০৫:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

রোমাঞ্চকর সময় (পর্ব -৫২)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 17

আর্কাদি গাইদার

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

সুদূর অচিন দেশের যে-মোহিনী মায়া মেইন রীডের গ্রন্থাবলীর তরুণ পাঠকপাঠিকার মন ভোলাত তার চেয়ে পাগল-করা সৌন্দর্যে’র বিচারে প্রলেতারিয়েতের ছিনিয়ে নেয়ার অপেক্ষায় ছিল যে-‘সমুজ্জল রাজত্ব’ তার আকর্ষণ আমার কাছে অনেক বেশি দুর্বার ঠেকল। মেইন রীডের অচিন দেশ যত সুদূরই হোক, মানুষে ওরিমধ্যেই তাদের আবিষ্কার করে ফেলেছিল। আর ইশকুলের নীরস ম্যাপে তাদের ভাগ-ভাগ করে ছকে দেখানো ছিল।

কিন্তু পোস্টারে সেই-যে ‘সমুজ্জল রাজত্ব’-এর কথা বলা হয়েছিল, তা তখনও পর্যন্ত কেউ জয় করতে পারে নি। সেই রহস্যময় দেশে কোনো মানুষের পা পড়ে নি তখনও পর্যন্ত।

হঠাৎ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ে বুড়ো মানুষটি বললেন:

‘তোর বোধহয় ক্লান্তি লাগছে, না ব্যাটা? যা, তুই বাড়ি যা। আমি একাই পারব’খন।’

ভাবলুম, এখুনি তো আবার সেই একা পড়ে যাব। বললুম, ‘না-না, আমার একটুও ক্লান্তি লাগছে না।’

‘তবে, ঠিক আছে,’ বুড়ো বললেন, ‘দেখিস ব্যাটা, বাড়ি গেলে কেউ তোরে বকবে না তো?”

হঠাৎ কেমন সত্যি কথা বলতে ইচ্ছে হল। বললুম, ‘আমার তো বাড়ি নেই। মানে, বাড়ি আছে তবে সে অনেক দূরে।’

আর, একবার বলতে শুরু করলে মনের কথা চেপে রাখা মুস্কিল। বুড়োকে একে একে সব কথাই বলে ফেললুম।

বুড়ো মন দিয়ে সব কিছু শুনলেন। তারপর স্থিরদৃষ্টিতে, একটু যেন কৌতুক নিয়ে, আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ।

তারও পরে শান্তভাবে বললেন, ‘তাইলে তো খুঁজে দেখতি হয়। সরমোভো মস্ত জায়গা তো। তা, জলজ্যান্ত একটা মানুষও কিছু খড়ের গাদায় ছাঁচ লয়। খুঁজে বের করাই যায়। কী কইলে, তোমার মামা ফিটার, তাই না?’

শুনে একটু আশা হল। খুশি হয়ে বললুম, ‘তাই তো শুনেছি। ওর নাম নিকোলাই। নিকোলাই দূরিয়াকভ। বাপির মতো ও-ও নিশ্চয়ই পার্টির লোক। কমিটির লোক নিশ্চয়ই ওকে চেনে?’

‘উ’হ, চিনি বলে তো মনে লিচে না। যা হোক, পোস্টার মারা শেষ হলি তুই আমার সঙ্গে আসিস, কেমন? দেখি, একবার আমাদের মানুষজনেরে জিজ্ঞেসাবাদ করে।’

 

রোমাঞ্চকর সময় (পর্ব -৫২)

০৮:০০:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

আর্কাদি গাইদার

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

সুদূর অচিন দেশের যে-মোহিনী মায়া মেইন রীডের গ্রন্থাবলীর তরুণ পাঠকপাঠিকার মন ভোলাত তার চেয়ে পাগল-করা সৌন্দর্যে’র বিচারে প্রলেতারিয়েতের ছিনিয়ে নেয়ার অপেক্ষায় ছিল যে-‘সমুজ্জল রাজত্ব’ তার আকর্ষণ আমার কাছে অনেক বেশি দুর্বার ঠেকল। মেইন রীডের অচিন দেশ যত সুদূরই হোক, মানুষে ওরিমধ্যেই তাদের আবিষ্কার করে ফেলেছিল। আর ইশকুলের নীরস ম্যাপে তাদের ভাগ-ভাগ করে ছকে দেখানো ছিল।

কিন্তু পোস্টারে সেই-যে ‘সমুজ্জল রাজত্ব’-এর কথা বলা হয়েছিল, তা তখনও পর্যন্ত কেউ জয় করতে পারে নি। সেই রহস্যময় দেশে কোনো মানুষের পা পড়ে নি তখনও পর্যন্ত।

হঠাৎ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ে বুড়ো মানুষটি বললেন:

‘তোর বোধহয় ক্লান্তি লাগছে, না ব্যাটা? যা, তুই বাড়ি যা। আমি একাই পারব’খন।’

ভাবলুম, এখুনি তো আবার সেই একা পড়ে যাব। বললুম, ‘না-না, আমার একটুও ক্লান্তি লাগছে না।’

‘তবে, ঠিক আছে,’ বুড়ো বললেন, ‘দেখিস ব্যাটা, বাড়ি গেলে কেউ তোরে বকবে না তো?”

হঠাৎ কেমন সত্যি কথা বলতে ইচ্ছে হল। বললুম, ‘আমার তো বাড়ি নেই। মানে, বাড়ি আছে তবে সে অনেক দূরে।’

আর, একবার বলতে শুরু করলে মনের কথা চেপে রাখা মুস্কিল। বুড়োকে একে একে সব কথাই বলে ফেললুম।

বুড়ো মন দিয়ে সব কিছু শুনলেন। তারপর স্থিরদৃষ্টিতে, একটু যেন কৌতুক নিয়ে, আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ।

তারও পরে শান্তভাবে বললেন, ‘তাইলে তো খুঁজে দেখতি হয়। সরমোভো মস্ত জায়গা তো। তা, জলজ্যান্ত একটা মানুষও কিছু খড়ের গাদায় ছাঁচ লয়। খুঁজে বের করাই যায়। কী কইলে, তোমার মামা ফিটার, তাই না?’

শুনে একটু আশা হল। খুশি হয়ে বললুম, ‘তাই তো শুনেছি। ওর নাম নিকোলাই। নিকোলাই দূরিয়াকভ। বাপির মতো ও-ও নিশ্চয়ই পার্টির লোক। কমিটির লোক নিশ্চয়ই ওকে চেনে?’

‘উ’হ, চিনি বলে তো মনে লিচে না। যা হোক, পোস্টার মারা শেষ হলি তুই আমার সঙ্গে আসিস, কেমন? দেখি, একবার আমাদের মানুষজনেরে জিজ্ঞেসাবাদ করে।’