আর্কাদি গাইদার
প্রথম পরিচ্ছেদ
এদিকে বক্তারা একের পর এক মণ্ড দখল করে বলে চলেছেন। ধরা গলায়, বসে-যাওয়া গলায় বলে চলেছেন সমাজতন্ত্রের কথা। তাঁদের পার্টিতে যারা নাম লেখাতে চায় আর স্বেচ্ছায় যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে চায় তাঁরা ওইখানেই তাদের নাম লিখে নিতে লাগলেন। এমনও অনেক বক্তা দেখা গেল যারা মঞ্চে উঠে আর নামতে চায় না। যতক্ষণ-না তাদের টেনে নামানো হল তারা বলে চলল। তাদের জায়গায় আবার মঞ্চে উঠল নতুন বক্তা।
কত-যে বক্তৃতা শুনলুম তার ইয়ত্তা নেই। শুনতে-শুনতে মনে হল মাথাটা যেন ফুলনো বেলুনের মতো কথায় টইটম্বুর, ফাটো-ফাটো হয়ে উঠেছে। নানা লোকের নানা কথা মাথার মধ্যে মিলেমিশে খিচুড়ি পাকিয়ে গেল। ফলে, একজন এস-আর আর একজন কাদেত, কাদেত আর নারোদবাদী, একজন চুদোভিক আর একজন নৈরাজ্যবাদীর মধ্যে তফাত যে কোন দিক থেকে কী করে করব তা বুঝে উঠতে পারলুম না। সব কটা বক্তৃতা ছে’কে মাত্র একটি কথাই আমার মধ্যে রয়ে গেল:
‘মুক্তি… মুক্তি… মুক্তি…’
‘গোরিকভ,’ পেছন থেকে কে যেন ডাকল আমায়। তারপরই আমার কাঁধে অনুভব করলুম কার যেন হাত।
দেখি আমার পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন, আর কেউ নয়, আমাদের সেই হস্তশিল্প- শিক্ষক ‘দাঁড়কাক’।
দারুণ খুশি হয়ে উঠলুম আমি। বললুম, ‘আপনি? আপনি এখানে কবে, কী করে?’
‘নিজনি নভগরোদ থেকে আসছি। জেল থেকে। চল, খোকা, আমার বাসায় চল।
কাছেই একটা ঘর ভাড়া নিয়েছি আমি। এস, চা খাওয়া যাবে, শাদা পাঁউরুটি আর মধুও খাব আমরা। তোমার সঙ্গে দেখা হওয়াতে খুব খুশি হয়েছি। মাত্র গতকাল এখানে এসেছি। আজই তোমাদের বাড়ি যাব ভাবছিলুম।’
আমার হাত ধরলেন উনি। গোলমাল আর ভিড় ঠেলে আমরা এগিয়ে চললুম।
পাশের চত্বরে, আরেকটা ভিড়ের মধ্যে গিয়ে পড়লুম। সেখানে আগুন জ্বালিয়ে কিছু পোড়ানো হচ্ছিল। কৌতূহলী লোকে ভিড় জমিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল এখানে- ওখানে।
‘এখানে আবার কী হচ্ছে?’
‘কী আবার? ভাঁড়ামি,’ দাঁড়কাক হেসে বললেন। ‘নৈরাজ্যবাদীরা জার-রাজত্বের পতাকা পোড়াচ্ছে। কাপড়গুলো না পুড়িয়ে ছি’ড়ে ছি’ড়ে লোকের মধ্যে বিলি করলে কাজে দিত। চাষীরা কাপড়ের অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন। বাপরে, আজকের দিনে একেক টুকরো কাপড়ের দাম কি কম?’