০২:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
অ্যামাজন বন বিপদে: খরা, বন উজাড় আর মানুষের চাপ মস্তিষ্কের সুরক্ষা: অ্যালকোহল কমিয়ে আনুন, কমান স্ট্রোক ও মস্তিষ্ক ক্ষতির ঝুঁকি বিশ্বের তেল সম্পদের নতুন এলাকা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে আর্থিক পরামর্শকের ভূমিকা: কখন প্রয়োজন পেশাদার সহায়তা নিউইয়র্কের আকাশছোঁয়া মানবিক স্থাপনা: জেপি মরগান চেজ ভবনের নতুন দিগন্ত স্ট্যাটিনের বাইরে নতুন আশা: উচ্চ কোলেস্টেরল কমাতে আসছে আধুনিক ওষুধ ও জিন-সম্পাদনার যুগ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) দক্ষ কর্মীরাই এখন অফিসের নতুন তারকা চীনের নৌবাহিনীতে নতুন শক্তি যোগ: ফুজিয়ান বিমানবাহী রণতরী আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধে নতুন উপাদান: অ্যান্টিমনি অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্র থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়া সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণের পর ট্রাম্প-মধ্যস্থ শান্তি চুক্তি স্থগিত

ইশকুল (শেষ-পর্ব)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪
  • 59

আর্কাদি গাইদার

অষ্টম পরিচ্ছেদ

অনিচ্ছাসত্ত্বেও পাকচক্রে যখন থেকে আমি বাবার সহযোগী হয়ে দাঁড়িয়েছিলুম তখন থেকেই তাঁর সঙ্গে অন্যভাবে কথা বলতুম বয়সে বড় অথচ সমকক্ষ লোকের সঙ্গে যেভাবে লোকে কথা কয়, সেইভাবে। আমি বুঝতে পারতুম, বাবা এই ভঙ্গিটা পছন্দ করছিলেন।

‘আমার ফুর্তি’ লাগছে এইজন্যে যে রোমাঞ্চকর সময় শুরু হতে চলেছে। যথেষ্ট চোখের জল ফেলেছি আমরা! আচ্ছা, ঠিক আছে। এখন একছুটে বাড়ি চলে যাও দেখি। আবার শিগগিরই আমাদের দেখা হবে, কেমন?’ বাবা বললেন।

বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল। বিদায় জানিয়ে কোটটা গায়ে দিয়ে দৌড়ে বাইরের বারান্দায় এলুম। কিন্তু চৌকিদার এগিয়ে এসে আমার পেছনে দরজাটা বন্ধ করার আগেই আমার মনে হল কে যেন আমায় একপাশে ছুড়ে ফেলে দিল। এত জোরে ছুড়ে দিল যে উড়ে গিয়ে মাথা গুঁজে একরাশ হালকা তুষারস্তূপে পড়লুম। ঠিক সেই মুহূর্তে শুনতে পেলুম দোরগোড়ায় অনেকগুলো পায়ের দাপাদাপি, হইল্লের আওয়াজ আর লোকের চিৎকার। চট করে উঠে ফিরে এসে দেখলুম পুলিশম্যান এভূগ্রাফ তিমোফেইচ দাঁড়িয়ে আছে সামনে। ওর ছেলে পাক্কা একসময় আমার সঙ্গে একই প্রাথমিক ইশকুলে পড়েছিল।

‘দাঁড়াও!’ আমায় চিনতে পেরে হাত ধরে দাঁড় করাল ও। ‘তুমি ছাড়াই ওদের চলবে। লাও, আমার পশমের স্কার্ফের এই কোনাটা দিয়ে মুখখান ভালো করে মুছে ফ্যালো দেখি। ভগবান না করুন, মাথায় লাগে নি তো? নাকি, লেগেছে?’ ‘না, লাগে নি,’ ফিসফিস করে বললুম। ‘বাপির খবর কী?’

‘তার খবরে কাজ কী? কেউ তারে আইনের বিরুদ্ধে লাগতে কয়েছিল? আইনের বিরুদ্ধে যাওয়া যায় না, বুইলে বাপু।’

বাবাকে আর চৌকিদারকে পিছমোড়া করে হাত-বাঁধা অবস্থায় বাসার বাইরে আনা হল। ওঁদের পিছু পিছু যেতে লাগল তিষ্কা। কোটটা কাঁধের ওপর ফেলা, মাথায় টুপি নেই। ও কাঁদছিল না, কেবল অদ্ভুতভাবে শিউরে-শিউরে উঠছিল।

চৌকিদার গম্ভীরভাবে বললেন, ‘রাত্তিরটা তোর ধর্মবাপের ওখানে কাটাস তিকা। ওকে বলিস, আমাদের বাসাটার একটু দেখাশোনা করতে। তল্লাসির পর কোনো কিছু খোয়া যায় না যেন।’

বাবা হে’টে চলছিলেন নিঃশব্দে, মাথা নিচু করে। আমাকে দেখে খাড়া হয়ে উঠে চে’চিয়ে বললেন:

‘কুছ পরোয়া নেই, খোকন। বিদায়। তোমার মাকে আর তানিয়াকে আমার হয়ে চুমো দিও। চিন্তার কিছু নেই। রোমাঞ্চকর সময় শুরু হতে যাচ্ছে, বাপধন!’

