১২:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ: কী হবে এক ইউরোপীয় ইউনিয়নের?

  • Sarakhon Report
  • ১০:০১:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
  • 74

সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসও জার্মানি ও বেলজিয়ামের সাথে তাদের সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ শুরু করেছে

ইউরোপীয় দেশগুলো সীমান্তে নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে৷ তাই প্রশ্ন উঠেছে, নিয়ন্ত্রণহীন ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি নিয়ে গড়ে ওঠা শেঞ্জেন অঞ্চল, যা একসময় ইউরোপীয় ঐক্যের ‘মুকুট’ হিসেবে পরিচিত ছিল, এখন কি সংকটে পড়েছে?

১৯৮৫ সালে লুক্সেমবার্গে সই হয় শেঞ্জেন চুক্তি৷ শেঞ্জেন অঞ্চলে এখন ২৫টি ইইউ দেশ ও চারটি নন-ইইউ দেশ রয়েছে৷ এর মূল নীতি হলো অবাধ চলাচল৷ কিন্তু তা এখন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি৷

লুক্সেমবার্গের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লিওন গ্লোডেন গত ১২ ডিসেম্বর ইইউ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ পুনর্বহালের সমালোচনা করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘লুক্সেমবার্গের জন্য এটি অগ্রহণযোগ্য৷ শেঞ্জেন ইইউর অন্যতম বৃহৎ সাফল্য৷ আমরা মানুষের মনে আবার সীমান্ত স্থাপনের অনুমতি দিতে পারি না৷”

নজিরবিহীন অভ্যন্তরীণ সীমানা নিয়ন্ত্রণ

শেঞ্জেন প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০২৪ সালে অভ্যন্তরীণ সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ জার্মানিও এখন তার প্রতিটি সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করছে, যা আগে শুধু দক্ষিণ সীমান্তে অস্ট্রিয়ার সাথে সীমিত ছিল৷ ২০১৫ সাল থেকে জার্মানি এই সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ চালিয়ে আসছে৷ ফ্রান্স, ২০১৫ সালের সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে সীমিতভাবে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ চালু করেছে, এবং সাম্প্রতিক সময়ে এটি আরও জোরদার করা হয়েছে৷

সম্প্রতি, নেদারল্যান্ডসও জার্মানি ও বেলজিয়ামের সাথে তাদের সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ শুরু করেছে৷৷ এর পাশাপাশি, ৯ ডিসেম্বর ইইউ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বুলগেরিয়া ও রোমানিয়াকে পূর্ণাঙ্গ শেঞ্জেন সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার৷ তবে, ইউরোপীয় কমিশন বারবার জোর দিয়ে বলছে, অভ্যন্তরীণ সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ‘একেবারে শেষ উপায়’ হওয়া উচিত৷ তবু কয়েকটি দেশ এই নিয়ন্ত্রণকে এক দশক পর্যন্ত বাড়িয়ে রেখেছে৷

জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজার চলমান নিয়ন্ত্রণের সপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন যে অভিবাসনের উচ্চ সংখ্যা এর কারণ৷ তিনি বলেন, ‘‘যতদিন জার্মানিতে (অভিবাসীর) সংখ্যা এত বেশি থাকবে, ততদিন নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত থাকবে৷” তিনি আরও বলেন, ‘‘শেঞ্জেন অঞ্চল জার্মানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে শরণার্থীদের সমান বণ্টনও প্রয়োজন৷”

নিরাপত্তা বনাম মুক্ত চলাচল

ইইউর নতুন অভ্যন্তরীণ বিষয়ক ও অভিবাসন কমিশনার অস্ট্রিয়ার মাগনুস ব্রুনার সমস্যাগুলো স্বীকার করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ইউরোপীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা উন্নত করতে হবে৷” তবে শেঞ্জেনের আইনি কাঠামো মেনে চলার ওপরও তিনি জোর দেন৷

যখন শেঞ্জেন ২০২৫ সালে তার ৪০তম বার্ষিকী উদযাপন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন সীমান্তহীন ইউরোপের স্বপ্ন বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি৷ এই টানাপোড়েন সমাধান হবে কিনা তা এখনও অনিশ্চিত, যা ইইউর অন্যতম মূল্যবান অর্জনকে একটি প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে৷

ডিডাব্লিউ ডটকম

জনপ্রিয় সংবাদ

সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ: কী হবে এক ইউরোপীয় ইউনিয়নের?

