগুনায় ছেলেবেলায় তাদের আর্থিক চ্যালেঞ্জের কথা ভোলেন নি তিনি। তবে আর্থিক সীমাবদ্ধতা নয়, ‘একজন মানুষ যথেষ্ট চেষ্টা করে নি বলেই ব্যর্থ হয়’বলে তিনি মনে করেন।

লেখক পরিচিতি: সাংবাদিক ও গবেষক

জনপ্রিয় সংবাদ

রোলিং স্টোন স্পেশাল ও ডিজে স্নেকের গানে একদিনেই তিন ফ্রন্ট খুলল স্ট্রে কিডস

বিশ্বে আলোচিত পাঁচ বিজ্ঞানী

১০:১৯:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান

বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা শুধু আগেই নন, এখনো বিশ্বে বিভিন্ন স্থানে সুনামের সাথে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করে চলেছেন। এমনই পাঁচজন বিজ্ঞানীর কথা এখানে তুলে ধরা হলো:

ড. মোহাম্মদ আতাউল করিম

সিলেটের মৌলভীবাজারে জন্ম নেয়া পদার্থবিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ আতাউল করিম (জন্ম ১৯৫৩) ফৌজদারহাট ক্যাডেটে পড়ার সময় যে কঠিন নিয়মের মধ্যে বড় হয়েছেন তা তার জীবনে ব্যাপক প্রভাব রেখেছে। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মেধা তালিকায় স্থান লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মেধাবী ছাত্র বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেটস ডার্টমাউথের প্রোভোস্ট এবং এক্সিকিউটিভ ভাইস চ্যান্সেলর। অপটিক্যাল সিস্টেম, অপটিকাল কমপিউটিং এবং প্যাটার্ন রিকগনিশনে বিশ্বের শীর্ষ ৫০ বিজ্ঞানীর একজন ধরা হয় তাকে।

১৯৮৭ সাল থেকে ম্যাগনেটিভ লেভিটেশন বা ম্যাগলেভ ট্রেন নিয়ে আতাউল করিমের গবেষণা তাকে সারা পৃথিবীতে পরিচিত করে তোলে। যে গবেষণায় সাত বছরেও আলোর মুখ দেখে নি তিনি দায়িত্ব নিয়ে মাত্র দেড় বছরে তা সম্ভব করেন। জার্মানি, চায়না, জাপান ম্যাগলেভ ট্রেন আগেই ব্যবহার শুরু করলেও তার আবিষ্কৃত প্রযুক্তিতে এই ট্রেন হয়েছে দৃষ্টিনন্দন, সাশ্রয়ী এবং দ্রুতগতিসম্পন্ন। ট্রেন চালু হওয়ার পর তার ট্রেনের চাকা লাইনকে স্পর্শ করবে না। নির্মাণ ব্যয় অন্য দেশ থেকে শতকরা নব্বই ভাগ কমিয়ে মাত্র দশভাগে নামিয়ে আনেন। তিনি বিভন্ন পর্যায়ে ৩২৭টি গবেষণা করেছেন। তার গবেষণার বিষয়ের মধ্যে আছে বায়োফিজিক্স, ননলিনিয়ার ইমেজ প্রসেসিং, ইলেক্ট্রো অপটিকাল ডিসপ্লেইস, অপটিকাল কমপিউটিং, শ্যাওলা থেকে জ্বালানি তৈরি, নাইট ভিশন, ইনফরমেশন প্রসেসিং, ইলেকট্রো অপটিকাল সিস্টেম অ্যান্ড রেসপন্স ইত্যাদি। আমেরিকান সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নাসা, ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন, ইডুকেশন ডিপার্টমেন্ট, ন্যাভাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি, রাইট প্যাটারসন ল্যাবরেটরি সহ প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলো তার কাজে পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে।

ড. এম জাহিদ হাসান

‘যারা বলেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান হয় না, তারা হয় বাংলা জানেন না, নয় বিজ্ঞান বোঝেন না।’

বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর এই উক্তিতে ছেলেবেলা থেকেই প্রভাবিত হয়েছিলেন বর্তমানে আমেরিকার প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক পদার্থবিজ্ঞানী ড. এম জাহিদ হাসান তাপস। তিনি ধানমণ্ডি সরকারি বালক বিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসিতে মেধা তালিকায় স্থান করে নেন। ১৯২৯ সালে ‘ভাইল ফার্মিয়ান’ নামে একটি অধরা কণার ধারণা দিয়েছিলেন নোবেল জয়ী পদার্থবিদ হারম্যান ভাইল। এই ঘটনার ৮৫ বছর পর ২০১৪ সালে ভাইল ফার্মিয়ান কণার আবিস্কার করেন ড. জাহিদ হাসান। ২০১৮ সালে নেচার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয় জাহিদ হাসানের আরেকটি বড় আবিস্কারের কথা। এবার তিনি আবিস্কার করেন ‘টপোলজিক্যাল ক্যাগোমে কোয়ান্টাম চুম্বক’। এই আবিস্কারের ফলে কমপিউটার শতগুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন হবে এবং মেডিকাল পরীক্ষা নিরীক্ষার ক্ষেত্রে যুক্ত হবে নতুন প্রযুক্তি। জাহিদ হাসানের প্রকাশিত প্রবন্ধ ব্যাপক ভাবে প্রশংসিত হয়েছে পৃথিবী জুড়ে। তিনি এখন পৃথিবীর অন্যতম মোস্ট সাইটেট সায়েন্টিস্ট। তার লেখা উদ্ধৃত করা হয়েছে হয়েছে চল্লিশ হাজার বার।

সেলিম শাহরিয়ার

১৩০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে দুটো কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষের ফলে যে তরঙ্গ উঠেছিল তার সংকেত এসে ধরা পড়ে এক যন্ত্রে। পাবনার বেড়ায় জন্ম নেয়া আমেরিকার নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেলিম শাহরিয়ার (জন্ম ১৯৬৪) ও তার অন্য সঙ্গীরা এই যন্ত্র তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তার সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়টির  প্রকাশনায় মন্তব্য করা হয়েছে, ‘সেলিম শাহরিয়ার অবদান রেখেছেন মহাকর্ষ তরঙ্গ আবিষ্কারে’। অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের শত বছর আগে বলা আপেক্ষিকতার সূত্রের প্রমাণ এই আবিষ্কারের মাধ্যমে হয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। ঢাকা কলেজে পাঠ শেষ করে এমআইটিতে পড়তে চলে যান সেলিম শাহরিয়ার। নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ইলেট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, কমপিউটার সায়েন্স, পদার্থবিজ্ঞান এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক। পাশাপাশি অ্যাটমিক অ্যান্ড ফোটোনিক টেকনোলজি ল্যাবরেটরির (এপিটিএল)-এর পরিচালক। ১০ বছর চেষ্টা করে তিনি লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ অবজারভেটরি (লাইগো)-র তরঙ্গ সনাক্তকারী যন্ত্রের সংবেদনশীলতা ও ব্যান্ডউইথ বাড়ানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ২০১৫ সালে যন্ত্রের একটি এন্টেনা এক সেকেন্ডের পাঁচ ভাগের এক ভাগ সময়ের জন্য একটা প্রোটনের এক হাজার ভাগের এক ভাগ পরিসরে নড়ে ওঠে। তারা এই যন্ত্রের সংবেদনশীলতা ২০ গুণ বাড়িয়ে মহাকাশে আট হাজার গুণ বড় পরিসরকে তাদের পরীক্ষার আওতায় আনতে পারবেন। এই আবিষ্কারের কারণে পুরো লাইগো টিম তিন মিলিয়ন ডলারের ব্রেকথ্রু পুরষ্কার জেতে। যাদের মধ্যে সেলিম শাহরিয়ার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের সাবেক শিক্ষার্থী দীপঙ্কর তালুকদার আছেন। এই টিমে আছেন পশ্চিমবঙ্গের আরো পাঁচ বাঙালি বিজ্ঞানী সোমক রায়চৌধুরী, তরুণ সৌরদীপ, সুকান্ত বসু, আনন্দ সেনগুপ্ত ও সঞ্জিত মিত্র।

