১০:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
নিজের জীবনের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে লিখলেন উপন্যাস ‘দ্য সিস্টার্স’ হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩৩) কলম্বিয়ার সংবিধান পরিবর্তনের উদ্যোগ সাকিব ও মাশরাফি ছাড়া পারফরম্যান্স, শ্রীলঙ্কা টেস্ট সিরিজের পর পথ কি? রাষ্ট্রে কখন ও কেন সংখ্যালঘুরা সংগঠিত ধর্ষণের শিকার হয় গ্রামীণ গর্ভবতী নারীদের আয়রন ঘাটতি: অর্ধেকের বেশি রক্তস্বল্পতায় আরব আমিরাত, মরুভূমি শহরে ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা মুরাদনগরে সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণ: ‘এরপর সরকার ক্ষমতায় থাকার যোগ্য নয়’—জাপা চেয়ারম্যান ইরান ও পাকিস্তান থেকে আফগানদের গণনির্বাসনে উদ্বেগ স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্যে নতুন নিষেধাজ্ঞা ভারতের, প্রভাব কেমন হবে

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১৬৯)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০১:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫
  • 21

শশাঙ্ক মণ্ডল

ব্রিটিশরাজত্বে সুন্দরবনের জমিদারদের অত্যাচার, সীমা লঙ্ঘন করেছিল, বীভৎসতম সামন্ততান্ত্রিক প্রথার শিকার ছিল কৃষকরা। তার কিছুকিছু স্মৃতি প্রবাদের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে- ‘রোদ দেখবি তো চলে যা সোনাবেড়ের কাছারি’, চাষিরা খাজনা দিতে পারেনি পেয়াদা জোর করে ধরে নিয়ে কাছারির উঠানের খুঁটিতে চাষিকে বেঁধে রেখেছে সারাদিনের প্রখর সূর্যকিরণ তার মাথার ওপরে। চারিদিকে কোন গাছপালা নেই, শুধু রোদ আর রোদ আর সেই সঙ্গে কাছারি বাড়ির সামনে প্রকাণ্ড এক পুকুর। এর জলে সূর্যের প্রতিফলন পড়ে এক বীভৎস পরিবেশ।

এই স্মৃতি প্রবাদটির মধ্যে ধরা পড়ে। ব্রিটিশরাজত্বের শুরুতে লবণশিল্পের এক উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র রায়মঙ্গলে সল্ট এজেন্সিতে মাহিন্দাররা যেতে চাইত না। গরিব চাষিদের জোর করে ধরে এখানে পাঠানো হত। রায়মঙ্গল নদীতীরের সুন্দরবন এলাকা জনবসতিশূন্য ভয়ঙ্কর স্থান হিসাবে সেদিন চিহ্নিত ছিল। সেই ভয়ের স্মৃতি-‘দুধে ভাতে খাও বাছা দুধে ভাতে খাও / পোদে যদি রস থাকেতো রায়মঙ্গলে যাও’। কিংবা টাকা টাকা টাকা, গায়ের রক্ত পানি করেও হাতের মুঠি ফাঁকা” – দরিদ্র চাষির জীবনে এর থেকে সত্য কথা আর কী হতে পারে?

কিছু প্রবাদের মধ্য দিয়ে মানুষের নির্বুদ্ধিতা অহমিকাকে ধিকৃত করা হচ্ছে। সেই সাথে কিছুটা পরিহাসপ্রিয়তা লক্ষ করা যাচ্ছে। সে যুগে কিছু কিছু জায়গায় ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সমাজের ধনী ব্যক্তিরা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে এগিয়ে এসেছে বিদ্যালয় পরিচালনার ভারও গ্রহণ করেছে কিন্তু এসব মানুষরা নিজেরা ইংরেজি শিক্ষার ব্যাপারে অজ্ঞ হলেও শিক্ষানুরাগী। পরীক্ষায় স্কুলের ছেলেরা ফেল করেছে। সম্পাদক শিক্ষকদের কাছে এসব বিষয়ে ফেলের কারণ জানছেন- সে সঙ্গে এগ্রিগেট এ ফেল করেছে কিছু ছেলে- এগ্রিগেট মাস্টার মশাই কে তার খোঁজ নিচ্ছেন সম্পাদক মশাই। তাদের নির্বুদ্ধিতা নিয়ে যতই পরিহাস করা হোক, সে যুগ পরিবেশে এসব সম্পাদকদের স্কুলের প্রতি ভালোবাসাকে তো আজকে অস্বীকার করা যাবে না।

আবার কোন ধনী জমিদার প্রজাদের খাজনা মকুবের প্রার্থনা প্রসঙ্গে জানলেন ধানগাছ বড় হয়েছিল কিন্তু ফসল ফলবার মুখে বাঁধ ভেঙে নদীর জলে শস্যহানি ঘটছে। সে জন্য অভাবী প্রজারা খাজনা দিতে পারছে না। জমিদার তখন প্রজাদের বলছেন- ধান গাছ বড় হয়েছিল কিন্তু ফল হয়নি। ধানগাছে তো তক্তা হবে- সেই তক্তা বিক্রয় করলে প্রজারা অতি সহজে জমির সামান্য খাজনা শোধ দিতে পারবে। জমি এবং কৃষির সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পর্কহীন, গ্রামজীবন সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ শহুরে মানুষরা জমির মালিক হয়েছে- তাদেরকে ধিকৃত করার জন্য প্রবচনটির উদ্ভব ‘ধান গাছে তক্তা।’