জনপ্রিয় সংবাদ

অ্যামাজন বন বিপদে: খরা, বন উজাড় আর মানুষের চাপ

ইশকুল (শেষ-পর্ব)

০৮:০০:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪

আর্কাদি গাইদার

অষ্টম পরিচ্ছেদ

অনিচ্ছাসত্ত্বেও পাকচক্রে যখন থেকে আমি বাবার সহযোগী হয়ে দাঁড়িয়েছিলুম তখন থেকেই তাঁর সঙ্গে অন্যভাবে কথা বলতুম বয়সে বড় অথচ সমকক্ষ লোকের সঙ্গে যেভাবে লোকে কথা কয়, সেইভাবে। আমি বুঝতে পারতুম, বাবা এই ভঙ্গিটা পছন্দ করছিলেন।

‘আমার ফুর্তি’ লাগছে এইজন্যে যে রোমাঞ্চকর সময় শুরু হতে চলেছে। যথেষ্ট চোখের জল ফেলেছি আমরা! আচ্ছা, ঠিক আছে। এখন একছুটে বাড়ি চলে যাও দেখি। আবার শিগগিরই আমাদের দেখা হবে, কেমন?’ বাবা বললেন।

বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল। বিদায় জানিয়ে কোটটা গায়ে দিয়ে দৌড়ে বাইরের বারান্দায় এলুম। কিন্তু চৌকিদার এগিয়ে এসে আমার পেছনে দরজাটা বন্ধ করার আগেই আমার মনে হল কে যেন আমায় একপাশে ছুড়ে ফেলে দিল। এত জোরে ছুড়ে দিল যে উড়ে গিয়ে মাথা গুঁজে একরাশ হালকা তুষারস্তূপে পড়লুম। ঠিক সেই মুহূর্তে শুনতে পেলুম দোরগোড়ায় অনেকগুলো পায়ের দাপাদাপি, হইল্লের আওয়াজ আর লোকের চিৎকার। চট করে উঠে ফিরে এসে দেখলুম পুলিশম্যান এভূগ্রাফ তিমোফেইচ দাঁড়িয়ে আছে সামনে। ওর ছেলে পাক্কা একসময় আমার সঙ্গে একই প্রাথমিক ইশকুলে পড়েছিল।

‘দাঁড়াও!’ আমায় চিনতে পেরে হাত ধরে দাঁড় করাল ও। ‘তুমি ছাড়াই ওদের চলবে। লাও, আমার পশমের স্কার্ফের এই কোনাটা দিয়ে মুখখান ভালো করে মুছে ফ্যালো দেখি। ভগবান না করুন, মাথায় লাগে নি তো? নাকি, লেগেছে?’ ‘না, লাগে নি,’ ফিসফিস করে বললুম। ‘বাপির খবর কী?’

‘তার খবরে কাজ কী? কেউ তারে আইনের বিরুদ্ধে লাগতে কয়েছিল? আইনের বিরুদ্ধে যাওয়া যায় না, বুইলে বাপু।’

বাবাকে আর চৌকিদারকে পিছমোড়া করে হাত-বাঁধা অবস্থায় বাসার বাইরে আনা হল। ওঁদের পিছু পিছু যেতে লাগল তিষ্কা। কোটটা কাঁধের ওপর ফেলা, মাথায় টুপি নেই। ও কাঁদছিল না, কেবল অদ্ভুতভাবে শিউরে-শিউরে উঠছিল।

চৌকিদার গম্ভীরভাবে বললেন, ‘রাত্তিরটা তোর ধর্মবাপের ওখানে কাটাস তিকা। ওকে বলিস, আমাদের বাসাটার একটু দেখাশোনা করতে। তল্লাসির পর কোনো কিছু খোয়া যায় না যেন।’

বাবা হে’টে চলছিলেন নিঃশব্দে, মাথা নিচু করে। আমাকে দেখে খাড়া হয়ে উঠে চে’চিয়ে বললেন:

‘কুছ পরোয়া নেই, খোকন। বিদায়। তোমার মাকে আর তানিয়াকে আমার হয়ে চুমো দিও। চিন্তার কিছু নেই। রোমাঞ্চকর সময় শুরু হতে যাচ্ছে, বাপধন!’