সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- সৌদি আরবে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দূতাবাস প্রত্যয়ন নিয়মের কঠোর প্রয়োগের কারণে এই পতন ঘটেছে
- জানুয়ারিতে সৌদি আরবে গিয়েছিল ৭৬,৬১৮ জন কর্মী, সেখানে ফেব্রুয়ারিতে গেছে ৪৪,২৫৮ জন
- ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ২.৫৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে, যা ইতিহাসের চতুর্থ সর্বোচ্চ
- সৌদি আরবের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার কারনে শ্রম বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে
ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের শ্রম রপ্তানি আগের মাসের তুলনায় ৩৬% কমেছে, যা বার্ষিক ভিত্তিতে ১৬% পতন নির্দেশ করে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুসারে, এই পতনের প্রধান কারণ সৌদি আরবে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দূতাবাস প্রত্যয়ন নিয়মের কঠোর প্রয়োগ।
সৌদি আরবে কর্মী নিয়োগ কমেছে
সৌদি আরবে একক ভিসাধারীদের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসের বাধ্যতামূলক প্রত্যয়ন জানুয়ারির শেষ থেকে কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। জানুয়ারিতে যেখানে ৭৬,৬১৮ কর্মী সৌদি আরবে গিয়েছিল, সেখানে ফেব্রুয়ারিতে সংখ্যাটি নেমে এসেছে ৪৪,২৫৮-এ, যা ৪২% হ্রাস নির্দেশ করে।

সৌদি নির্ভরতা এবং অন্যান্য বাজার সংকট
বাংলাদেশের শ্রম বাজার সৌদি আরবের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল। অন্যান্য গন্তব্য যেমন ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া এবং বাহরাইনে শ্রম বাজার পুনরায় সক্রিয় না হলে ভবিষ্যতে আরও সংকট দেখা দিতে পারে। বিএমইটি জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে মোট ৬২,৪৩৬ কর্মী বিদেশে গিয়েছে, যেখানে জানুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ৯৭,৮৬২।
দূতাবাস প্রত্যয়ন নিয়ম নিয়ে বিতর্ক
বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশনের (বাইরা) সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান জানান, “রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের বাধ্যতামূলক প্রত্যয়ন প্রক্রিয়া ধীরগতির হওয়ায় সৌদি আরবে কর্মী পাঠানো কমে গেছে।”
৫ মার্চ, বাইরা সদস্যরা বিএমইটি কার্যালয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে দূতাবাস প্রত্যয়ন বাতিলসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। পরবর্তীতে, বিএমইটি মহাপরিচালকের সাথে বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হয়, ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইস্যু হওয়া একক ভিসার ক্ষেত্রে দূতাবাস প্রত্যয়ন ছাড়া বিএমইটি অনুমোদন কার্যকর থাকবে।

ভবিষ্যৎ ব্যবস্থা ও নিয়ম সহজীকরণ
- বিএমইটি অনুমোদনের জন্য অনলাইন ও অফলাইন উভয় মাধ্যমে আবেদন করা যাবে।
- প্রক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য দিতে একটি হেল্প ডেস্ক চালু হবে।
ভিসা প্রক্রিয়া ও নিয়মাবলি
বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য সৌদি আরবের ভিসা দুটি ভাগে বিভক্ত:
একক ভিসা – ব্যক্তিগতভাবে গৃহীত কর্মীদের জন্য।
গ্রুপ ভিসা – একই কোম্পানির ২৫ বা তার বেশি কর্মীর জন্য, যেখানে দূতাবাস প্রত্যয়ন বাধ্যতামূলক।
বিএমইটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, অনেক কর্মী সৌদি আরবে চাকরি বা বৈধ ওয়ার্ক পারমিট (ইকামা) ছাড়াই পৌঁছেছে, যা প্রত্যয়ন প্রক্রিয়ার গুরুত্ব বাড়িয়েছে।
অন্যান্য গন্তব্যস্থল

সৌদি আরবের পর, ফেব্রুয়ারিতে অন্যান্য প্রধান গন্তব্য ছিল:
- কাতার – ৭,১৫০ কর্মী
- সিঙ্গাপুর – ৩,৭৩৫ কর্মী
- কুয়েত – ২,০৮৪ কর্মী
- জর্ডান – ৮৭৩ কর্মী
কিছু ইউরোপীয় দেশও বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ করেছে, তবে সংখ্যাটি তুলনামূলকভাবে কম:
- পর্তুগাল – ৩৪০ কর্মী
- সাইপ্রাস – ১১৬ কর্মী
- ক্রোয়েশিয়া – ৯৮ কর্মী
- সার্বিয়া – ৮৪ কর্মী
- হাঙ্গেরি – ৬৪ কর্মী
- রোমানিয়া – ৪৬ কর্মী

রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি
ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ $২.৫৩ বিলিয়ন রেমিট্যান্স পেয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ মাসিক প্রবাহ। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫% বেশি।
রমজান মাসকে কেন্দ্র করে প্রবাসীরা পরিবারের জন্য বেশি অর্থ পাঠানোয় এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষ কর্মী সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে রেমিট্যান্স আরও বাড়তে পারে। বর্তমানে, প্রবাসী কর্মীর সংখ্যা ১০ মিলিয়নের বেশি হলেও রেমিট্যান্স প্রবাহ তুলনামূলক কম।
Sarakhon Report 



