সেলিম শাহরিয়ার এখন আণবিক ঘড়ি তৈরির কাজে ব্যস্ত আছেন। এই ঘড়ি যখন বিভিন্ন গ্রহে পালসার হিসেবে বসানো হবে তখন তরঙ্গ দিয়ে গবেষণা করা যাবে। এর আগে শুধু আলো দিয়ে মহাকাশ গবেষণা হয়েছে।

রুবাব খান

ঢাকার উদয়ন স্কুলের বাংলা মিডিয়ামে ক্লাস সিক্সে থাকতেই অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট হওয়ার মনছবি দেখা শুরু করেন রুবাব ইমরোজ খান সৌরভ। অ্যাস্ট্রোফিজিক্স বাংলাদেশে পড়ানো হতো না। অথচ এই বিষয়টির সূচনা করেছিলেন একজন বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু। রুবার খান সেই পরম্পরাকেই ধরে রেখেছেন। তিনি আমেরিকার কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন। তিনি তার পিএইচডি থিসিস উৎসর্গ করেন জন্মভূমি বাংলাদেশকে। আমেরিকায় তিনি নাসায় যোগদান করেন। নাসাতে রুবাব খান শুরুতে দায়িত্ব পান হাবল, স্পিটজার ও হার্শেল নামের তিনটি টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করা। এরপর তিনি ও তার দল জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের দায়িত্ব পান যেটি মহাশূন্যে পাঠানো হয় পরবর্তী প্রজন্মের পরিদর্শক হিসেবে। জ্যোতির্বিজ্ঞানী রুবাব খানের নেতৃত্বে তার গবেষণা দল পরবর্তীতে খুঁজে পায় পাঁচটি মহাতারকা। পৃথিবীর ১০ হাজার আলোকবর্ষের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল ও বড় আকারের নক্ষত্রের নাম ‘এটা ক্যারিনাই’। এটি সূর্যের চেয়ে প্রায় দেড়শ গুণ বড়। আগে ধারণা করা হতো এতো বড় নক্ষত্র নভোম-লে আর নেই। রুবাব খানের দল সে ধারণা বদলে দিয়ে এটা ক্যারিনাই- এর সমমানের পাঁচটি মহাতারকার খোঁজ পেয়েছেন। এই আবিস্কার মহাকাশ গবেষণাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে।

দীপঙ্কর তালুকদার

লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ অবজারভেটরি (লাইগো)-র যে বিজ্ঞানী টিম ২০১৫ সালে দুই ব্ল্যাকহোলের মিলনের ফলে সৃষ্ট তরঙ্গ সনাক্ত করেন তাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের সাবেক শিক্ষার্থী দীপঙ্কর তালুকদার (জন্ম ১৯৭৭) আছেন। তিনি যখন লাইগোর হয়ে তরঙ্গ সনাক্তকরণের কাজে ব্যস্ত তখন তার মায়ের মৃত্যু হলেও দেশে আসতে পারেন নি। বরগুনার সন্তান দীপঙ্কর আমেরিকায় শিক্ষক হিসেবে পান স্টিফেন হকিংকে। আমেরিকায় তার গবেষনার বিষয় ছিল ‘মহাকাশের স্থানীয় অ্যাস্ট্রো ফিজিকাল উৎসসমূহ থেকে কীভাবে দীর্ঘকালীন মহাকর্ষ তরঙ্গ খোঁজা যায়’। বরগুনায় ছেলেবেলায় তাদের আর্থিক চ্যালেঞ্জের কথা ভোলেন নি তিনি। তবে আর্থিক সীমাবদ্ধতা নয়, ‘একজন মানুষ যথেষ্ট চেষ্টা করে নি বলেই ব্যর্থ হয়’বলে তিনি মনে করেন।

লেখক পরিচিতি: সাংবাদিক ও গবেষক