০৯:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
মংলায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ প্রবাসী নারী পর্যটক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও ৮৩৪ জন পাকিস্তানের দুর্ভিক্ষের বছর? প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রত্যাশীদের আমরণ অনশন ৬৫ ঘণ্টা অতিক্রম, সরকারের নীরবতা অব্যাহত গণভোটের কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই: বিএনপি নেতা আমীর খসরু শাহবাগে শিক্ষকদের সমাবেশ ছত্রভঙ্গে পুলিশের পদক্ষেপের পক্ষে ডিএমপি গণভোটের জন্যে সাত দিনের আলটিমেটাম অগ্রহণযোগ্য: সরকারের সমালোচনায় সালাহউদ্দিন শাহবাগে শিক্ষক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত ১২০ জন প্রবল বৃষ্টিতে গাবা ম্যাচ বাতিল, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি২০ সিরিজ জিতল ভারত চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করেছে পাকিস্তানি নৌযান ‘পিএনএস সাইফ’

শাইনিং শাংহাই

  • Sarakhon Report
  • ০৩:৪৩:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫
  • 63

মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান

চায়নার সমুদ্র তীরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ শহর শাংহাই। বলা হয়ে থাকে চায়নার অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু হলো শাংহাই। প্রথম অবস্থায় বাইরে থেকে একে শুধু বাণিজ্যিক নগর মনে হলেও শাংহাই একেবারেই ভিন্ন ধরনের একটি শহর। যার নিজস্বতা রয়েছে। একটি সপ্রাণ শহর হিসাবে দিনে এবং রাতে শাংহাই হয়ে ওঠেছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

আধুনিক শহর বলতে যা বোঝায় শাংহাই তাই। তবে শাংহাই নিয়ে গবেষণা করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান শাংহাই একাডেমি অফ সোশাল সায়েন্স (সাস)-এর গবেষকরা এতে সন্তুষ্ট নন। তারা শাংহাই নিয়ে এক মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। তাদের পরিকল্পনা অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে শাংহাই আঞ্চলিক সেরা শহর, ২০৪০ সালের মধ্যে গ্লোবাল সিটি এবং ২০৫০ সালের মধ্যে সিভিলাইজড গ্লোবাল সিটিতে পরিণত হবে। সেজন্য তারা কীভাবে কাজ করবেন তার বিস্তারিত পরিকল্পনা করা হয়েছে। শাংহাই পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা শহর হিসাবে সবার উপরে থাকবে এটাই তাদের পরিকল্পনা।

একজন পর্যটক শাংহাই এলে তার পছন্দের বিষয় খুঁজে পাবেন সহজেই। এখানে বাণিজ্যপ্রেমী, প্রযুক্তিপ্রেমী, প্রকৃতিপ্রেমী, ইতিহাসপ্রেমী, সংস্কৃতিপ্রেমী, অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী কিংবা শপিংপ্রেমী সবার জন্যই রয়েছে অবারিত সুযোগ।

শাংহাইয়ের অনেক দর্শনীয় স্থান ও বিষয়ের মধ্যে কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হলো:

ম্যাগলেভ ট্রেন

ম্যাগনেটিক লেভিটেশন ট্রেন বা সংক্ষেপে ম্যাগলেভ ট্রেন শাংহাইয়ের যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ বাহন। এই ট্রেন পরীক্ষামূলক ভাবে ঘণ্টায় ৪৩১ কিলোমিটার বেগে চলেছে। যা পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুততম ট্রেন হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। তবে এখন ৪০০ বা তার বেশি কিলোমিটার বেগে ট্রেনের গতি পাওয়া যায়। পুডং এয়ারপোর্ট থেকে শাংহাই শহরের আসতে এই ট্রেন ব্যবহার করলে দ্রুতগামী ট্রেনে চড়ার আনন্দ মেলে। আরো দূরবর্তী যাত্রাও এই ট্রেনে করা যায়। এই ট্রেনের ইতিহাস নিয়ে শাংহাইয়ে একটি জাদুঘর আছে।

