০৬:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
মার্কিন-দক্ষিণ কোরিয়া বাণিজ্য চুক্তির পর দেশে বড় বিনিয়োগ ঘোষণা স্যামসাং ও হিউন্দাইয়ের চীন সফরে জার্মান অর্থমন্ত্রী: বাণিজ্য ঘাটতি, রেয়ার আর্থ সংকট ও ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েনে নতুন উত্তেজনা রাশিয়ার নোভোরোসিস্ক বন্দর আবারও তেল রফতানি শুরু করেছে  সাফা কবির: আলো-অন্ধকার ছুঁয়ে উঠে আসা এক তারকার আত্মজয়ের গল্প বিশাল উলি ম্যামথ ‘ইউকা’র জমাট দেহে চমকপ্রদ আবিষ্কার জামায়াত নেতার গাড়িতে অগ্নিসংযোগ মরমন স্ত্রীদের গোপন জীবন: আমেরিকার সাংস্কৃতিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি আইফোন পকেট: স্টাইলিশ নাকি অর্থের অপচয়? নস্ট্যালজিয়ায় জোয়ার—বয়স্কদের লেগো-ক্রেজ বাড়াচ্ছে নতুন প্রবণতা বাংলাদেশ সীমান্তে ভারত কেন শক্তি বৃদ্ধি করছে?

নকশী পল্লী প্রকল্প: অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও রাজনৈতিক প্রভাব

  • Sarakhon Report
  • ০২:৫৫:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 53

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

১। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে শেখ হাসিনা নকশী পল্লী প্রকল্পটি অনুমোদন পায়, যার লক্ষ্য ছিল জামালপুরের কমপুর এলাকায় শিল্পী, কারিগর এবং তাঁতিদের জন্য একটি বিশেষায়িত অঞ্চল গড়ে তোলা।

২। প্রকল্পের প্রথম ধাপে ৭৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়, যা পরবর্তীতে ৫,২০০ কোটিতে পৌঁছায়।

৩। প্রকল্প অনুমোদনের পাঁচ বছর পরেও কার্যত কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।


প্রকল্পের অনুমোদন ও উদ্দেশ্য

জামালপুরের কমপুর এলাকায় শিল্পী, কারিগর এবং তাঁতিদের জন্য একটি বিশেষায়িত অঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের অনুমোদন পায় শেখ হাসিনা নকশী পল্লী প্রকল্পটি । প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য ছিল কারিগরদের প্রশিক্ষণ, দারিদ্র্য বিমোচন, এবং নকশী শিল্পের প্রসার ঘটানো।

প্রকল্পের রাজনৈতিক অনুমোদন ও বিতর্ক

পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক চাপের কারণে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। বিশেষ করে, সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের প্রভাব প্রকল্প অনুমোদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তিনি জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

বাজেট ও প্রাথমিক কাঠামো

প্রথম পর্যায়ে ৭৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়, যা মূলত ভূমি অধিগ্রহণ ও মাটি ভরাটের জন্য ব্যবহার হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পের জন্য ঝিনাই নদীর তীরে ৩০০ একর কৃষিজমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা ছিল, যা পরবর্তীতে ৫,২০০ কোটি টাকার সামগ্রিক ব্যয়ে সম্প্রসারিত হয়।

পরিকল্পনা কমিশনের উদ্বেগ

জামালপুরের বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ৩০০ প্রতিষ্ঠান এবং ২,০০,০০০ কারিগর আগে থেকেই নকশী শিল্পে জড়িত থাকায় পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটির কার্যকারিতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।

একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “বেশিরভাগ কারিগর গৃহিণী, যারা অবসর সময়ে কাজ করেন। তাদের এক স্থানে কেন্দ্রীভূত করা বিদ্যমান ব্যবস্থাকে ব্যাহত করতে পারে এবং তহবিল অপচয়ের সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে।”

অগ্রগতির অভাব ও অনিশ্চয়তা

প্রকল্প অনুমোদনের পাঁচ বছর পরেও কার্যত কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. মতিউর রহমান জানান, অর্থায়নের অভাবে প্রকল্পটি স্থগিত রয়েছে।

“মূল সমস্যা হলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের তহবিল ছাড়ে বিলম্ব। শুরুতে ১০০ একর পরিকল্পিত ছিল, পরে তা ৩০০ একরে সম্প্রসারিত হয়, যার মধ্যে নদীর তীরের ৫৬ একর খাস জমি অন্তর্ভুক্ত, যা আরও আপত্তির সৃষ্টি করেছে,” তিনি বলেন।

স্থানীয় উদ্যোক্তাদের উদ্বেগ

স্থানীয় উদ্যোক্তা মো. শাহিনুর আলম জানান, “আমরা জামালপুরের বিভিন্ন এলাকায় নকশী কাপড়ের ব্যবসা পরিচালনা করি। আমাদের সুপারভাইজাররা নকশা তৈরি করেন এবং কাজটি গ্রামীন কারিগরদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। জামালপুরের নকশী কাঁথা, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ বিদেশেও স্বীকৃত।” তিনি মনে করেন, প্রকল্পটি ব্যর্থ হলে স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা ও সম্ভাব্য বাতিল

বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল কাশেম মোহিউদ্দিন বলেন, “এই প্রকল্পটি জরুরি নয়, এবং এটি বর্তমান অবস্থায় টিকতে পারবে না। অনিয়ম তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্পগুলোর পর্যালোচনার গুরুত্বের ওপর জোর দেন, যাতে উন্নয়ন ব্যয় হ্রাস করা যায়।

উপসংহার

যদিও প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করা হয়নি, তবে বিলম্ব, অর্থায়নের অভাব, এবং কার্যকারিতা নিয়ে উদ্বেগের কারণে এটি বাস্তবায়নের অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

মার্কিন-দক্ষিণ কোরিয়া বাণিজ্য চুক্তির পর দেশে বড় বিনিয়োগ ঘোষণা স্যামসাং ও হিউন্দাইয়ের

নকশী পল্লী প্রকল্প: অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও রাজনৈতিক প্রভাব

০২:৫৫:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

১। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে শেখ হাসিনা নকশী পল্লী প্রকল্পটি অনুমোদন পায়, যার লক্ষ্য ছিল জামালপুরের কমপুর এলাকায় শিল্পী, কারিগর এবং তাঁতিদের জন্য একটি বিশেষায়িত অঞ্চল গড়ে তোলা।

২। প্রকল্পের প্রথম ধাপে ৭৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়, যা পরবর্তীতে ৫,২০০ কোটিতে পৌঁছায়।

৩। প্রকল্প অনুমোদনের পাঁচ বছর পরেও কার্যত কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।


প্রকল্পের অনুমোদন ও উদ্দেশ্য

জামালপুরের কমপুর এলাকায় শিল্পী, কারিগর এবং তাঁতিদের জন্য একটি বিশেষায়িত অঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের অনুমোদন পায় শেখ হাসিনা নকশী পল্লী প্রকল্পটি । প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য ছিল কারিগরদের প্রশিক্ষণ, দারিদ্র্য বিমোচন, এবং নকশী শিল্পের প্রসার ঘটানো।

প্রকল্পের রাজনৈতিক অনুমোদন ও বিতর্ক

পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক চাপের কারণে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। বিশেষ করে, সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের প্রভাব প্রকল্প অনুমোদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তিনি জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

বাজেট ও প্রাথমিক কাঠামো

প্রথম পর্যায়ে ৭৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়, যা মূলত ভূমি অধিগ্রহণ ও মাটি ভরাটের জন্য ব্যবহার হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পের জন্য ঝিনাই নদীর তীরে ৩০০ একর কৃষিজমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা ছিল, যা পরবর্তীতে ৫,২০০ কোটি টাকার সামগ্রিক ব্যয়ে সম্প্রসারিত হয়।

পরিকল্পনা কমিশনের উদ্বেগ

জামালপুরের বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ৩০০ প্রতিষ্ঠান এবং ২,০০,০০০ কারিগর আগে থেকেই নকশী শিল্পে জড়িত থাকায় পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটির কার্যকারিতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।

একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “বেশিরভাগ কারিগর গৃহিণী, যারা অবসর সময়ে কাজ করেন। তাদের এক স্থানে কেন্দ্রীভূত করা বিদ্যমান ব্যবস্থাকে ব্যাহত করতে পারে এবং তহবিল অপচয়ের সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে।”

অগ্রগতির অভাব ও অনিশ্চয়তা

প্রকল্প অনুমোদনের পাঁচ বছর পরেও কার্যত কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. মতিউর রহমান জানান, অর্থায়নের অভাবে প্রকল্পটি স্থগিত রয়েছে।

“মূল সমস্যা হলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের তহবিল ছাড়ে বিলম্ব। শুরুতে ১০০ একর পরিকল্পিত ছিল, পরে তা ৩০০ একরে সম্প্রসারিত হয়, যার মধ্যে নদীর তীরের ৫৬ একর খাস জমি অন্তর্ভুক্ত, যা আরও আপত্তির সৃষ্টি করেছে,” তিনি বলেন।

স্থানীয় উদ্যোক্তাদের উদ্বেগ

স্থানীয় উদ্যোক্তা মো. শাহিনুর আলম জানান, “আমরা জামালপুরের বিভিন্ন এলাকায় নকশী কাপড়ের ব্যবসা পরিচালনা করি। আমাদের সুপারভাইজাররা নকশা তৈরি করেন এবং কাজটি গ্রামীন কারিগরদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। জামালপুরের নকশী কাঁথা, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ বিদেশেও স্বীকৃত।” তিনি মনে করেন, প্রকল্পটি ব্যর্থ হলে স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা ও সম্ভাব্য বাতিল

বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল কাশেম মোহিউদ্দিন বলেন, “এই প্রকল্পটি জরুরি নয়, এবং এটি বর্তমান অবস্থায় টিকতে পারবে না। অনিয়ম তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্পগুলোর পর্যালোচনার গুরুত্বের ওপর জোর দেন, যাতে উন্নয়ন ব্যয় হ্রাস করা যায়।

উপসংহার

যদিও প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করা হয়নি, তবে বিলম্ব, অর্থায়নের অভাব, এবং কার্যকারিতা নিয়ে উদ্বেগের কারণে এটি বাস্তবায়নের অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।