সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির কারণে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে
- অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বাড়িয়ে দিয়েছে
- সাধারণ মানুষ রাস্তায় চলাচল করতে এমনকি নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও অনিরাপদ বোধ করছে
- যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, রামপুরা, হাতিরঝিল, উলন পোড়াবাড়ি, কামরাঙ্গীরচর ও কদমতলীতে গুলির ঘটনা ঘটেছে
রাজধানীতে একের পর এক গুলির ঘটনা ঘটছে, যার পেছনে আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি এবং সামান্য ঝগড়াও কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সাধারণ পথচারীদের ধাক্কা লাগার মতো তুচ্ছ ঘটনাতেও বাড়িতে গিয়ে গুলি করার খবর পাওয়া যাচ্ছে। আহত ব্যক্তিরা চিকিৎসা নিচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন হাসপাতালে।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা
যাত্রাবাড়ীর গোলাগুলি (২৫ ফেব্রুয়ারি)
- রাত ১০টার দিকে যাত্রাবাড়ীর সুতি খালপাড় এলাকায় ২৫ বছরের যুবক মোহাম্মদ জাহিদ গুলিবিদ্ধ হন।
- আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।
- প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সম্ভবত ছিনতাইকারীরাই তাকে গুলি করেছে।

মিরপুরে গুলি (১৫ ফেব্রুয়ারি)
- মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে মো. জসিম উদ্দিন (৪৪) ও তার বোন শাহিনুর বেগম (৩২) গুলিবিদ্ধ হন।
- জসিম উদ্দিন জানান, তিনি কিছুদিন আগে সোহাগ নামে এক ছিনতাইকারীকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিতে সহায়তা করেছিলেন, যা পরবর্তীতে এই হামলার কারণ হতে পারে।
- সন্দেহভাজনদের মধ্যে শরিফ, তুহিন, শহিদুল, সুজন ও রিয়াজের নাম উঠে এসেছে।
রামপুরায় হামলা (১৮ ফেব্রুয়ারি)
- বনশ্রীতে রামপুরা থানা শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক জুয়েল সরদার (৪০) গুলিবিদ্ধ হন।
- তিনটি মোটরসাইকেলে মুখোশধারী হামলাকারীরা এসে এক ব্যক্তির খোঁজ করে, তাকে না পেয়ে জুয়েলকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
হাতিরঝিলে হামলা (৪ ফেব্রুয়ারি)

- মো. সুমন (২৫) নামে এক ইন্টারনেট কর্মচারী গুলিবিদ্ধ হন।
- মোটরসাইকেলযোগে মুখোশধারী একদল দুর্বৃত্ত এসে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
উলন পোড়াবাড়ি এলাকায় গুলির ঘটনা (১ ফেব্রুয়ারি)
- লানী (৫৫) ও শুভ (১৭) নামের দুই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন।
- এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ধাওয়া করে গুলি চালানোর সময় এরা আহত হন।
কামরাঙ্গীরচরে স্বর্ণ ছিনতাই (২৪ জানুয়ারি)
- সজল রাজবংশী (৩৭) নামে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে ৭০ ভরি স্বর্ণ লুট করে দুর্বৃত্তরা।
- তিনি কামরাঙ্গীরচরে ‘ইতি জুয়েলার্স’-এর মালিক ছিলেন।
কদমতলীতে নিরাপত্তাকর্মীদের ওপর হামলা (৭ ডিসেম্বর)

- একটি রড তৈরির কারখানার দুই নিরাপত্তাকর্মী মনির (৪৫) ও আল আমিন (৪০) গুলিবিদ্ধ হন।
- রাত ২টার দিকে টর্চলাইট জ্বালিয়ে তারা বাইরে গেলে এক দুর্বৃত্ত তাদের গুলি করে পালিয়ে যায়।
অবৈধ অস্ত্রের বিস্তার ও অপরাধীদের দৌরাত্ম্য
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী জানান, আগে সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যেত, কিন্তু এখন অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
- কিছু শীর্ষ সন্ত্রাসীর মুক্তির পরই এসব অপরাধ বাড়তে শুরু করেছে।
- চাঁদা না পেয়ে দোকান, বাসা, নির্মাণাধীন ভবনের সামনে এসে দলবেঁধে গুলি চালানো হচ্ছে।
- ইন্টারনেট, ডিশ লাইন ও ময়লা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতেও গোলাগুলি হচ্ছে।
- থানা লুটের কিছু অস্ত্র এখনও উদ্ধার হয়নি, যা দিয়ে বিভিন্ন অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে।
পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিক্রিয়া

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উদ্যোগ
পুলিশের পক্ষ থেকে যা বলা হয়েছে:
- নগরবাসীর নিরাপত্তায় পুলিশ সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে।
- চেকপোস্ট, পেট্রোল, র্যাব, সেনাবাহিনীসহ সব বাহিনী যৌথভাবে কাজ করছে।
- অপরাধীদের যতই শক্তিশালী হোক, পুলিশের হাত থেকে কেউ রক্ষা পাবে না।
ডিএমপি কমিশনার মিডিয়াকে বলেছেন:
- সেনাবাহিনী, র্যাব, এপিবিএন, এটিইউসহ যৌথভাবে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
- ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামের বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
- চিহ্নিত অপরাধীদের তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
- অপরাধ ঘটলেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়, যা আগে হতো না।
- এখন মানুষ প্রতিবাদ না করে ভিডিও করতে ব্যস্ত থাকে, যা সমাজের জন্য উদ্বেগজনক।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন:
- অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
- আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক ও সজাগ রয়েছে।
- গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে, টহল জোরদার করা হয়েছে।
- দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
উপসংহার
রাজধানীতে গুলির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি ও অপরাধীদের দৌরাত্ম্য পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলছে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একাধিক উদ্যোগ নিলেও এখনো অনেক অপরাধী ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ রাস্তায় চলাচল করতে এমনকি নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও অনিরাপদ বে্াধ করছে।
Sarakhon Report 



