হুয়াংপু নদীতে ক্রুজ

শাংহাই শহরের মাঝ দিয়ে বয়ে গিয়েছে হুয়াংপু নদী। ঢাকার যেমন বুড়িগঙ্গার দু’পাশে নগর গড়ে ওঠেছে। তবে হুয়াংপু নদীর পানি স্বচ্ছ। কোনো ময়লা কেউ ফেলে না। দিনে এবং রাতে এখানে চলে অনেক ক্রুজ। বিশেষ করে রাতের শাংহাইয়ের আলোর খেলা দেখতে নদীতে ক্রজের বিকল্প নেই। নদীর দুই পাশ বাধাই করা। এই বান্ড হচ্ছে ভ্রমণের অন্যতম জায়গা। শাংহাইয়ের ক্লাসিক স্কাইলাইন ভিউ দেখতে চাইলে দাঁড়াতে হবে বান্ডে গিয়ে।

ওরিয়েন্টাল পার্ল টিভি টাওয়ার

পার্ল টাওয়ার উচ্চতার দিক দিয়ে এখন শাংহাইয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভবন। বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষ এই ভবনে পর্যটকদের আকর্ষণ নানাবিধ কারণে। হুয়াংপু নদীর কাছে বানানো এই ভবনের শীর্ষ থেকে শাংহাই শহরটির বড় একটি অংশ দেখা যায়। ৪৭৪ মিটার বা ১,৫৫৫ ফিট উপরে অবস্থিত পাবলিক অবজারভেটরি হচ্ছে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থান। এর আরেকটি বড় আকর্ষণ ঘূর্ণয়মান রেস্তোরা। এছাড়া আছে মুভি হল, থ্রি ডি প্রেজেনটেশন যার মাধ্যমে ২০৫০ সালের শাংহাইকে দেখা যাবে। টেকনোলজির নানা প্রয়োগ রয়েছে ভবনের বিভিন্ন জায়গায়। উপরে কাঁচের তৈরি মেঝেতে দাঁড়ালে নিচের দিকে নদী ও শহর দেখা যায়। যা একই সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ বিষয়।

শাংহাই মিউজিয়াম

ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য শাংহাই গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে তারা অতীত ইতিহাস সংরক্ষণের পাশাপাশি বর্তমান ইতিহাসকেও রক্ষণাবেক্ষণ করে চলেছে। এ কারণে নগর, রেলসহ নানা কার্যালয়ে রয়েছে নিজস্ব জাদুঘর।

শাংহাই মিউজিয়ামে এক লাখ ২০ হাজারের বেশি প্রতœ সামগ্রী প্রদর্শিত হচ্ছে। নানজিং রোডের কাছে পিপল’স স্কোয়ারে অবস্থিত এই জাদুঘরে নান্দনিকতার পাশাপাশি টেকনলোজরি সমন্বয় ঘটেছে। প্রতিটি সামগ্রীর ডিজিটাল বর্ণনার ব্যবস্থা আছে জাদুঘরে। এখানে প্রাচীন ব্রোঞ্জ যুগের প্রচুর সামগ্রী আছে। আছে কয়েন, পেইনটিং, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এর সুভিনির শপটিও বেশ বড়।

শাংহাই শহরে চায়না আর্ট মিউজিয়াম, শাংহাই সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি মিউজিয়াম, মাদাম তুসো মিউজিয়ামসহ ছোট বড় মিলিয়ে মোট ২৬টি জাদুঘর। নগর উপকণ্ঠে আছে আরো অন্তত ৬টি মিউজিয়াম।

