১১:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
স্বৈরাচারের কবলে যখনই দেশ, তখনই ফিরে আসে নূরুলদীন সন্ত্রাসবিরোধে দ্বৈত মানদণ্ড নেই: ব্রিকসের দৃঢ় ঘোষণায় পহালগাম হামলার তীব্র নিন্দা হিউএনচাঙ (পর্ব-১৪১) প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর) এর ৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ঢাকায় ৭৩ সালে বস্তিবাসী ছিলো ৮ শতাংশ এখন ৪০ শতাংশ হোলি আর্টিজান হামলায় নিহত ভারতীয় নাগরিক: সন্ত্রাসের আতঙ্ক ও ভারতের গণমাধ্যম লন্ডনের ‘এভিটা’-তে ব্যালকনি ছেড়ে জনতার গানে ডুবে গেলেন র‌্যাচেল জেগলার সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হয়রানির প্রতিবাদে অর্ধশতাধিক সাংবাদিকের যৌথ বিবৃতি মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে কী বলেন তার বংশধররা? জনগণকে বিভক্ত করলেই রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়

নৌ পথে কেন এত ভিয়েতনামিরা যুক্তরাজ্যে পালাচ্ছে

  • Sarakhon Report
  • ০৩:০১:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫
  • 21

জনাথন হেড

চ্যানেল দিয়ে পাড়ি জমানো ভিয়েতনামি মানুষের সংখ্যা ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে অন্যান্য যে কোনো জাতিগোষ্ঠীর চেয়ে বেশি ছিল। অথচ ভিয়েতনাম বিশ্বের দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির একটি দেশ। তবুও কেন এত মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছাতে চাইছে?

ফুয়ং (ছদ্মনাম) ছোট একটি রাবারের নৌকার দিকে তাকিয়ে ভাবছিলেনতিনি কী উঠবেন কি না। সেখানে ৭০ জন গাদাগাদি করে বসে ছিলআর নৌকাটি পানি ছুঁইছুঁই অবস্থায় ডুবুডুবু করছিল। ভয়ক্লান্তি আর হতাশা সকলের চোখে-মুখে ছিল স্পষ্ট। পর্যাপ্ত লাইফজ্যাকেটও ছিল না।

কিন্তু ফুয়ংয়ের তখন আর বিকল্প ছিল না। তিনি ফ্রান্সে দুই মাস ধরে আটকে ছিলেনভিয়েতনাম থেকে হাঙ্গেরি হয়ে সেখানে পৌঁছানোর পর তাঁবুতে রাত কাটিয়েছেন জঙ্গলের ধারে। এর মধ্যেই তিনি একবার একটি নৌকায় উঠতে অস্বীকার করেছিলেনঅতিরিক্ত ভিড়ের কারণে সেটি ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। এর আগেও তিনবার মাঝপথে খারাপ আবহাওয়া বা ইঞ্জিন বিকল হওয়ার কারণে ফিরতে হয়েছে।

লন্ডনে ফুয়ংয়ের বোন হিয়েন থাকেন। তিনি জানানফ্রান্স থেকে ফোনে ফুয়ং বহুবার কান্নায় ভেঙে পড়তেনএকদিকে প্রবল ভয়অন্যদিকে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদ।

কিন্তু এই যাত্রায় প্রায় ২৫,০০০ পাউন্ডের মতো ঋণ করতে হয়েছে ওকে। পিছু হটার উপায় ছিল না।” তাই শেষ পর্যন্ত ফুয়ং সেদিন সেই ভিড়ের নৌকাতেই চড়েন।

আজ ফুয়ং লন্ডনে বোনের সঙ্গেই থাকেনতবে আইনসম্মত কোনো মর্যাদা নেই তাঁর। ভয়ে সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি তিনি। তাঁর হয়ে বোন হিয়েনযিনি এখন যুক্তরাজ্যের নাগরিকসেই কঠিন অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়েছেন।

২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ছোট নৌকায় পাড়ি জমানো ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ ছিল ভিয়েতনামিদেরসংখ্যা ২,২৪৮। আফগানিস্তান বা ইরানের মতো পরিচিত মানবাধিকার সংকটের দেশের নাগরিকদের চেয়েও বেশি।

ভিয়েতনামি মানুষের যুক্তরাজ্যে প্রবেশের এই প্রচেষ্টা নতুন নয়। ২০২৪ সালে বিবিসির প্রতিবেদনে উঠে আসে যে কীভাবে ভিয়েতনামি চক্রগুলো সফলভাবে মানুষকে পাচার করছে। এ পথে মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছেঅনেকে বাধ্য হন যৌনকর্মে বা অবৈধ গাঁজা খামারে কাজ করতে। যুক্তরাজ্যে আধুনিক দাসত্বের শিকার হিসেবে যে সকল অভিযোগ দায়ের হয়তার বেশ উল্লেখযোগ্য একটি অংশই ভিয়েতনামিদের কাছ থেকে আসে।

কিন্তু ভিয়েতনাম তো একটি দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতিযাকে প্রায়ই মিনি-চায়না’ বলা হয় এর উঁচুমানের উৎপাদনশীলতার জন্য। গত ২০ বছরে মাথাপিছু আয় আট গুণ বেড়েছে। দেশের মনোরম সমুদ্রসৈকতপ্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও স্বল্প খরচের কারণে পর্যটকদের কাছেও এর ব্যাপক কদর। তবু কেন এত মানুষ দেশ ছেড়ে পালাতে চাইছেন?

