তবে তৎকাল পাসপোর্টের ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন পাসপোর্ট দেওয়ার পরে হয়। কিন্তু তৎকাল পাসপোর্টের ক্ষেত্রে উচ্চপদস্থ গেজেটেড অফিসারের সার্টিফিকেট দরকার হয়। সেই অফিসার ব্যক্তিগতভাবে না চিনলে সার্টিফিকেট পাওয়া কঠিন। কারণ, সেই গেজেটেড অফিসারের পরিচয়পত্রের ফটোকপিও তার সার্টিফিকেটের সঙ্গে জমা করতে হয়। ফলে কোনো গড়বড় হলে ওই অফিসারের ঘাড়েও দোষ পড়ে। এক্ষেত্রেও পাসপোর্ট দিয়ে দেয়ার পর পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়। আসলে তৎকাল পাসপোর্ট খুব জরুরি দরকার হলে দেয়া হয়। তাই এই ব্যবস্থা।
না হলে সাধারণভাবে পাসপোর্ট দেয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন জরুরি। এখন ভারতে পাসপোর্ট পাওয়ার পদ্ধতি খুবই আধুনিক ও ঝামেলাহীন করে দেয়া হয়েছে। অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন করতে হয়। তারপর নির্দিষ্ট দিনে পাসপোর্ট অফিসে সব নথিপত্র নিয়ে যেতে হয়। তারা আধার কার্ড-সহ সব নথিপত্র পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় পদ্ধতিগত কাজ শেষ করেন। তারপর আবেদনপত্র পাঠিয়ে দেয়া হয় পুলিশের কাছে।
আবেদনকারী যে এলাকায় থাকেন, সেই থানায় বা সেই এলাকার পুলিশ অফিসে বিষয়টি যায়। তারপর পুলিশ দুইটি কাজ করে। প্রথমত, রেকর্ড পরীক্ষা করে জানায় আবেদনকারীর বিরুদ্ধে কোনোরকম অভিয়োগ আছে কিনা, মামলা হয়েছে কিনা, পুলিশি খাতায় তার নাম আছে কিনা। তাছাড়া তারা আবেদনকারীর বাড়ি গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন। দুই জন প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলেন এবং রিপোর্ট দেন।
সাধারণত সাত থেকে ২১ দিনের মধ্যে পুলিশের রিপোর্ট দেয়ার কথা। তবে সচরাচর সাতদিনের মধ্যেই রিপোর্ট চলে যায়। তার কয়েকদিনের মধ্যে পাসপোর্ট দিয়ে দেয়া হয়।
কেন পুলিশ ভেরিফিকেশন জরুরি?
ভারতে পাসপোর্ট সেবার ওয়েবসাইটে এই প্রশ্নের জবাব দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, পাসপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং দামি একটা নথি। এটা যাতে ভুল মানুষের হাতে না পড়ে, তার জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন জরুরি। আবেদনকারী যে তথ্য দিয়েছে, তা ঠিক কিনা তা যাচাই করে নেয়া প্রয়োজন।
এই যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। বর্তমানে দুনিয়াজুড়ে জালিয়াতির যুগে নাগরিকত্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দলিল এবং বিদেশে বৈধভাবে যাওয়ার ক্ষেত্রে তার সবচেয়ে বড় পরিচয়পত্র এবং ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে সাবধানী হতেই হয়। ফলে পাসপোর্ট নিয়ে হালকা মনোভাব দেখানোর কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
ভারতের পাসপোর্ট আইনে বলা হয়েছে, কেউ যদি তথ্য গোপন করে পাসপোর্ট নিতে চায়, তাহলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে এবং এর জন্য কারাদণ্ড হতে পারে। বিশেষ করে কোনো মামলায় শাস্তি হয়েছে কি না, কোন ধরনের মামলা সেই সব বিষয় উল্লেখ করতে হয়।
এখন পুলিশ ভেরিফিকেশন না হলে, কী করে বোঝা যাবে আবেদনকারী সত্য গোপন করেছে কিনা? কারো হাতে বিদেশে যাওয়ার প্রধান নথি তুলে দেয়ার আগে তার সম্পর্কে ন্যূনতম খোঁজখবর নেয়ার দায়িত্বও তো সরকারের থাকে।
দুর্নীতির প্রসঙ্গ
পুলিশের বিরুদ্ধে একটা সাধারণভাবে দুর্নীতি নিয়ে একটা অভিয়োগ আছে। তাই এই পুলিশ ভেরিফিকেশনের ঝামেলা তুলে দেয়া উচিত বলে একটা যুক্তি শোনা য়ায়। প্রথমেই বলে নেয়া ভালো, আমার বা আমার পরিবারের কারো কাছে ভেরিফিকেশনের জন্য কোনো পুলিশ কর্মী কোনোদিন পয়সা চাননি।
তর্কের খাতিয়ে ধরে নেয়া গেল, কারো কাছ থেকে তারা চাইতে পারেন। তার প্রতিকারের পদ্ধতি আছে। তার জন্য তথ্য যাচাইয়ের পদ্ধতি তুলে দেয়ার কথা যারা বলেন, তারা নেহাতই কুযুক্তি দেন। কোনো সন্দেহ নেই, দুর্নীতি বন্ধ হওয়া দরকার। তার জন্য সরকারের উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া দরকার। প্রশ্ন হলো, আজকের সমাজে, সরকারি অফিসে কোথায় দুর্নীতি নেই? তাহলে তো সবই তুলে দিতে হয়। সেক্ষেত্রে মাৎস্যন্যায় ছাড়া তো আর কিছু হবে না।
ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে
এমনিতেই ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে দেখে নেয়া হয়, আবেদনকারীর কোনো অপরাধের রেকর্ড আছে কিনা। এই পরিস্থিতিতে কোনো দেশ যদি পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া পাসপোর্ট দেয়, তখন তাদের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি হবে। সবদিক আরো ভালো করে খতিয়ে দেখেই ভিসা দেয়া হবে। ভিসা নিয়ে এই কড়াকড়ি কি তখন সাধারণ মানুষের ভালো লাগবে?