শাংহাই আরবান প্ল্যানিং এক্সিবিশন সেন্টার

২০২০ সালে শাংহাই কেমন হবে তার একটি চমৎকার উপস্থাপনা রয়েছে শাংহাই আরবান প্ল্যানিং এক্সিবিশন সেন্টারে। এখানে পুরো শহরটির মডেল করা আছে। যা দর্শকদের বিস্মিত করে। একই সঙ্গে আছে অতীতের শাংহাই নিয়ে ডিসপ্লে। পুরো শহরটির অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এই সেন্টার ঘুরে বেড়ালে।

নানজিং সড়কে শপিং

বিশ্বের প্রধান প্রায় সব ব্র্যান্ডই আছে শাংহাইয়ে। শপিংয়ের সেরা জায়গা হিসাবে পরিচিত নানজিং সড়ক। এর আশে পাশে গড়ে ওঠেছে নানা রকম শপিং মল থেকে শুরু করে ছোট দোকান। যারা ধৈর্য নিয়ে ঘুরে বেড়িয়ে দেখে শুনে শপিং করতে পারেন তাদের জন্য এই এলাকা যথাযথ।

শাংহাইয়ে রয়েছে ১৫৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউ গার্ডেন বা গার্ডেন অফ হ্যাপিনেস, বিশাল সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, চায়নিজ মেইন ল্যান্ডের প্রথম ডিজনিল্যান্ড, শাংহাই ওশান অ্যাকুরিয়াম, শাংহাই চিড়িয়াখানা, ফরাসি ঐতিহ্যম-িত তিয়ানজিফাং এলাকা, ১৯১১ সালে নির্মিত ক্যাথেড্রাল ও ব্যাসিলিকা সহ আরো অনেক কিছু।

জলের শহর ঝুজাজাও

চায়নার শাংহাই শহরের কাছে ঘণ্টা দেড়েকের ড্রাইভে অবস্থিত ঝুজাজাও ১৭০০ বছরের পুরানো। ৪৭ বর্গ কিলোমিটারের এলাকা জুড়ে এই শহরটি এখনো পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু। জলরাশি পুরো শহরটিকে ঘিরে রেখেছে। একারণে এই শহরকে চায়নার ভেনিস বলা হয়। এর চারপাশের পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গড়ে ওঠেছে অসংখ্য দোকান পাট, খাবারের দোকান। কিন্তু সবগুলোর ডিজাইনই শহরটির চরিত্রের সঙ্গে মিলিয়ে করা হয়েছে।

শহরের বড় আকর্ষণ মিং রাজত্বের সময়ে নির্মিত ফ্যানশেং ব্রিজ। প্রায় সাড়ে চারশ বছরের পুরানো পাথরে তৈরি এই ব্রিজ এখনো প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত থাকে।

নর্থ স্ট্রিট বলে পরিচিত উত্তরের রাস্তাটি একানকার সবচেয়ে পুরানো রাস্তা। এটির কাজ শুরু হয় মিং আমলে শেষ হয় শিং আমলে। এক কিলোমিটার ধৈর্ঘের এই সড়কটির দুই ধারে অসংখ্য পুরানো বাড়ির পাশাপাশি গড়ে ওঠেছে দোকান এবং খাবারের দোকান।

শহরটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো শহর জুড়ে লেক ও নদী। ছোট বড় মোট ৩৬টি পাথরের সেতু আছে। লেক জুড়ে চলে কাঠের নৌকা যাতে পর্যটক ও স্থানীয়রা চলাচল করেন। শহরটিতে লোক সংখ্যা পঞ্চাশ হাজারের মতো।

ফ্যানশেং ব্রিজ হলো শহরটির মিলন কেন্দ্র। এখানে এসে মিলিত হন বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ। কেউ কেউ আসেন পুরো পরিবার নিয়ে। হয়তো বৃদ্ধা মা চলতে পারেন না, তাকে হুইলচেয়ারে করে আনা হচ্ছে। আবার ছোট শিশুকে ট্রলিতে করে। পারিবারিক বন্ধনের চমৎকার রূপ দেখা যায় এখানে। কেউ আসেন বন্ধু নিয়ে।