দুই ধরনের ভিয়েতনামের গল্প

ভিয়েতনাম একটি একদলীয় কমিউনিস্ট রাষ্ট্রযা মানবাধিকার ও স্বাধীনতার সূচকে নিচের দিকেই থাকে। রাজনৈতিক বিরোধী দল রাখার সুযোগ নেইকেউ রাষ্ট্রের সমালোচনা করলে হয়রানি বা জেলের মুখোমুখি হতে হয়। তবে বেশিরভাগ ভিয়েতনামি মানুষ সরকারকে মেনে চলেই জীবন নির্বাহ করেনদলের বৈধতা টিকিয়ে রাখার মূল ভিত্তি অর্থনৈতিক অগ্রগতি। খুব কম মানুষই নিপীড়ন থেকে বাঁচতে পালায়।

এছাড়া সাধারণ ভিয়েতনামিরা এখন আর সরাসরি দারিদ্র্য থেকেও পালাচ্ছে না। বিশ্বব্যাংক বলেছে১০ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে দারিদ্র্য দূরীকরণের যে সাফল্যতা প্রায় নজিরবিহীন। মূল কারণ হচ্ছে আপেক্ষিক বঞ্চনা

বিশাল অর্থনৈতিক অগ্রগতির পরওভিয়েতনাম অনেক পরে এই উন্নয়নের পথে হাঁটতে শুরু করেবিশেষ করে স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী সময় থেকে। গড় মাসিক বেতন প্রায় ২৩৫ পাউন্ডের মতোযা থাইল্যান্ডের চেয়ে অনেক কম। ৫৫ মিলিয়ন কর্মীর মধ্যে তিন-চতুর্থাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেনযাদের কোনো নিশ্চয়তা বা সামাজিক সুরক্ষা নেই।

সিঙ্গাপুরের ইন্সটিটিউট অব সাউথ ইস্ট এশিয়ান স্টাডিজ-ইউসুফ ইশাক ইন্সটিটিউটের গবেষক নুয়েন খাক জিয়াং বলছেন, “হানয়ের মতো বড় শহর আর গ্রাম বা ছোট শহরগুলোর মধ্যে বিশাল বৈষম্য রয়েছে। নিম্ন দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের জন্য একটা পর্যায়ের পরে আর উপরে ওঠার সুযোগ থাকে না। দিনে ১৪ ঘণ্টা কাজ করেও বাড়ি বানানোর মতো সঞ্চয় করা বা পরিবার শুরু করা কঠিন।

ফুয়ংয়েরও তাই মনে হয়েছিল। তিনি ভিয়েতনামের তৃতীয় বৃহত্তম নগরী হাইফং থেকে এসেছেন। কিন্তু মহামারির পর সেখানে কাজের সুযোগ ছিল সীমিত। ৩৮ বছর বয়সে তিনি চেয়েছিলেন লন্ডনে থাকা বোন হিয়েনের মতো আরও সুরক্ষিত জীবনযাতে টাকা জমিয়ে ভবিষ্যৎ গড়া যায়।

হিয়েন নয় বছর আগে যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন একটি কন্টেইনারের মধ্যে লুকিয়েপ্রায় ২২,০০০ পাউন্ড খরচ করে। তিনি রেঁস্তোরায় ও নেল স্যালনে প্রচুর পরিশ্রম করে দুই বছরের মধ্যেই সেই টাকা শোধ করে ফেলেন। পরে তিনি যুক্তরাজ্যে নাগরিকত্ব পাওয়া এক ভিয়েতনামি পুরুষকে বিয়ে করেনতাঁদের একটি কন্যাসন্তান হয়এবং তিনজনই এখন ব্রিটিশ নাগরিক।

অন্যদিকে হাইফংয়ে ফুয়ং দেখলেন কাজের অভাবভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা। তাই বড় ঋণ করে হলেও তিনি যুক্তরাজ্যে আসতে চাইলেন। হিয়েন বলছেন, “সে ভিয়েতনামে টিকে থাকতে পারতকিন্তু নিজের একটা বাড়িভালো একটা জীবন ও পরিবারের নিশ্চয়তাএসব পাওয়ার ইচ্ছাই ওকে তাড়িত করেছিল।

