০৩:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৬) শাওমির ১৭ আল্ট্রা ‘লাইকা এডিশন’: স্মার্টফোনে ফিরছে ম্যানুয়াল জুম রিং একাত্তরেও উৎসবের রাজকীয় গ্ল্যামার, লাল শাড়িতে নতুন সংজ্ঞা রচনা রেখার ইউক্রেনের দাবি: রাশিয়ার ওরেনবুর্গে বড় গ্যাস প্রক্রিয়াজাত কারখানায় ড্রোন হামলা দীপু চন্দ্র দাস হত্যাসহ নির্যাতনের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হিন্দু মহাজোটের মানববন্ধন শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে বাংলাদেশ, ঢাকাসহ সারাদেশে বেড়েছে শীতের দাপট জিয়ার কবর জিয়ারত করলেন তারেক রহমান গুলিস্তানের শপিং কমপ্লেক্সের ছাদে গুদামে আগুন তারেক রহমানের পক্ষে সাভারে শ্রদ্ধা জানাল বিএনপি প্রতিনিধিদল বিশ্ববাজারে পৌঁছাতে ভার্চুয়াল আইডলে বাজি কেপপ সংস্থার

রোমাঞ্চকর সময় (পর্ব -৫০)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 82

আর্কাদি গাইদার

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

বাড়িটা ছাড়িয়ে এসে মোড় ফিরেই খোয়াপাথরের একটা স্তূপের কাছে দাঁড়িয়ে পড়লুম। খবরটা শুনে আমার বুদ্ধিসুদ্ধি লোপ পাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। হঠাৎ বুঝতে পারলুম, অসম্ভব ক্লান্ত আর অসম্ভব ক্ষুধার্ত আমি। দাঁড়াতে পারছি না, ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে।

সরমোভোয় আর একটি লোককেই আমি জানতুম। তিনি হলেন নিকোলাই-মামা, আমার মা-র ভাই। কিন্তু তিনি যে কোথায় থাকেন, কোথায় কাজ করেন, কিংবা আমাকেই-বা কেমন ভাবে গ্রহণ করবেন তিনি, তার কিছুই জানতুম না।

এরপরও কয়েক ঘণ্টা সরমোভোর রাস্তায়-রাস্তায় প্রতিটি পথচারীর মুখের দিকে ভালো করে ঠাহর করে নিকোলাই-মামাকে খুঁজে বেড়ালুম। কিন্তু কোথায় নিকোলাই-মামা? তাঁর টিকিটিরও সন্ধান পেলুম না।

অসম্ভবরকম একা, পরিত্যক্ত আর অসহায় মনে হতে লাগল নিজেকে। অবশেষে মাছের আঁশ-ছড়ানো আর বৃষ্টিতে হলদে-হয়ে-যাওয়া চুনে-ঢাকা এক টুকরো ঘাসের জমিতে বসে পড়লুম। তারপর ওখানেই শুয়ে পড়ে চোখ বন্ধ করে আমার ওই অবস্থা আর দুর্ভাগ্যের কথা ভাবতে লাগলুম।

আর যতই ভাবতে লাগলুম দুঃখে ততই মনটা ভরে উঠতে লাগল, বাড়ি থেকে পালিয়ে আসাটাও তত অর্থহীন ঠেকতে লাগল।

তবু, তা সত্ত্বেও, আর জামাসে আবার ফিরে যাওয়ার চিন্তাটা মনে স্থান দিলুম না। মনে হল, ফিরে গেলে সেখানে আমি আরও একা হয়ে যাব। তাহলে তুপিকভকে যেমন সকলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য, ঠাট্টাবিদ্রূপ করেছিল আমাকেও তেমনই করবে। মা মুখে কিছু বলবেন না বটে, কিন্তু মনে-মনে ভারি কষ্ট পাবেন। আর আমি যতদূর তাঁকে চিনি, তিনি নির্ঘাত ইশকুলে গিয়ে আমাকে আবার ভরুতি করে নেবার জন্যে হেডমাস্টারমশাইকে সাধাসাধি করবেন।