ব্রিজের কাছে কিছুক্ষণ দাঁড়ালে দেখা যায় অনেক ধরনের মানুষের সমাবেশ। চায়নার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নাগরিকদের সঙ্গে পশ্চিমি, এশিয়ান ও আরো অনেক দেশের মানুষ।

 

লেখক পরিচিতি: সাংবাদিক ও গবেষক

জনপ্রিয় সংবাদ

মংলায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ প্রবাসী নারী পর্যটক

শাইনিং শাংহাই

০৩:৪৩:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫

মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান

চায়নার সমুদ্র তীরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ শহর শাংহাই। বলা হয়ে থাকে চায়নার অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু হলো শাংহাই। প্রথম অবস্থায় বাইরে থেকে একে শুধু বাণিজ্যিক নগর মনে হলেও শাংহাই একেবারেই ভিন্ন ধরনের একটি শহর। যার নিজস্বতা রয়েছে। একটি সপ্রাণ শহর হিসাবে দিনে এবং রাতে শাংহাই হয়ে ওঠেছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

আধুনিক শহর বলতে যা বোঝায় শাংহাই তাই। তবে শাংহাই নিয়ে গবেষণা করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান শাংহাই একাডেমি অফ সোশাল সায়েন্স (সাস)-এর গবেষকরা এতে সন্তুষ্ট নন। তারা শাংহাই নিয়ে এক মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। তাদের পরিকল্পনা অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে শাংহাই আঞ্চলিক সেরা শহর, ২০৪০ সালের মধ্যে গ্লোবাল সিটি এবং ২০৫০ সালের মধ্যে সিভিলাইজড গ্লোবাল সিটিতে পরিণত হবে। সেজন্য তারা কীভাবে কাজ করবেন তার বিস্তারিত পরিকল্পনা করা হয়েছে। শাংহাই পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা শহর হিসাবে সবার উপরে থাকবে এটাই তাদের পরিকল্পনা।

একজন পর্যটক শাংহাই এলে তার পছন্দের বিষয় খুঁজে পাবেন সহজেই। এখানে বাণিজ্যপ্রেমী, প্রযুক্তিপ্রেমী, প্রকৃতিপ্রেমী, ইতিহাসপ্রেমী, সংস্কৃতিপ্রেমী, অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী কিংবা শপিংপ্রেমী সবার জন্যই রয়েছে অবারিত সুযোগ।

শাংহাইয়ের অনেক দর্শনীয় স্থান ও বিষয়ের মধ্যে কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হলো:

ম্যাগলেভ ট্রেন

ম্যাগনেটিক লেভিটেশন ট্রেন বা সংক্ষেপে ম্যাগলেভ ট্রেন শাংহাইয়ের যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ বাহন। এই ট্রেন পরীক্ষামূলক ভাবে ঘণ্টায় ৪৩১ কিলোমিটার বেগে চলেছে। যা পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুততম ট্রেন হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। তবে এখন ৪০০ বা তার বেশি কিলোমিটার বেগে ট্রেনের গতি পাওয়া যায়। পুডং এয়ারপোর্ট থেকে শাংহাই শহরের আসতে এই ট্রেন ব্যবহার করলে দ্রুতগামী ট্রেনে চড়ার আনন্দ মেলে। আরো দূরবর্তী যাত্রাও এই ট্রেনে করা যায়। এই ট্রেনের ইতিহাস নিয়ে শাংহাইয়ে একটি জাদুঘর আছে।