আয় বাড়াওধনী হও

ভিয়েতনামিরা বিদেশে যাওয়ার এই চেষ্টার শিকড় বহু পুরনো। ১৯৭০-৮০ দশকের দিকে যখন দেশটি সোভিয়েত ইউনিয়নের মিত্র ছিলতখন অর্থনৈতিক অবস্থা তলানিতে গিয়ে ঠেকে। বহু মানুষ খাদ্যসংকটে দিন কাটাতআর অনেকেই পোল্যান্ডপূর্ব জার্মানি বা হাঙ্গেরির মতো পূর্ব ব্লকের দেশে শ্রমিক হিসেবে চলে যেতেন।

এটাও সেই সময়যখন মূলত জাতিগত চীনা সম্প্রদায়ের ৮ লাখ মানুষ ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট দলের নিপীড়ন থেকে বাঁচতে দক্ষিণ চীন সাগর পেরিয়ে পালিয়ে যানপরে কেউ কেউ যুক্তরাষ্ট্রঅস্ট্রেলিয়া বা ইউরোপে স্থায়ী হন।

১৯৮৬ সালে যখন অর্থনৈতিক সঙ্কট দলকে চাপে ফেলেতখন রাষ্ট্রীয়ভাবে সাম্যবাদী ব্যবস্থার পথ ছেড়ে গ্লোবাল মার্কেটের দ্বার খুলে দেয় ভিয়েতনাম। গোটা দেশের নতুন আদর্শ হয়ে দাঁড়ায়—“পিছিয়ে থাকা কাটিয়ে ওঠোধনী হও।” অনেক ভিয়েতনামি বুঝলবিদেশে গিয়ে টাকা আয় করাই এটার ভালো উপায়।

মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন বিষয়ক অধ্যাপক লান আন্হ হোয়াং বলছেন, “ভিয়েতনামে টাকার গুরুত্ব এখন সবার ওপরে। আগে যখন সবাই গরিব ছিলতখন একটা মহিষএকটা মোটরবাইক আর তিন বেলা খাবার থাকলেই মানুষ খুশি ছিল। হঠাৎ দেখা গেলকেউ কেউ ইউরোপে গিয়ে (ক্যানাবিস) গাঁজা খামার বা নেল স্যালন চালিয়ে কিংবা অন্য কোনোভাবে অনেক টাকা উপার্জন করে দেশে প্রচুর টাকা পাঠাচ্ছে। যারা দেশে রয়ে গেলতারা আগের চেয়ে আর্থিকভাবে খারাপ অবস্থায় নেই ঠিকইকিন্তু এই নতুন ধনী পরিবারগুলোর তুলনায় নিজেদের গরিব’ ভাবতে শুরু করেছে।

ফিরে এসে বাড়ি বানিয়েছে

উত্তর ভিয়েতনামের দরিদ্র প্রদেশ নগে আন দিয়ে গেলে দেখা যাবেআগের ছোট ছোট সিমেন্টের বাড়ির বদলে এখন ঝকঝকে বড় বাড়িরঙিন ও সোনালী গেটঝাঁচকচে নির্মাণকাজএর পেছনে কেউ কেউ বলছেনবিদেশে আয় করা অর্থের বড় ভূমিকা আছে।

দেশে এখন বহুজাতিক কোম্পানির বড় বিনিয়োগও আসছে। উদাহরণ হিসেবে আইফোন প্রস্তুতকারক ফক্সকন নগে আন প্রদেশে কারখানা বানাচ্ছেযেখানে হাজার হাজার মানুষের কাজের সুযোগ হবে। তবে অদক্ষ শ্রমিকদের বেতন মাসে মাত্র ৩০০ পাউন্ডের মতোযা স্মাগলারদের দেওয়া আশার কাছে এখনো খুবই কম।

বড় ব্যবসা স্মাগলিং

নগে আন-সহ বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষকে বিদেশে পাঠানোর দালালি এখন প্রচুর অর্থের উৎস। উপরিভাবে কেউ কেউ নিজেদের পর্যটন বা বৈধ শ্রমবাজারের এজেন্ট হিসেবে পরিচয় দিলেও বাস্তবে অনেকেই যুক্তরাজ্য পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দেন। তাঁরা সবসময় যুক্তরাজ্যের জীবনের উজ্জ্বল ছবি দেখানপথে কী বিপদ হতে পারে সে কথা খুব একটা বলেন না।

এমন দালালরা” যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর জন্য জনপ্রতি ১৫,০০০ থেকে ৩৫,০০০ পাউন্ড নেন। হাঙ্গেরি হয়ে ইউরোপে ঢোকার পথ জনপ্রিয়কারণ ভিয়েতনামের নাগরিকদের জন্য সেখানকার অতিথি-শ্রমিক ভিসা পাওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ। যিনি যত বেশি টাকা দিতে পারেনতাঁর যাত্রা তত দ্রুত আর নির্বিঘ্ন হয়।