 

 

নিজের জীবনের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে লিখলেন উপন্যাস ‘দ্য সিস্টার্স’

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১৬৯)

১২:০১:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫

শশাঙ্ক মণ্ডল

ব্রিটিশরাজত্বে সুন্দরবনের জমিদারদের অত্যাচার, সীমা লঙ্ঘন করেছিল, বীভৎসতম সামন্ততান্ত্রিক প্রথার শিকার ছিল কৃষকরা। তার কিছুকিছু স্মৃতি প্রবাদের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে- ‘রোদ দেখবি তো চলে যা সোনাবেড়ের কাছারি’, চাষিরা খাজনা দিতে পারেনি পেয়াদা জোর করে ধরে নিয়ে কাছারির উঠানের খুঁটিতে চাষিকে বেঁধে রেখেছে সারাদিনের প্রখর সূর্যকিরণ তার মাথার ওপরে। চারিদিকে কোন গাছপালা নেই, শুধু রোদ আর রোদ আর সেই সঙ্গে কাছারি বাড়ির সামনে প্রকাণ্ড এক পুকুর। এর জলে সূর্যের প্রতিফলন পড়ে এক বীভৎস পরিবেশ।

এই স্মৃতি প্রবাদটির মধ্যে ধরা পড়ে। ব্রিটিশরাজত্বের শুরুতে লবণশিল্পের এক উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র রায়মঙ্গলে সল্ট এজেন্সিতে মাহিন্দাররা যেতে চাইত না। গরিব চাষিদের জোর করে ধরে এখানে পাঠানো হত। রায়মঙ্গল নদীতীরের সুন্দরবন এলাকা জনবসতিশূন্য ভয়ঙ্কর স্থান হিসাবে সেদিন চিহ্নিত ছিল। সেই ভয়ের স্মৃতি-‘দুধে ভাতে খাও বাছা দুধে ভাতে খাও / পোদে যদি রস থাকেতো রায়মঙ্গলে যাও’। কিংবা টাকা টাকা টাকা, গায়ের রক্ত পানি করেও হাতের মুঠি ফাঁকা” – দরিদ্র চাষির জীবনে এর থেকে সত্য কথা আর কী হতে পারে?

কিছু প্রবাদের মধ্য দিয়ে মানুষের নির্বুদ্ধিতা অহমিকাকে ধিকৃত করা হচ্ছে। সেই সাথে কিছুটা পরিহাসপ্রিয়তা লক্ষ করা যাচ্ছে। সে যুগে কিছু কিছু জায়গায় ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সমাজের ধনী ব্যক্তিরা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে এগিয়ে এসেছে বিদ্যালয় পরিচালনার ভারও গ্রহণ করেছে কিন্তু এসব মানুষরা নিজেরা ইংরেজি শিক্ষার ব্যাপারে অজ্ঞ হলেও শিক্ষানুরাগী। পরীক্ষায় স্কুলের ছেলেরা ফেল করেছে। সম্পাদক শিক্ষকদের কাছে এসব বিষয়ে ফেলের কারণ জানছেন- সে সঙ্গে এগ্রিগেট এ ফেল করেছে কিছু ছেলে- এগ্রিগেট মাস্টার মশাই কে তার খোঁজ নিচ্ছেন সম্পাদক মশাই। তাদের নির্বুদ্ধিতা নিয়ে যতই পরিহাস করা হোক, সে যুগ পরিবেশে এসব সম্পাদকদের স্কুলের প্রতি ভালোবাসাকে তো আজকে অস্বীকার করা যাবে না।

আবার কোন ধনী জমিদার প্রজাদের খাজনা মকুবের প্রার্থনা প্রসঙ্গে জানলেন ধানগাছ বড় হয়েছিল কিন্তু ফসল ফলবার মুখে বাঁধ ভেঙে নদীর জলে শস্যহানি ঘটছে। সে জন্য অভাবী প্রজারা খাজনা দিতে পারছে না। জমিদার তখন প্রজাদের বলছেন- ধান গাছ বড় হয়েছিল কিন্তু ফল হয়নি। ধানগাছে তো তক্তা হবে- সেই তক্তা বিক্রয় করলে প্রজারা অতি সহজে জমির সামান্য খাজনা শোধ দিতে পারবে। জমি এবং কৃষির সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পর্কহীন, গ্রামজীবন সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ শহুরে মানুষরা জমির মালিক হয়েছে- তাদেরকে ধিকৃত করার জন্য প্রবচনটির উদ্ভব ‘ধান গাছে তক্তা।’