হুয়াংপু নদীতে ক্রুজ

শাংহাই শহরের মাঝ দিয়ে বয়ে গিয়েছে হুয়াংপু নদী। ঢাকার যেমন বুড়িগঙ্গার দু’পাশে নগর গড়ে ওঠেছে। তবে হুয়াংপু নদীর পানি স্বচ্ছ। কোনো ময়লা কেউ ফেলে না। দিনে এবং রাতে এখানে চলে অনেক ক্রুজ। বিশেষ করে রাতের শাংহাইয়ের আলোর খেলা দেখতে নদীতে ক্রজের বিকল্প নেই। নদীর দুই পাশ বাধাই করা। এই বান্ড হচ্ছে ভ্রমণের অন্যতম জায়গা। শাংহাইয়ের ক্লাসিক স্কাইলাইন ভিউ দেখতে চাইলে দাঁড়াতে হবে বান্ডে গিয়ে।

ওরিয়েন্টাল পার্ল টিভি টাওয়ার

পার্ল টাওয়ার উচ্চতার দিক দিয়ে এখন শাংহাইয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভবন। বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষ এই ভবনে পর্যটকদের আকর্ষণ নানাবিধ কারণে। হুয়াংপু নদীর কাছে বানানো এই ভবনের শীর্ষ থেকে শাংহাই শহরটির বড় একটি অংশ দেখা যায়। ৪৭৪ মিটার বা ১,৫৫৫ ফিট উপরে অবস্থিত পাবলিক অবজারভেটরি হচ্ছে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থান। এর আরেকটি বড় আকর্ষণ ঘূর্ণয়মান রেস্তোরা। এছাড়া আছে মুভি হল, থ্রি ডি প্রেজেনটেশন যার মাধ্যমে ২০৫০ সালের শাংহাইকে দেখা যাবে। টেকনোলজির নানা প্রয়োগ রয়েছে ভবনের বিভিন্ন জায়গায়। উপরে কাঁচের তৈরি মেঝেতে দাঁড়ালে নিচের দিকে নদী ও শহর দেখা যায়। যা একই সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ বিষয়।

শাংহাই মিউজিয়াম

ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য শাংহাই গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে তারা অতীত ইতিহাস সংরক্ষণের পাশাপাশি বর্তমান ইতিহাসকেও রক্ষণাবেক্ষণ করে চলেছে। এ কারণে নগর, রেলসহ নানা কার্যালয়ে রয়েছে নিজস্ব জাদুঘর।

শাংহাই মিউজিয়ামে এক লাখ ২০ হাজারের বেশি প্রতœ সামগ্রী প্রদর্শিত হচ্ছে। নানজিং রোডের কাছে পিপল’স স্কোয়ারে অবস্থিত এই জাদুঘরে নান্দনিকতার পাশাপাশি টেকনলোজরি সমন্বয় ঘটেছে। প্রতিটি সামগ্রীর ডিজিটাল বর্ণনার ব্যবস্থা আছে জাদুঘরে। এখানে প্রাচীন ব্রোঞ্জ যুগের প্রচুর সামগ্রী আছে। আছে কয়েন, পেইনটিং, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এর সুভিনির শপটিও বেশ বড়।

শাংহাই শহরে চায়না আর্ট মিউজিয়াম, শাংহাই সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি মিউজিয়াম, মাদাম তুসো মিউজিয়ামসহ ছোট বড় মিলিয়ে মোট ২৬টি জাদুঘর। নগর উপকণ্ঠে আছে আরো অন্তত ৬টি মিউজিয়াম।

শাংহাই আরবান প্ল্যানিং এক্সিবিশন সেন্টার

২০২০ সালে শাংহাই কেমন হবে তার একটি চমৎকার উপস্থাপনা রয়েছে শাংহাই আরবান প্ল্যানিং এক্সিবিশন সেন্টারে। এখানে পুরো শহরটির মডেল করা আছে। যা দর্শকদের বিস্মিত করে। একই সঙ্গে আছে অতীতের শাংহাই নিয়ে ডিসপ্লে। পুরো শহরটির অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এই সেন্টার ঘুরে বেড়ালে।