ভিয়েতনামি কর্তৃপক্ষকে বহুদিন ধরেই স্মাগলিং নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর হতে বলছে যুক্তরাষ্ট্রযুক্তরাজ্য এবং বিভিন্ন জাতিসংঘ সংস্থা। সরকার অবশ্য বৈধ পথে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোকে উৎসাহ দেয়। ২০২৪ সালে সরকারি কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় ১,৩০,০০০ শ্রমিক দেশ ছেড়েছেন। কিন্তু এই প্রকল্পগুলোতেও খরচ কম নয়এবং সেই তুলনায় আয়ও অনেক কমবিশেষ করে যুক্তরাজ্যের সম্ভাব্য উপার্জনের সঙ্গে তুলনা করলে।

২০১৯ সালে এসেক্সে একটি কন্টেইনারে ৩৯ জন ভিয়েতনামির মৃত্যু সবার মনোযোগ কেড়ে নেয়। শ্বাসরোধ হয়ে তাঁদের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু এত বড় এক ট্র্যাজেডিও চোরাপথে বিদেশ যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা কমাতে পারেনি। বরং কন্টেইনারে কড়া নজরদারির ফলে এখন ছোট নৌকায় পাড়ি জমানোর প্রবণতা বেড়ে গেছে।

সফলতার গল্প বড়ঝুঁকি নয়

নিহত ৩৯ জনের একজন লে ভ্যান হা-এর এক চাচাতো ভাই বললেনতাঁর ভাইপোর পরিবারে এখনো বড় ঋণের বোঝাস্ত্রী আর দুই সন্তানকে রেখে গেলেও সমাজে যেন খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। তিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি।

এটা খুবই দুঃখজনককিন্তু সত্যি হল২০১৯ সালের ওই ঘটনার স্মৃতি মানুষের মনে বেশিক্ষণ থাকেনি। আমাদের এলাকায় এখনও অনেকেই বিদেশে যেতে চাইছে। সফল হয়ে ফিরে আসার গল্পগুলো সবাই জানেআর তারাই অন্যদের উজ্জীবিত করে। ঝুঁকির প্রসঙ্গ খুব কমই আলোচনায় আসে।

নিহতদের মধ্যে তিনজন ছিলেন কোয়াং বিন প্রদেশের বাসিন্দা। সেখানকার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানালেনতাঁর স্কুল থেকে যে সব শিক্ষার্থী পাস করেতাদের ৮০ শতাংশের পরিকল্পনাই বিদেশে যাওয়ার।

এখানকার বেশিরভাগ বাবা-মা কম আয়ের,” তিনি বলেন। সন্তানকে পড়াশোনা বা দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ করে দেওয়া তাদের কাছে অগ্রাধিকার নয়। তারা চায় সন্তান যত দ্রুত সম্ভব টাকা উপার্জন শুরু করুক এবং বাড়িতে রেমিট্যান্স পাঠাকযাতে সবার জীবনমান উন্নত হয়।

২০২৫ সালের মার্চে যুক্তরাজ্যের হোম অফিস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার শুরু করেছেযাতে অবৈধ পথে ভিয়েতনামিদের যাত্রা প্রতিহত করা যায়। ভিয়েতনামের সরকারও চোরাপথে বিদেশ যাওয়ার বিপদ সম্পর্কে কিছু প্রচারণা চালিয়েছে। কিন্তু এসব অঞ্চলে যতদিন পর্যন্ত ভালো মানের কাজ ও আয়ের সুযোগ তৈরি না হবেততদিন এই প্রচারণার বাস্তব ফলাফল সামান্যই থাকবে বলে অনেকে মনে করেন।

ভিয়েতনাম-ভিত্তিক মানবপাচার রোধে কাজ করা সংগঠন প্যাসিফিক লিঙ্কস-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা দিয়েপ ভুয়ং বলছেন, “এ ধরনের প্রচার একবার করে থেমে গেলেই হবে নাধারাবাহিকভাবে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।” তিনি নিজেও ১৯৮০ সালে ভিয়েতনাম থেকে নৌকায় চেপে যুক্তরাষ্ট্রে যান।

ভিয়েতনামে পরিবারকে সবার আগে রাখার সামাজিক ও নৈতিক চাপ খুব বেশি। এই মানসিক শেকল থেকে বেরোনো সহজ নয়। তবে সঠিক তথ্য যদি বছরের পর বছর ধরে দেওয়া যায়মানুষ হয়তো একসময় ভাবনা বদলাবে।