১০:০১:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪

ইউরোপীয় দেশগুলো সীমান্তে নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে৷ তাই প্রশ্ন উঠেছে, নিয়ন্ত্রণহীন ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি নিয়ে গড়ে ওঠা শেঞ্জেন অঞ্চল, যা একসময় ইউরোপীয় ঐক্যের ‘মুকুট’ হিসেবে পরিচিত ছিল, এখন কি সংকটে পড়েছে?

১৯৮৫ সালে লুক্সেমবার্গে সই হয় শেঞ্জেন চুক্তি৷ শেঞ্জেন অঞ্চলে এখন ২৫টি ইইউ দেশ ও চারটি নন-ইইউ দেশ রয়েছে৷ এর মূল নীতি হলো অবাধ চলাচল৷ কিন্তু তা এখন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি৷

লুক্সেমবার্গের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লিওন গ্লোডেন গত ১২ ডিসেম্বর ইইউ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ পুনর্বহালের সমালোচনা করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘লুক্সেমবার্গের জন্য এটি অগ্রহণযোগ্য৷ শেঞ্জেন ইইউর অন্যতম বৃহৎ সাফল্য৷ আমরা মানুষের মনে আবার সীমান্ত স্থাপনের অনুমতি দিতে পারি না৷”

নজিরবিহীন অভ্যন্তরীণ সীমানা নিয়ন্ত্রণ

শেঞ্জেন প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০২৪ সালে অভ্যন্তরীণ সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ জার্মানিও এখন তার প্রতিটি সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করছে, যা আগে শুধু দক্ষিণ সীমান্তে অস্ট্রিয়ার সাথে সীমিত ছিল৷ ২০১৫ সাল থেকে জার্মানি এই সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ চালিয়ে আসছে৷ ফ্রান্স, ২০১৫ সালের সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে সীমিতভাবে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ চালু করেছে, এবং সাম্প্রতিক সময়ে এটি আরও জোরদার করা হয়েছে৷

সম্প্রতি, নেদারল্যান্ডসও জার্মানি ও বেলজিয়ামের সাথে তাদের সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ শুরু করেছে৷৷ এর পাশাপাশি, ৯ ডিসেম্বর ইইউ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বুলগেরিয়া ও রোমানিয়াকে পূর্ণাঙ্গ শেঞ্জেন সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার৷ তবে, ইউরোপীয় কমিশন বারবার জোর দিয়ে বলছে, অভ্যন্তরীণ সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ‘একেবারে শেষ উপায়’ হওয়া উচিত৷ তবু কয়েকটি দেশ এই নিয়ন্ত্রণকে এক দশক পর্যন্ত বাড়িয়ে রেখেছে৷

জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজার চলমান নিয়ন্ত্রণের সপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন যে অভিবাসনের উচ্চ সংখ্যা এর কারণ৷ তিনি বলেন, ‘‘যতদিন জার্মানিতে (অভিবাসীর) সংখ্যা এত বেশি থাকবে, ততদিন নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত থাকবে৷” তিনি আরও বলেন, ‘‘শেঞ্জেন অঞ্চল জার্মানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে শরণার্থীদের সমান বণ্টনও প্রয়োজন৷”

নিরাপত্তা বনাম মুক্ত চলাচল

ইইউর নতুন অভ্যন্তরীণ বিষয়ক ও অভিবাসন কমিশনার অস্ট্রিয়ার মাগনুস ব্রুনার সমস্যাগুলো স্বীকার করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ইউরোপীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা উন্নত করতে হবে৷” তবে শেঞ্জেনের আইনি কাঠামো মেনে চলার ওপরও তিনি জোর দেন৷

যখন শেঞ্জেন ২০২৫ সালে তার ৪০তম বার্ষিকী উদযাপন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন সীমান্তহীন ইউরোপের স্বপ্ন বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি৷ এই টানাপোড়েন সমাধান হবে কিনা তা এখনও অনিশ্চিত, যা ইইউর অন্যতম মূল্যবান অর্জনকে একটি প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে৷

ডিডাব্লিউ ডটকম