সারাক্ষণ ডেস্ক
চীনা এআই সংস্থা ডিপসিক সাময়িকভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় তাদের চ্যাটবট অ্যাপগুলোর ডাউনলোড স্থগিত করেছে, কারণ তারা স্থানীয় গোপনীয়তা নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে কাজ করছে। সোমবার কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন, এপি এবং স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা যায়।
প্রতিষ্ঠানটি শনিবার রাতে অ্যাপল অ্যাপ স্টোর এবং গুগল প্লে-এর দক্ষিণ কোরিয়ান সংস্করণ থেকে তাদের অ্যাপগুলো সরিয়ে নিয়েছে। এটি মূলত দেশটির ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা কমিশন (PIPC)-এর সঙ্গে সমন্বয় করে গোপনীয়তা নীতিমালা আরও কঠোর করার প্রচেষ্টার অংশ।
গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগ
যদিও এই স্থগিতাদেশ বর্তমান মোবাইল ব্যবহারকারী বা ডেস্কটপ ক্লায়েন্টদের প্রভাবিত করছে না, তবু PIPC-এর তদন্ত বিভাগ প্রধান নাম সিওক দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যবহারকারীদের অ্যাপটি সরিয়ে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন এবং গোপনীয়তা সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ব্যক্তিগত তথ্য প্রবেশ করানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার একাধিক সরকারি সংস্থা ও কর্পোরেশন ইতোমধ্যেই ডিপসিককে তাদের নেটওয়ার্ক থেকে ব্লক করেছে, কারণ প্রতিষ্ঠানটির ডেটা সংগ্রহ পদ্ধতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
গত মাসে শুরু হওয়া তদন্তে PIPC আবিষ্কার করেছে যে ডিপসিক যথেষ্ট স্বচ্ছ নয় তৃতীয় পক্ষের কাছে ব্যবহারকারীদের তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে, এবং সংস্থাটি অতিরিক্ত ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করছে কি না সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
PIPC-এর উপসভাপতি চোই জাং-হিউক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “সেবা স্থগিত থাকা অবস্থায়, আমরা ডিপসিক এআই মডেলের ব্যক্তিগত ডেটা প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করব, যাতে এটি দেশের গোপনীয়তা আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং তথ্য নিরাপত্তা নিয়ে জনগণের উদ্বেগ দূর হয়।”
বিশ্বব্যাপী নিষেধাজ্ঞা এবং নিয়ন্ত্রকদের কড়া নজরদারি
শুধু দক্ষিণ কোরিয়াই নয়, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ ডিপসিকের কার্যক্রমের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করছে।
ইতালির ডেটা সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ ডিপসিক অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে, কারণ প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহারকারীদের তথ্য কীভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে সে বিষয়ে স্বচ্ছ নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক রাজ্য সরকারী ডিভাইসে ডিপসিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, এবং একদল দ্বিদলীয় আইনপ্রণেতা এই নিষেধাজ্ঞা সারাদেশে বাড়ানোর জন্য নতুন আইন প্রস্তাব করেছে।
অস্ট্রেলিয়া সরকার এবং দেশটির প্রধান ব্যাংক ও টেলিযোগাযোগ সংস্থাগুলো ডিপসিকের কার্যক্রম সীমিত করেছে।তাইওয়ানের ডিজিটাল বিষয়ক মন্ত্রণালয় জাতীয় নিরাপত্তার উদ্বেগের কারণ দেখিয়ে ডিপসিক নিষিদ্ধ করেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় ডিপসিক এখনো জনপ্রিয়। জানুয়ারির শেষ নাগাদ প্রায় ১২ লাখ দক্ষিণ কোরিয়ান স্মার্টফোন ব্যবহারকারী অ্যাপটি ডাউনলোড করেছে, যা ChatGPT-এর পর দ্বিতীয় সর্বাধিক ব্যবহৃত এআই প্ল্যাটফর্ম হিসেবে উঠে এসেছে বলে Wiseapp Retail-এর বিশ্লেষণে উঠে এসেছে।
চীনের প্রতিক্রিয়া
এদিকে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সমালোচনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “চীন সরকার তথ্য গোপনীয়তা ও নিরাপত্তাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় এবং তা আইন অনুযায়ী সুরক্ষিত করে। আমরা কখনো কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে আইনবহির্ভূতভাবে তথ্য সংগ্রহ বা সংরক্ষণ করতে বলিনি, এবং কখনো বলব না।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “জাতীয় নিরাপত্তার ধারণাকে অতিরিক্ত বিস্তৃত করা বা প্রযুক্তি ও বাণিজ্য বিষয়গুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করাকে চীন বরাবরই বিরোধিতা করে এসেছে। আমরা চীনা কোম্পানিগুলোর আইনগত অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”
তবে বিভিন্ন দেশে নিয়ন্ত্রকদের কঠোর অবস্থান এবং গোপনীয়তা সংক্রান্ত উদ্বেগ ডিপসিকের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
Leave a Reply