তবে এর বিরুদ্ধে কাজ করে সফল অভিবাসীদের জাঁকজমকপূর্ণ’ ফিরে আসার কাহিনি। যাঁরা ব্যর্থ হনতাঁরা লজ্জায় তেমন কাউকে কিছু না জানিয়ে চুপ হয়ে থাকেন। আর ২০১৯ সালের সেই ৩৯ জনের মর্মান্তিক ঘটনাকে এখনো দুর্ভাগ্য’ হিসেবেই দেখার প্রবণতা রয়েছেযেন অন্যান্যদের ক্ষেত্রে সব ঠিকই আছে।

স্বৈরাচারের কবলে যখনই দেশ, তখনই ফিরে আসে নূরুলদীন

নৌ পথে কেন এত ভিয়েতনামিরা যুক্তরাজ্যে পালাচ্ছে

০৩:০১:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫

জনাথন হেড

চ্যানেল দিয়ে পাড়ি জমানো ভিয়েতনামি মানুষের সংখ্যা ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে অন্যান্য যে কোনো জাতিগোষ্ঠীর চেয়ে বেশি ছিল। অথচ ভিয়েতনাম বিশ্বের দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির একটি দেশ। তবুও কেন এত মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছাতে চাইছে?

ফুয়ং (ছদ্মনাম) ছোট একটি রাবারের নৌকার দিকে তাকিয়ে ভাবছিলেনতিনি কী উঠবেন কি না। সেখানে ৭০ জন গাদাগাদি করে বসে ছিলআর নৌকাটি পানি ছুঁইছুঁই অবস্থায় ডুবুডুবু করছিল। ভয়ক্লান্তি আর হতাশা সকলের চোখে-মুখে ছিল স্পষ্ট। পর্যাপ্ত লাইফজ্যাকেটও ছিল না।

কিন্তু ফুয়ংয়ের তখন আর বিকল্প ছিল না। তিনি ফ্রান্সে দুই মাস ধরে আটকে ছিলেনভিয়েতনাম থেকে হাঙ্গেরি হয়ে সেখানে পৌঁছানোর পর তাঁবুতে রাত কাটিয়েছেন জঙ্গলের ধারে। এর মধ্যেই তিনি একবার একটি নৌকায় উঠতে অস্বীকার করেছিলেনঅতিরিক্ত ভিড়ের কারণে সেটি ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। এর আগেও তিনবার মাঝপথে খারাপ আবহাওয়া বা ইঞ্জিন বিকল হওয়ার কারণে ফিরতে হয়েছে।

লন্ডনে ফুয়ংয়ের বোন হিয়েন থাকেন। তিনি জানানফ্রান্স থেকে ফোনে ফুয়ং বহুবার কান্নায় ভেঙে পড়তেনএকদিকে প্রবল ভয়অন্যদিকে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদ।

কিন্তু এই যাত্রায় প্রায় ২৫,০০০ পাউন্ডের মতো ঋণ করতে হয়েছে ওকে। পিছু হটার উপায় ছিল না।” তাই শেষ পর্যন্ত ফুয়ং সেদিন সেই ভিড়ের নৌকাতেই চড়েন।

আজ ফুয়ং লন্ডনে বোনের সঙ্গেই থাকেনতবে আইনসম্মত কোনো মর্যাদা নেই তাঁর। ভয়ে সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি তিনি। তাঁর হয়ে বোন হিয়েনযিনি এখন যুক্তরাজ্যের নাগরিকসেই কঠিন অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়েছেন।

২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ছোট নৌকায় পাড়ি জমানো ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ ছিল ভিয়েতনামিদেরসংখ্যা ২,২৪৮। আফগানিস্তান বা ইরানের মতো পরিচিত মানবাধিকার সংকটের দেশের নাগরিকদের চেয়েও বেশি।

ভিয়েতনামি মানুষের যুক্তরাজ্যে প্রবেশের এই প্রচেষ্টা নতুন নয়। ২০২৪ সালে বিবিসির প্রতিবেদনে উঠে আসে যে কীভাবে ভিয়েতনামি চক্রগুলো সফলভাবে মানুষকে পাচার করছে। এ পথে মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছেঅনেকে বাধ্য হন যৌনকর্মে বা অবৈধ গাঁজা খামারে কাজ করতে। যুক্তরাজ্যে আধুনিক দাসত্বের শিকার হিসেবে যে সকল অভিযোগ দায়ের হয়তার বেশ উল্লেখযোগ্য একটি অংশই ভিয়েতনামিদের কাছ থেকে আসে।

কিন্তু ভিয়েতনাম তো একটি দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতিযাকে প্রায়ই মিনি-চায়না’ বলা হয় এর উঁচুমানের উৎপাদনশীলতার জন্য। গত ২০ বছরে মাথাপিছু আয় আট গুণ বেড়েছে। দেশের মনোরম সমুদ্রসৈকতপ্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও স্বল্প খরচের কারণে পর্যটকদের কাছেও এর ব্যাপক কদর। তবু কেন এত মানুষ দেশ ছেড়ে পালাতে চাইছেন?