নানজিং সড়কে শপিং

বিশ্বের প্রধান প্রায় সব ব্র্যান্ডই আছে শাংহাইয়ে। শপিংয়ের সেরা জায়গা হিসাবে পরিচিত নানজিং সড়ক। এর আশে পাশে গড়ে ওঠেছে নানা রকম শপিং মল থেকে শুরু করে ছোট দোকান। যারা ধৈর্য নিয়ে ঘুরে বেড়িয়ে দেখে শুনে শপিং করতে পারেন তাদের জন্য এই এলাকা যথাযথ।

শাংহাইয়ে রয়েছে ১৫৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউ গার্ডেন বা গার্ডেন অফ হ্যাপিনেস, বিশাল সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, চায়নিজ মেইন ল্যান্ডের প্রথম ডিজনিল্যান্ড, শাংহাই ওশান অ্যাকুরিয়াম, শাংহাই চিড়িয়াখানা, ফরাসি ঐতিহ্যম-িত তিয়ানজিফাং এলাকা, ১৯১১ সালে নির্মিত ক্যাথেড্রাল ও ব্যাসিলিকা সহ আরো অনেক কিছু।

জলের শহর ঝুজাজাও

চায়নার শাংহাই শহরের কাছে ঘণ্টা দেড়েকের ড্রাইভে অবস্থিত ঝুজাজাও ১৭০০ বছরের পুরানো। ৪৭ বর্গ কিলোমিটারের এলাকা জুড়ে এই শহরটি এখনো পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু। জলরাশি পুরো শহরটিকে ঘিরে রেখেছে। একারণে এই শহরকে চায়নার ভেনিস বলা হয়। এর চারপাশের পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গড়ে ওঠেছে অসংখ্য দোকান পাট, খাবারের দোকান। কিন্তু সবগুলোর ডিজাইনই শহরটির চরিত্রের সঙ্গে মিলিয়ে করা হয়েছে।

শহরের বড় আকর্ষণ মিং রাজত্বের সময়ে নির্মিত ফ্যানশেং ব্রিজ। প্রায় সাড়ে চারশ বছরের পুরানো পাথরে তৈরি এই ব্রিজ এখনো প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত থাকে।

নর্থ স্ট্রিট বলে পরিচিত উত্তরের রাস্তাটি একানকার সবচেয়ে পুরানো রাস্তা। এটির কাজ শুরু হয় মিং আমলে শেষ হয় শিং আমলে। এক কিলোমিটার ধৈর্ঘের এই সড়কটির দুই ধারে অসংখ্য পুরানো বাড়ির পাশাপাশি গড়ে ওঠেছে দোকান এবং খাবারের দোকান।

শহরটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো শহর জুড়ে লেক ও নদী। ছোট বড় মোট ৩৬টি পাথরের সেতু আছে। লেক জুড়ে চলে কাঠের নৌকা যাতে পর্যটক ও স্থানীয়রা চলাচল করেন। শহরটিতে লোক সংখ্যা পঞ্চাশ হাজারের মতো।

ফ্যানশেং ব্রিজ হলো শহরটির মিলন কেন্দ্র। এখানে এসে মিলিত হন বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ। কেউ কেউ আসেন পুরো পরিবার নিয়ে। হয়তো বৃদ্ধা মা চলতে পারেন না, তাকে হুইলচেয়ারে করে আনা হচ্ছে। আবার ছোট শিশুকে ট্রলিতে করে। পারিবারিক বন্ধনের চমৎকার রূপ দেখা যায় এখানে। কেউ আসেন বন্ধু নিয়ে।

ব্রিজের কাছে কিছুক্ষণ দাঁড়ালে দেখা যায় অনেক ধরনের মানুষের সমাবেশ। চায়নার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নাগরিকদের সঙ্গে পশ্চিমি, এশিয়ান ও আরো অনেক দেশের মানুষ।

 

লেখক পরিচিতি: সাংবাদিক ও গবেষক