না, তা কিছুতেই হবে না। এর শেষ দেখে তবে ছাড়ব। আজামাসে থাকতে সত্যিকার সবল প্রবল জীবনকে আমাদের শহরের পাশ ঘে’যে ট্রেন ছুটিয়ে, চারিদিকে আগুনের ফুলকি আর ধকধুকে আলোর ফোয়ারা ছড়িয়ে যেতে দেখেছি। তখন আমার মনে হয়েছে, আমাকে শুধু একটু কষ্ট করে যে-কোনো একটা ছুটন্ত কামরার সি’ড়িতে লাফিয়ে উঠতে হবে। কোনো-রকমে একটু পা রাখার জায়গা হলেও চলবে আমার। আর হাতলটা চেপে ধরতে পারলেই কেউ আমায় ঠেলে আবার ফেলে দিতে পারবে না।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৬)

রোমাঞ্চকর সময় (পর্ব -৫০)

০৮:০০:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

আর্কাদি গাইদার

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

বাড়িটা ছাড়িয়ে এসে মোড় ফিরেই খোয়াপাথরের একটা স্তূপের কাছে দাঁড়িয়ে পড়লুম। খবরটা শুনে আমার বুদ্ধিসুদ্ধি লোপ পাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। হঠাৎ বুঝতে পারলুম, অসম্ভব ক্লান্ত আর অসম্ভব ক্ষুধার্ত আমি। দাঁড়াতে পারছি না, ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে।

সরমোভোয় আর একটি লোককেই আমি জানতুম। তিনি হলেন নিকোলাই-মামা, আমার মা-র ভাই। কিন্তু তিনি যে কোথায় থাকেন, কোথায় কাজ করেন, কিংবা আমাকেই-বা কেমন ভাবে গ্রহণ করবেন তিনি, তার কিছুই জানতুম না।

এরপরও কয়েক ঘণ্টা সরমোভোর রাস্তায়-রাস্তায় প্রতিটি পথচারীর মুখের দিকে ভালো করে ঠাহর করে নিকোলাই-মামাকে খুঁজে বেড়ালুম। কিন্তু কোথায় নিকোলাই-মামা? তাঁর টিকিটিরও সন্ধান পেলুম না।

অসম্ভবরকম একা, পরিত্যক্ত আর অসহায় মনে হতে লাগল নিজেকে। অবশেষে মাছের আঁশ-ছড়ানো আর বৃষ্টিতে হলদে-হয়ে-যাওয়া চুনে-ঢাকা এক টুকরো ঘাসের জমিতে বসে পড়লুম। তারপর ওখানেই শুয়ে পড়ে চোখ বন্ধ করে আমার ওই অবস্থা আর দুর্ভাগ্যের কথা ভাবতে লাগলুম।

আর যতই ভাবতে লাগলুম দুঃখে ততই মনটা ভরে উঠতে লাগল, বাড়ি থেকে পালিয়ে আসাটাও তত অর্থহীন ঠেকতে লাগল।

তবু, তা সত্ত্বেও, আর জামাসে আবার ফিরে যাওয়ার চিন্তাটা মনে স্থান দিলুম না। মনে হল, ফিরে গেলে সেখানে আমি আরও একা হয়ে যাব। তাহলে তুপিকভকে যেমন সকলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য, ঠাট্টাবিদ্রূপ করেছিল আমাকেও তেমনই করবে। মা মুখে কিছু বলবেন না বটে, কিন্তু মনে-মনে ভারি কষ্ট পাবেন। আর আমি যতদূর তাঁকে চিনি, তিনি নির্ঘাত ইশকুলে গিয়ে আমাকে আবার ভরুতি করে নেবার জন্যে হেডমাস্টারমশাইকে সাধাসাধি করবেন।

না, তা কিছুতেই হবে না। এর শেষ দেখে তবে ছাড়ব। আজামাসে থাকতে সত্যিকার সবল প্রবল জীবনকে আমাদের শহরের পাশ ঘে’যে ট্রেন ছুটিয়ে, চারিদিকে আগুনের ফুলকি আর ধকধুকে আলোর ফোয়ারা ছড়িয়ে যেতে দেখেছি। তখন আমার মনে হয়েছে, আমাকে শুধু একটু কষ্ট করে যে-কোনো একটা ছুটন্ত কামরার সি’ড়িতে লাফিয়ে উঠতে হবে। কোনো-রকমে একটু পা রাখার জায়গা হলেও চলবে আমার। আর হাতলটা চেপে ধরতে পারলেই কেউ আমায় ঠেলে আবার ফেলে দিতে পারবে না।