দুই ধরনের ভিয়েতনামের গল্প

ভিয়েতনাম একটি একদলীয় কমিউনিস্ট রাষ্ট্রযা মানবাধিকার ও স্বাধীনতার সূচকে নিচের দিকেই থাকে। রাজনৈতিক বিরোধী দল রাখার সুযোগ নেইকেউ রাষ্ট্রের সমালোচনা করলে হয়রানি বা জেলের মুখোমুখি হতে হয়। তবে বেশিরভাগ ভিয়েতনামি মানুষ সরকারকে মেনে চলেই জীবন নির্বাহ করেনদলের বৈধতা টিকিয়ে রাখার মূল ভিত্তি অর্থনৈতিক অগ্রগতি। খুব কম মানুষই নিপীড়ন থেকে বাঁচতে পালায়।

এছাড়া সাধারণ ভিয়েতনামিরা এখন আর সরাসরি দারিদ্র্য থেকেও পালাচ্ছে না। বিশ্বব্যাংক বলেছে১০ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে দারিদ্র্য দূরীকরণের যে সাফল্যতা প্রায় নজিরবিহীন। মূল কারণ হচ্ছে আপেক্ষিক বঞ্চনা

বিশাল অর্থনৈতিক অগ্রগতির পরওভিয়েতনাম অনেক পরে এই উন্নয়নের পথে হাঁটতে শুরু করেবিশেষ করে স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী সময় থেকে। গড় মাসিক বেতন প্রায় ২৩৫ পাউন্ডের মতোযা থাইল্যান্ডের চেয়ে অনেক কম। ৫৫ মিলিয়ন কর্মীর মধ্যে তিন-চতুর্থাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেনযাদের কোনো নিশ্চয়তা বা সামাজিক সুরক্ষা নেই।

সিঙ্গাপুরের ইন্সটিটিউট অব সাউথ ইস্ট এশিয়ান স্টাডিজ-ইউসুফ ইশাক ইন্সটিটিউটের গবেষক নুয়েন খাক জিয়াং বলছেন, “হানয়ের মতো বড় শহর আর গ্রাম বা ছোট শহরগুলোর মধ্যে বিশাল বৈষম্য রয়েছে। নিম্ন দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের জন্য একটা পর্যায়ের পরে আর উপরে ওঠার সুযোগ থাকে না। দিনে ১৪ ঘণ্টা কাজ করেও বাড়ি বানানোর মতো সঞ্চয় করা বা পরিবার শুরু করা কঠিন।

ফুয়ংয়েরও তাই মনে হয়েছিল। তিনি ভিয়েতনামের তৃতীয় বৃহত্তম নগরী হাইফং থেকে এসেছেন। কিন্তু মহামারির পর সেখানে কাজের সুযোগ ছিল সীমিত। ৩৮ বছর বয়সে তিনি চেয়েছিলেন লন্ডনে থাকা বোন হিয়েনের মতো আরও সুরক্ষিত জীবনযাতে টাকা জমিয়ে ভবিষ্যৎ গড়া যায়।

হিয়েন নয় বছর আগে যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন একটি কন্টেইনারের মধ্যে লুকিয়েপ্রায় ২২,০০০ পাউন্ড খরচ করে। তিনি রেঁস্তোরায় ও নেল স্যালনে প্রচুর পরিশ্রম করে দুই বছরের মধ্যেই সেই টাকা শোধ করে ফেলেন। পরে তিনি যুক্তরাজ্যে নাগরিকত্ব পাওয়া এক ভিয়েতনামি পুরুষকে বিয়ে করেনতাঁদের একটি কন্যাসন্তান হয়এবং তিনজনই এখন ব্রিটিশ নাগরিক।

অন্যদিকে হাইফংয়ে ফুয়ং দেখলেন কাজের অভাবভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা। তাই বড় ঋণ করে হলেও তিনি যুক্তরাজ্যে আসতে চাইলেন। হিয়েন বলছেন, “সে ভিয়েতনামে টিকে থাকতে পারতকিন্তু নিজের একটা বাড়িভালো একটা জীবন ও পরিবারের নিশ্চয়তাএসব পাওয়ার ইচ্ছাই ওকে তাড়িত করেছিল।

আয় বাড়াওধনী হও

ভিয়েতনামিরা বিদেশে যাওয়ার এই চেষ্টার শিকড় বহু পুরনো। ১৯৭০-৮০ দশকের দিকে যখন দেশটি সোভিয়েত ইউনিয়নের মিত্র ছিলতখন অর্থনৈতিক অবস্থা তলানিতে গিয়ে ঠেকে। বহু মানুষ খাদ্যসংকটে দিন কাটাতআর অনেকেই পোল্যান্ডপূর্ব জার্মানি বা হাঙ্গেরির মতো পূর্ব ব্লকের দেশে শ্রমিক হিসেবে চলে যেতেন।

এটাও সেই সময়যখন মূলত জাতিগত চীনা সম্প্রদায়ের ৮ লাখ মানুষ ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট দলের নিপীড়ন থেকে বাঁচতে দক্ষিণ চীন সাগর পেরিয়ে পালিয়ে যানপরে কেউ কেউ যুক্তরাষ্ট্রঅস্ট্রেলিয়া বা ইউরোপে স্থায়ী হন।

১৯৮৬ সালে যখন অর্থনৈতিক সঙ্কট দলকে চাপে ফেলেতখন রাষ্ট্রীয়ভাবে সাম্যবাদী ব্যবস্থার পথ ছেড়ে গ্লোবাল মার্কেটের দ্বার খুলে দেয় ভিয়েতনাম। গোটা দেশের নতুন আদর্শ হয়ে দাঁড়ায়—“পিছিয়ে থাকা কাটিয়ে ওঠোধনী হও।” অনেক ভিয়েতনামি বুঝলবিদেশে গিয়ে টাকা আয় করাই এটার ভালো উপায়।

মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন বিষয়ক অধ্যাপক লান আন্হ হোয়াং বলছেন, “ভিয়েতনামে টাকার গুরুত্ব এখন সবার ওপরে। আগে যখন সবাই গরিব ছিলতখন একটা মহিষএকটা মোটরবাইক আর তিন বেলা খাবার থাকলেই মানুষ খুশি ছিল। হঠাৎ দেখা গেলকেউ কেউ ইউরোপে গিয়ে (ক্যানাবিস) গাঁজা খামার বা নেল স্যালন চালিয়ে কিংবা অন্য কোনোভাবে অনেক টাকা উপার্জন করে দেশে প্রচুর টাকা পাঠাচ্ছে। যারা দেশে রয়ে গেলতারা আগের চেয়ে আর্থিকভাবে খারাপ অবস্থায় নেই ঠিকইকিন্তু এই নতুন ধনী পরিবারগুলোর তুলনায় নিজেদের গরিব’ ভাবতে শুরু করেছে।

ফিরে এসে বাড়ি বানিয়েছে

উত্তর ভিয়েতনামের দরিদ্র প্রদেশ নগে আন দিয়ে গেলে দেখা যাবেআগের ছোট ছোট সিমেন্টের বাড়ির বদলে এখন ঝকঝকে বড় বাড়িরঙিন ও সোনালী গেটঝাঁচকচে নির্মাণকাজএর পেছনে কেউ কেউ বলছেনবিদেশে আয় করা অর্থের বড় ভূমিকা আছে।

দেশে এখন বহুজাতিক কোম্পানির বড় বিনিয়োগও আসছে। উদাহরণ হিসেবে আইফোন প্রস্তুতকারক ফক্সকন নগে আন প্রদেশে কারখানা বানাচ্ছেযেখানে হাজার হাজার মানুষের কাজের সুযোগ হবে। তবে অদক্ষ শ্রমিকদের বেতন মাসে মাত্র ৩০০ পাউন্ডের মতোযা স্মাগলারদের দেওয়া আশার কাছে এখনো খুবই কম।

বড় ব্যবসা স্মাগলিং

নগে আন-সহ বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষকে বিদেশে পাঠানোর দালালি এখন প্রচুর অর্থের উৎস। উপরিভাবে কেউ কেউ নিজেদের পর্যটন বা বৈধ শ্রমবাজারের এজেন্ট হিসেবে পরিচয় দিলেও বাস্তবে অনেকেই যুক্তরাজ্য পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দেন। তাঁরা সবসময় যুক্তরাজ্যের জীবনের উজ্জ্বল ছবি দেখানপথে কী বিপদ হতে পারে সে কথা খুব একটা বলেন না।

এমন দালালরা” যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর জন্য জনপ্রতি ১৫,০০০ থেকে ৩৫,০০০ পাউন্ড নেন। হাঙ্গেরি হয়ে ইউরোপে ঢোকার পথ জনপ্রিয়কারণ ভিয়েতনামের নাগরিকদের জন্য সেখানকার অতিথি-শ্রমিক ভিসা পাওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ। যিনি যত বেশি টাকা দিতে পারেনতাঁর যাত্রা তত দ্রুত আর নির্বিঘ্ন হয়।

ভিয়েতনামি কর্তৃপক্ষকে বহুদিন ধরেই স্মাগলিং নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর হতে বলছে যুক্তরাষ্ট্রযুক্তরাজ্য এবং বিভিন্ন জাতিসংঘ সংস্থা। সরকার অবশ্য বৈধ পথে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোকে উৎসাহ দেয়। ২০২৪ সালে সরকারি কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় ১,৩০,০০০ শ্রমিক দেশ ছেড়েছেন। কিন্তু এই প্রকল্পগুলোতেও খরচ কম নয়এবং সেই তুলনায় আয়ও অনেক কমবিশেষ করে যুক্তরাজ্যের সম্ভাব্য উপার্জনের সঙ্গে তুলনা করলে।

২০১৯ সালে এসেক্সে একটি কন্টেইনারে ৩৯ জন ভিয়েতনামির মৃত্যু সবার মনোযোগ কেড়ে নেয়। শ্বাসরোধ হয়ে তাঁদের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু এত বড় এক ট্র্যাজেডিও চোরাপথে বিদেশ যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা কমাতে পারেনি। বরং কন্টেইনারে কড়া নজরদারির ফলে এখন ছোট নৌকায় পাড়ি জমানোর প্রবণতা বেড়ে গেছে।

সফলতার গল্প বড়ঝুঁকি নয়

নিহত ৩৯ জনের একজন লে ভ্যান হা-এর এক চাচাতো ভাই বললেনতাঁর ভাইপোর পরিবারে এখনো বড় ঋণের বোঝাস্ত্রী আর দুই সন্তানকে রেখে গেলেও সমাজে যেন খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। তিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি।

এটা খুবই দুঃখজনককিন্তু সত্যি হল২০১৯ সালের ওই ঘটনার স্মৃতি মানুষের মনে বেশিক্ষণ থাকেনি। আমাদের এলাকায় এখনও অনেকেই বিদেশে যেতে চাইছে। সফল হয়ে ফিরে আসার গল্পগুলো সবাই জানেআর তারাই অন্যদের উজ্জীবিত করে। ঝুঁকির প্রসঙ্গ খুব কমই আলোচনায় আসে।

নিহতদের মধ্যে তিনজন ছিলেন কোয়াং বিন প্রদেশের বাসিন্দা। সেখানকার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানালেনতাঁর স্কুল থেকে যে সব শিক্ষার্থী পাস করেতাদের ৮০ শতাংশের পরিকল্পনাই বিদেশে যাওয়ার।

এখানকার বেশিরভাগ বাবা-মা কম আয়ের,” তিনি বলেন। সন্তানকে পড়াশোনা বা দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ করে দেওয়া তাদের কাছে অগ্রাধিকার নয়। তারা চায় সন্তান যত দ্রুত সম্ভব টাকা উপার্জন শুরু করুক এবং বাড়িতে রেমিট্যান্স পাঠাকযাতে সবার জীবনমান উন্নত হয়।

২০২৫ সালের মার্চে যুক্তরাজ্যের হোম অফিস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার শুরু করেছেযাতে অবৈধ পথে ভিয়েতনামিদের যাত্রা প্রতিহত করা যায়। ভিয়েতনামের সরকারও চোরাপথে বিদেশ যাওয়ার বিপদ সম্পর্কে কিছু প্রচারণা চালিয়েছে। কিন্তু এসব অঞ্চলে যতদিন পর্যন্ত ভালো মানের কাজ ও আয়ের সুযোগ তৈরি না হবেততদিন এই প্রচারণার বাস্তব ফলাফল সামান্যই থাকবে বলে অনেকে মনে করেন।

ভিয়েতনাম-ভিত্তিক মানবপাচার রোধে কাজ করা সংগঠন প্যাসিফিক লিঙ্কস-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা দিয়েপ ভুয়ং বলছেন, “এ ধরনের প্রচার একবার করে থেমে গেলেই হবে নাধারাবাহিকভাবে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।” তিনি নিজেও ১৯৮০ সালে ভিয়েতনাম থেকে নৌকায় চেপে যুক্তরাষ্ট্রে যান।

ভিয়েতনামে পরিবারকে সবার আগে রাখার সামাজিক ও নৈতিক চাপ খুব বেশি। এই মানসিক শেকল থেকে বেরোনো সহজ নয়। তবে সঠিক তথ্য যদি বছরের পর বছর ধরে দেওয়া যায়মানুষ হয়তো একসময় ভাবনা বদলাবে।

তবে এর বিরুদ্ধে কাজ করে সফল অভিবাসীদের জাঁকজমকপূর্ণ’ ফিরে আসার কাহিনি। যাঁরা ব্যর্থ হনতাঁরা লজ্জায় তেমন কাউকে কিছু না জানিয়ে চুপ হয়ে থাকেন। আর ২০১৯ সালের সেই ৩৯ জনের মর্মান্তিক ঘটনাকে এখনো দুর্ভাগ্য’ হিসেবেই দেখার প্রবণতা রয়েছেযেন অন্যান্যদের ক্ষেত্রে সব ঠিকই আছে।